ঢাকা ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

আওয়ামী লীগ নেতার মাসে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজি

মানিকগঞ্জে পরিবহণ খাত থেকে (জিপির নামে) প্রতি মাসে অর্ধকোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক পরিবহণ থেকে তোলা হচ্ছে এ চাঁদা। আর এসব চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। নিজের ভাই-ভাতিজাদের দিয়ে বিশাল একটি চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বিভিন্ন পরিবহণ থেকে প্রতিদিন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা চাঁদা তুলছেন আওয়ামী লীগের এ প্রভাবশালী নেতা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সেলফি, নীলাচল, যাত্রীসেবা, ভিলেজ লাইন, পদ্মা এবং স্বপ্ন পরিবহণ থেকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিটি শুভযাত্রা মিনিবাস থেকে ১২০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। এবং প্রতিদিনের চাঁদার পরও প্রত্যেক স্বপ্ন পরিবহণ থেকে মাসে এক হাজার টাকা মাসোহারা নেন। প্রতিদিন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে পাঁচ শতাধিক পরিবহণ থেকে ৩০০ টাকা করে (জিপির নামে) চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। ৪০ টাকা জিপি নেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পরিবহণ মালিকদের জিম্মি করে ৩০০ টাকা করে চাঁদা নিলেও নজরদারি নেই স্থানীয় প্রশাসনের। জিপির ৩০০ টাকা ছাড়াও পরিবহণ মালিকদের অতিরিক্ত আরও ৫০ টাকা পৌর টার্মিনাল পার্কিং চার্জ দিতে হচ্ছে।

শুভযাত্রা মিনিবাসের একাধিক চালক বলেন, বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির চাকা ঘোরার আগেই নেতাদের ১২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। গুলিস্তানে দিতে হয় এক হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ২৫০০ টাকা রোডে চাঁদা দিতে হচ্ছে। চালক খালেক বলেন, সকালে বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি সিরিয়াল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এছাড়া লাইনম্যানদের দিতে হয় ১০০ টাকা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির নামে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পৌর টার্মিনাল, রাজ হোটেলের সামনে, পিটিআই গেটসহ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিভিন্ন পরিবহণ থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। শুভযাত্রা মিনিবাস থেকে চাঁদা তুলছেন শিপন, আনোয়ার, মোতালেব ও টিটু। সেলফি পরিবহণ থেকে চাঁদা তুলছেন হারুন, রুবেল, করিম। এছাড়া নিলাচল পরিবহণ থেকে চাঁদা তোলেন আজাদ। শুভযাত্রা মিনিবাসের মালিক পরান বলেন, ‘আমি তো নিজেই জিম্মি। দিনে ২৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। এ কারণে আমি আমার গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছি।

শুভযাত্রা মিনিবাস পরিবহণ মালিক সমিতির সহসভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমি চাঁদার ব্যাপারে কিছুই জানি না। সবকিছু জাহিদ ভাই জানেন।’ এ প্রসঙ্গে পৌর টার্মিনালের ইজারাদার এমএ ইরাদ কৌরাইশির মোবাইল ফোন যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, মালিক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী জিপি নেওয়া হচ্ছে। নিয়মের বাইরে কোনো কিছু করার রাইট নেই।

মালিক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী কত টাকা জিপি নেওয়ার কথা আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাগজপত্র দেখে বলতে পারব। মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. হাবিল হোসেন বলেন, যদি কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

আওয়ামী লীগ নেতার মাসে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজি

আপডেট সময় ১০:০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪

মানিকগঞ্জে পরিবহণ খাত থেকে (জিপির নামে) প্রতি মাসে অর্ধকোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক পরিবহণ থেকে তোলা হচ্ছে এ চাঁদা। আর এসব চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। নিজের ভাই-ভাতিজাদের দিয়ে বিশাল একটি চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বিভিন্ন পরিবহণ থেকে প্রতিদিন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা চাঁদা তুলছেন আওয়ামী লীগের এ প্রভাবশালী নেতা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সেলফি, নীলাচল, যাত্রীসেবা, ভিলেজ লাইন, পদ্মা এবং স্বপ্ন পরিবহণ থেকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। এছাড়া প্রতিটি শুভযাত্রা মিনিবাস থেকে ১২০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। এবং প্রতিদিনের চাঁদার পরও প্রত্যেক স্বপ্ন পরিবহণ থেকে মাসে এক হাজার টাকা মাসোহারা নেন। প্রতিদিন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে পাঁচ শতাধিক পরিবহণ থেকে ৩০০ টাকা করে (জিপির নামে) চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। ৪০ টাকা জিপি নেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পরিবহণ মালিকদের জিম্মি করে ৩০০ টাকা করে চাঁদা নিলেও নজরদারি নেই স্থানীয় প্রশাসনের। জিপির ৩০০ টাকা ছাড়াও পরিবহণ মালিকদের অতিরিক্ত আরও ৫০ টাকা পৌর টার্মিনাল পার্কিং চার্জ দিতে হচ্ছে।

শুভযাত্রা মিনিবাসের একাধিক চালক বলেন, বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির চাকা ঘোরার আগেই নেতাদের ১২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। গুলিস্তানে দিতে হয় এক হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ২৫০০ টাকা রোডে চাঁদা দিতে হচ্ছে। চালক খালেক বলেন, সকালে বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি সিরিয়াল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১২০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এছাড়া লাইনম্যানদের দিতে হয় ১০০ টাকা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির নামে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পৌর টার্মিনাল, রাজ হোটেলের সামনে, পিটিআই গেটসহ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিভিন্ন পরিবহণ থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। শুভযাত্রা মিনিবাস থেকে চাঁদা তুলছেন শিপন, আনোয়ার, মোতালেব ও টিটু। সেলফি পরিবহণ থেকে চাঁদা তুলছেন হারুন, রুবেল, করিম। এছাড়া নিলাচল পরিবহণ থেকে চাঁদা তোলেন আজাদ। শুভযাত্রা মিনিবাসের মালিক পরান বলেন, ‘আমি তো নিজেই জিম্মি। দিনে ২৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। এ কারণে আমি আমার গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছি।

শুভযাত্রা মিনিবাস পরিবহণ মালিক সমিতির সহসভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমি চাঁদার ব্যাপারে কিছুই জানি না। সবকিছু জাহিদ ভাই জানেন।’ এ প্রসঙ্গে পৌর টার্মিনালের ইজারাদার এমএ ইরাদ কৌরাইশির মোবাইল ফোন যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, মালিক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী জিপি নেওয়া হচ্ছে। নিয়মের বাইরে কোনো কিছু করার রাইট নেই।

মালিক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী কত টাকা জিপি নেওয়ার কথা আছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাগজপত্র দেখে বলতে পারব। মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. হাবিল হোসেন বলেন, যদি কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।