ঢাকা ০১:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আরডিএ ভবনে দুদকের অভিযান, প্ল্যান পাশের রেজিস্টারসহ নথি জব্দ

ঘুস ছাড়া ভবনের প্ল্যান যেমন পাশ হয় না, তেমনি ঘুসের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ভবনের উচ্চতা। যে যত বেশি ঘুস দিতে পারে ততো বেশি তলা ভবন নির্মাণের প্ল্যান দেওয়া হয়। সেখানে ভবনের সামনে পেছনের সড়কের প্রশস্ততার বিষয়টি মোটেও নির্ভর করে না। অপ্রশস্ত সড়কের পার্শ্ববর্তী জায়গায় বহুতল ভবনের প্ল্যান দেওয়া হয় চাহিদামতো ঘুস দিতে পারলে।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড শাখা বা প্ল্যান পাশ শাখায় ঘুস ছাড়া কোন প্ল্যান পাশ হয় না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে রোববার আরডিএ ভবনে দিনভর অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম। জব্দ করা হয়েছে প্ল্যান পাশের রেজিস্টার বহি ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

রাজশাহী সমন্বিত জেলা দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইনের নেতৃত্বে দুদকের চার সদস্যের দলটি রোববার সকাল থেকে নগরীর নওদাপাড়ায় আরডিএ ভবনে ছদ্মবেশে অবস্থান নেন। তারা আগে সেবাপ্রার্থী বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেন। ওই দিন দুপুরের পর দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিচতলায় অবস্থিত অথরাইজড শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন। তারা আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে প্ল্যান পাশের রেজিস্টার বহিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নথিপত্র জব্দ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, শুধুমাত্র ঘুসের বিনিময়ে প্ল্যান দেওয়ার ফলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইমারত বিধিমালা ভঙ্গ করে গড়ে উঠা শত শত ভবনের একটির বিরুদ্ধেও কোনো আইনি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ইমারত বিধিমালা ভঙ্গ করে রাজশাহীর লক্ষীপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভবন। নগরীর কাজিহাটা এলাকায় গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেল, ডায়াবেটিস হাসপাতাল ভবন, কুমারপাড়ার তিনটি বহুতল ভবন, হাইটেক হাসপাতাল ভবনসহ কয়েকশ বহুতল রাতারাতি গড়ে উঠেছে নগরীতে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও এসব ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি আরডিএর অথরাইজড শাখা।

অভিযোগ মতে, রাজশাহী নগরীতে রাতারাতি পুকুর ভরাটের জায়গাতেও বহুতল ভবনের প্ল্যান দিয়েছেন। আরডিএর প্ল্যান পেয়ে পুকুর ভরাটের জায়গাতেও গড়ে উঠেছে একাধিক বহুতল ভবন। এসব প্ল্যান পাসের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুসের লেনদেন হয়ে থাকে বলে দুদকের কাছে অভিযোগ গেছে।

এদিকে দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুদকের অভিযানে প্ল্যান পাশসহ সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুস গ্রহণের অভিযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। দীর্ঘদিন এভাবেই আরডিএর কর্মকর্তাদের ঘুস দিয়ে সেবা নিচ্ছেন শত শত মানুষ। এ কারণে আরডিএর অথরাইজড, প্রকৌশল ও এস্টেট শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব তলবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এসব কর্মকর্তাকে শিগগিরই নোটিশ পাঠানো হবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আরডিএ ভবনে দুদকের অভিযান, প্ল্যান পাশের রেজিস্টারসহ নথি জব্দ

আপডেট সময় ১২:৫৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪

ঘুস ছাড়া ভবনের প্ল্যান যেমন পাশ হয় না, তেমনি ঘুসের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ভবনের উচ্চতা। যে যত বেশি ঘুস দিতে পারে ততো বেশি তলা ভবন নির্মাণের প্ল্যান দেওয়া হয়। সেখানে ভবনের সামনে পেছনের সড়কের প্রশস্ততার বিষয়টি মোটেও নির্ভর করে না। অপ্রশস্ত সড়কের পার্শ্ববর্তী জায়গায় বহুতল ভবনের প্ল্যান দেওয়া হয় চাহিদামতো ঘুস দিতে পারলে।

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড শাখা বা প্ল্যান পাশ শাখায় ঘুস ছাড়া কোন প্ল্যান পাশ হয় না। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে রোববার আরডিএ ভবনে দিনভর অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের এনফোর্সমেন্ট টিম। জব্দ করা হয়েছে প্ল্যান পাশের রেজিস্টার বহি ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।

রাজশাহী সমন্বিত জেলা দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইনের নেতৃত্বে দুদকের চার সদস্যের দলটি রোববার সকাল থেকে নগরীর নওদাপাড়ায় আরডিএ ভবনে ছদ্মবেশে অবস্থান নেন। তারা আগে সেবাপ্রার্থী বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেন। ওই দিন দুপুরের পর দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নিচতলায় অবস্থিত অথরাইজড শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন। তারা আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে প্ল্যান পাশের রেজিস্টার বহিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নথিপত্র জব্দ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, শুধুমাত্র ঘুসের বিনিময়ে প্ল্যান দেওয়ার ফলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ইমারত বিধিমালা ভঙ্গ করে গড়ে উঠা শত শত ভবনের একটির বিরুদ্ধেও কোনো আইনি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ইমারত বিধিমালা ভঙ্গ করে রাজশাহীর লক্ষীপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভবন। নগরীর কাজিহাটা এলাকায় গ্র্যান্ড রিভারভিউ হোটেল, ডায়াবেটিস হাসপাতাল ভবন, কুমারপাড়ার তিনটি বহুতল ভবন, হাইটেক হাসপাতাল ভবনসহ কয়েকশ বহুতল রাতারাতি গড়ে উঠেছে নগরীতে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও এসব ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি আরডিএর অথরাইজড শাখা।

অভিযোগ মতে, রাজশাহী নগরীতে রাতারাতি পুকুর ভরাটের জায়গাতেও বহুতল ভবনের প্ল্যান দিয়েছেন। আরডিএর প্ল্যান পেয়ে পুকুর ভরাটের জায়গাতেও গড়ে উঠেছে একাধিক বহুতল ভবন। এসব প্ল্যান পাসের ক্ষেত্রে মোটা অংকের ঘুসের লেনদেন হয়ে থাকে বলে দুদকের কাছে অভিযোগ গেছে।

এদিকে দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুদকের অভিযানে প্ল্যান পাশসহ সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে ঘুস গ্রহণের অভিযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। দীর্ঘদিন এভাবেই আরডিএর কর্মকর্তাদের ঘুস দিয়ে সেবা নিচ্ছেন শত শত মানুষ। এ কারণে আরডিএর অথরাইজড, প্রকৌশল ও এস্টেট শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পদের হিসাব তলবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এসব কর্মকর্তাকে শিগগিরই নোটিশ পাঠানো হবে।