বগুড়ার শেরপুরে পঞ্চম শ্রেণির স্কুলছাত্র তামিম হোসেন (১৩) হত্যারহস্য উন্মোচিত হয়েছে। নিপীড়নের সময় চিৎকার করায় পুকুরের পাহারাদার এমদাদুল হক (২২) তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে লাশ বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে দেয়।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাকে গ্রেফতার ও হত্যায় ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়েছে। সে পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
শুক্রবার বিকালে একমাত্র ওই আসামিকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য আদালতে হাজির করা হয়েছে।
শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা এ তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ, এজাহার সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, নিহত তামিম হোসেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বি ইউনিয়নের দক্ষিণ আমইন গ্রামের মুকুল আকন্দের ছেলে। সে স্থানীয় কেজি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির অনিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। সে ১০ জুলাই সকাল ৭টার দিকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয়। এ ব্যাপারে তার মা সুফিয়া খাতুন শেরপুর থানায় নিখোঁজের জিডি করেন।
পরদিন সকাল ৮টার দিকে গ্রামের আবদুল মান্নানের পুকুরে একটি পাটের বস্তা ভাসতে দেখা যায়। পাহারাদার একই গ্রামের খাদেমুল ইসলামের ছেলে এমদাদুল হকের ফোন পেয়ে মান্নান পুকুর পাড়ে আসেন। তিনি বস্তাটি পাড়ে এনে মুখ খুলে ভিতরে লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে শেরপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ব্যাপারে নিহতের বাবা থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এরপর শেরপুর থানা ও ডিবি পুলিশ গোয়েন্দা তথ্য এবং প্রযুক্তির সহায়তায় আসামি শনাক্ত করে। ১১ জুলাই রাত সাড়ে ৪টার দিকে আবদুল মান্নানের পুকুরপাড় থেকে পাহারাদার এমদাদুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমদাদুল হক স্কুলছাত্র তামিম হত্যার কথা স্বীকার করে। এছাড়া হত্যার কারণ ও অন্যান্য বিবরণ দেয়। তার স্বীকারোক্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত একটি চটের বস্তা, গরু বাঁধার রশি, নিহতের একটি স্যান্ডেল, একটি বেডসিট ও প্লাস্টিকের ড্রামের নৌকা জব্দ করা হয়।
পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে এমদাদুল হক বলেন, তিনি গ্রামের আবদুল মান্নানের পুকুর ও গরুর খামার দেখাশোনা করেন। গত ১০ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তামিম পুকুরপাড়ের ঘর থেকে মাছের কিছু খাবার চুরি করে। হাতেনাতে ধরার পর ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে এমদাদুল তাকে (তামিম) বলাৎকারের প্রস্তাব দেয়। ভয়ে তামিম রাজি হলে তাকে পুকুরপাড়ের ঘরে নিয়ে বলাৎকার করতে থাকে। এতে তামিম রক্তাক্ত জখম হলে কান্নাকাটি ও চিৎকার শুরু করে। তখন এমদাদুল দুই হাত দিয়ে তামিমের গলা চেপে ধরে। এতেও চিৎকার করলে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। পরে ঘরে থাকা পাটের তৈরি ভুষির বস্তার মধ্যে তামিমের লাশ তোলে। বস্তার মুখ বেঁধে পুকুরে থাকা প্লাস্টিকের ড্রামের তৈরি নৌকায় তুলে পুকুরের মাঝে নিয়ে যায়। এরপর লাশভর্তি বস্তা পুকুরে ফেলে দিয়ে সে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে থাকে।
শেরপুর থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা জানান, একমাত্র আসামি এমদাদুল হক ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য তাকে শুক্রবার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছে। এ খবর পাঠানো পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়নি।