বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলন শুরু হচ্ছে চলতি সপ্তাহেই। বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে থাকা নানা ইস্যু নিয়ে এই সম্মেলনে পরাশক্তি দেশগুলোর মধ্যে উত্তাপ ছড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর এই সম্মেলনের ঠিক আগে মুখোমুখি হচ্ছেন বৈশ্বিক পরাশক্তি দুই দেশের নেতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সোমবার (১৪ নভেম্বর) উভয় নেতার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ নিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বৈঠকে অংশ নিতে সোমবার ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে পৌঁছাবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই বৈঠকে বৈশ্বিক পরাশক্তি দুইটি দেশের শীর্ষ এই দুই নেতা তাইওয়ান, ইউক্রেন এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই একই বিষয়গুলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ছাড়াই মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে যাওয়া জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনেও আলোচিত হবে।
টানা প্রায় নয় মাস ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘ এই সময় ধরে উভয় দেশের হামলা-পাল্টা হামলা এবং মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর একের পর এক নিষেধাজ্ঞাও রাশিয়াকে তার অবস্থান থেকে সরিয়ে আনতে পারেনি।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই সম্মেলনে পুতিনের সশরীরে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা আগেই জানানো হয়েছিল।
তবে পুতিনের উপস্থিতি বিশ্বনেতাদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কায় পুতিন জি-২০ সম্মেলনে অংশ নেওয়া এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য প্রেসিডেন্ট পুতিন অংশ না নিলেও আসন্ন এই সম্মেলনে রুশ প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। মূলত পুতিনের পরিবর্তে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এই শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন কম্বোডিয়ায় এশীয় নেতাদের বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে মার্কিন যোগাযোগের চ্যানেল উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়া সামনের দিনগুলোতে মুখোমুখি আলোচনাও প্রায় নিশ্চিত।
কম্বোডিয়ায় পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের ভাষণে তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বাইডেন বলেন, চীনের সঙ্গে ‘প্রবলভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে’ যুক্তরাষ্ট্র এবং
‘প্রতিযোগিতা যেন সংঘাতে রূপ না নেয় তা নিশ্চিত করা হবে’।
চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে রোববার রাতে বাইডেন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে পৌঁছেছেন।
রয়টার্স বলছে, হংকং ও তাইওয়ান থেকে দক্ষিণ চীন সাগর, বাণিজ্য এবং চীনা প্রযুক্তির ওপর মার্কিন বিধিনিষেধের অনেকগুলো বিষয় নিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এমনকি এসব ইস্যুতে এই দুই বৈশ্বিক পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির গত আগস্টে তাইওয়ানে সফরের পর এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। মূলত স্ব-শাসিত এই গণতান্ত্রিক দ্বীপকে বেইজিং নিজের এলাকা বলে দাবি করে থাকে। আর এই কারণে পেলোসির ওই সফর চীনকে ক্ষুব্ধ করে এবং এতে করে পরবর্তীতে তাইওয়ানের কাছে ব্যাপক সামরিক মহড়া শুরু করে চীনা সেনাবাহিনী।
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, গত দুই মাস ধরে বেইজিং এবং ওয়াশিংটন উভয় পক্ষই নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক মেরামতের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বাইডেন ও জিনপিংয়ের সোমবার অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের মতো এই ধরনের সভাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে আয়োজন করা হয় না। এগুলো খুব টেকসই একটি প্রক্রিয়ার অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পর্দার আড়ালে গুরুতর, টেকসই ধরনের কয়েক ডজন এবং বহু সময় ধরে শান্ত কূটনীতিতে নিযুক্ত রয়েছি। আমি মনে করি, উভয় পক্ষই এই প্রক্রিয়ায় যে গুরুত্ব নিয়ে এসেছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’
২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার শি জিনপিংয়ের সঙ্গে পাঁচবার ফোন বা ভিডিও কলে কথা বলেছেন জো বাইডেন। আর শেষবার এই দুই নেতার সামনা-সামনি দেখা হয়েছিল ওবামার শাসনামলে। সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন।