সুরা হজ্জের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।
এ সম্মান প্রদর্শন হৃদয় অভ্যন্তরের তাকওয়ার ফল এবং মানুষের মনে যে কিছু না কিছু আল্লাহর ভয় আছে তা এরই চিহ্ন। তাইতো কেউ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অমর্যাদা করলে এটা একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, তার মনে আল্লাহর ভয় নেই।
এতে বোঝা গেল যে, মানুষের অন্তরের সঙ্গেই তাকওয়ার সম্পর্ক। অন্তরে আল্লাহভীতি থাকলে তার প্রতিক্রিয়া সব কাজকর্মে পরিলক্ষিত হয়। এজন্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তাকওয়া এখানে, আর তিনি বুকের দিকে ইঙ্গিত করলেন” (মুসলিম: ২৫৬৪)
আপাতদৃষ্টিতে এটি একটা উপদেশ। আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত সব মর্যাদাশালী জিনিসের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য একথা বলা হয়েছে।
আজানও ইসলামের বিশেষ চিহ্ন ও নিদর্শন।তাই আজানের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে।
তিলাওয়াত, জিকির ও তাসবীহ সবকিছুই অতীব মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। আজান আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব ও তাসবীহ সম্বলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি যা শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিক তথা ‘শিআর’। এগুলোর ব্যবহার একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে রাজি-খুশি করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের নিয়ম অনুযায়ী হতে হবে।
শরীয়তে এগুলোর ব্যবহার-ক্ষেত্র সুনির্ধারিত। মোবাইলের রিংটোন হিসাবে এগুলোর প্রয়োগ অপব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, মোবাইলে রিং এসেছে, কেউ কথা বলতে চায় এই খবর দেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালার পবিত্র কালাম ওহী, জিকির ও তাসবীহের ব্যবহার যে এগুলোর অপাত্রে ব্যবহার তা বলাই বাহুল্য।
ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য বিক্রেতার জোরে জোরে সুবহানাল্লাহ বলা, তদ্রূপ প্রহরী জাগ্রত আছে একথা বুঝানোর জন্য জোরে জোরে জিকির করাকেই ফিকহবিদগণ অপব্যবহার হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। তাহলে মোবাইলে কল এসেছে এ খবর দেওয়ার জন্য এগুলোর ব্যবহার যে কেমন হবে তা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না।
উপরন্তু রিংটোন হিসাবে এগুলোর ব্যবহারে আরো অন্যান্য শরয়ী সমস্যা রয়েছে। যেমন :
(ক) রিং আসলে কুরআনের তিলাওয়াত বেজে উঠছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ব্যস্ততার দরুণ তিলাওয়াতের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করারই সুযোগ হয় না। তদ্রূপ কে কল করেছে তা দেখা ও কল রিসিভ করার ব্যস্ততা তো লেগেই থাকে এ কারণেও তিলাওয়াতের আদব রক্ষা করে শ্রবণ করা হয় না।
(খ) কল আসলে যেহেতু রিসিভের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং এটিই মূল উদ্দেশ্য থাকে তাই আয়াতের যেকোনো স্থানেই তিলাওয়াত চলতে থাক সে দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে রিসিভ করে ফেলে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারিত অংশের বিবেচনায় আয়াতের অর্থ বিকৃত হয়ে যায়।
(গ) মোবাইল নিয়ে টয়লেট কিংবা বাথরুমে প্রবেশের পর রিং আসলে অপবিত্র স্থানে আল্লাহতায়ালার পবিত্র কালাম, জিকির ও আজান বেজে উঠবে। এতে এগুলোর পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ হয়। মোটকথা অনেক কারণেই তিলাওয়াত, আজান ও জিকিরকে রিংটোন হিসাবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরী।
দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়াতেও রয়েছে যে মোবাইলে রিংটোন আজান দিলে আজানের অবমাননা হয়।তাই এ থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
সুতরাং সতর্কতামূলক আজানকে মোবাইলের অ্যালার্ম হিসেবে ব্যবহার না করাই উচিত।তবে কেউ যদি ব্যবহার করতেই চায়, তাহলে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
যেমন: আজানের কোনো একটি বাক্যের মাঝে অ্যালার্ম বন্ধ না করা।বরং ওই বাক্য শেষ হলেই অ্যালার্ম বন্ধ করে দিবে।বা একেবারে আজানের বাক্য সবগুলো শেষ হলে অ্যালার্ম বন্ধ করে দিবে।
কেননা আজানের কোনো এক বাক্যের মধ্যেই অ্যালার্ম বন্ধ করে দিলে আজানের অর্থ বিকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সূত্র: (আততিবয়ান ফী আদাবি হামালাতিল কুরআন-ইমাম নববী ৪৬, হক্কুততিলাওয়া- হুসাইনী শাইখ উসমান ৪০১, ফাতাওয়া আলমগীরী ৫/৩১৫, আলমুগনী ৪/৪৮২, রদ্দুল মুহতার ১/৫১৮, ১/৫৪৬, আলাতে জাদীদা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ., আলকাফী ১/৩৭৬)