ঢাকা ০৮:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি বাকেরগঞ্জের বিরঙ্গল দারুসুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে গোপালগঞ্জের সোহাগ একসঙ্গে দুই সরকারি চাকরি করেন বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

আর্থিক সংকট: ২ বছরের সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা আফগান নারীর

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান। এক বছরেরও বেশি সময় আগে সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠী দেশটির ক্ষমতা দখলের পর থেকে সেই সংকট দিনে দিনে কেবল আরও বেড়েছে।

এমনকি অর্থনৈতিক সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বাধ্য হয়ে নিজের সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা করেছেন এক আফগান নারী। শনিবার (১২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই এবং সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

পরিবারের মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টার শিকার হওয়া ওই শিশুর বয়স ২ বছর। তবে বলখ প্রদেশের কিছু স্থানীয় লোক ওই পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য তাদেরকে খাদ্য ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করার পর দুই বছর বয়সী শিশুটি বিক্রি হওয়া থেকে রক্ষা পায়।

বলখ প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর নুরুল হাদি আবু ইদ্রিস বলেন, ‘আমরা রেড ক্রসের সঙ্গে কয়েকদিন বৈঠক করেছি; কীভাবে তারা আমাদের সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে আমরা এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের সচেতন করব।’

নাসরিন নামের ওই আফগান নারী বলেন, ‘আমি সত্যিই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি; আমার খাওয়ার বা জ্বালানি ব্যবহারের জন্য কিছুই নেই; আমি শীতের জন্য কোনও প্রস্তুতি নিইনি। আমাকে আমার মেয়েকে বিক্রি করতে হবে এবং শীতের জন্য কিছু জিনিস আনতে হবে।’

বলখ প্রদেশের অবস্থা এবং সেখানে বসবাসকারী বাসিন্দাদের অত্যন্ত খারাপ অবস্থা বর্ণনা করার সময় নিজের সম্পর্কে কর্মকর্তাদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি। নাসরিন বলেন, স্থানীয় সরকার বা মানবিক সংস্থাগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে কোনও সহায়তা দেয়নি।

নাসরিন আরও বলেন, ‘আমি নিজে দুই-তিনবার কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলাম এবং আমার নাম সাহায্যের তালিকায় রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তারা বলেছিলেন, আমরা আপনার নাম লিখেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি কোনও সহায়তা পাইনি।’

তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দেশটির জনগণ কোনো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে এবং এতে করে দেশটিতে গুরুতর মানবিক সংকটের অভিযোগও করেছে তারা।

এছাড়া বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আফগানিস্তানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অত্যধিক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ৩৮ শতাংশ আফগান নাগরিকের চলমান সংকটের প্রভাব এড়াতে সহায়তা প্রদান করেছে।

উল্লেখ্য, ২০ বছর পর গত বছরের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়।

অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়।

ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এছাড়া তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই বিদেশি সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল আফগানিস্তানের অর্থনীতি।

গত বছরের আগস্ট থেকে সেই সহায়তা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত এক বছরেরও বেশি সময়ে সেই আর্থিক ও মানবিক সংকট কেবলই বেড়েছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি

আর্থিক সংকট: ২ বছরের সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা আফগান নারীর

আপডেট সময় ০৪:২৫:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২২

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান। এক বছরেরও বেশি সময় আগে সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠী দেশটির ক্ষমতা দখলের পর থেকে সেই সংকট দিনে দিনে কেবল আরও বেড়েছে।

এমনকি অর্থনৈতিক সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বাধ্য হয়ে নিজের সন্তানকে বিক্রির চেষ্টা করেছেন এক আফগান নারী। শনিবার (১২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই এবং সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।

পরিবারের মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টার শিকার হওয়া ওই শিশুর বয়স ২ বছর। তবে বলখ প্রদেশের কিছু স্থানীয় লোক ওই পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির জন্য তাদেরকে খাদ্য ও অন্যান্য সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করার পর দুই বছর বয়সী শিশুটি বিক্রি হওয়া থেকে রক্ষা পায়।

বলখ প্রদেশের ডেপুটি গভর্নর নুরুল হাদি আবু ইদ্রিস বলেন, ‘আমরা রেড ক্রসের সঙ্গে কয়েকদিন বৈঠক করেছি; কীভাবে তারা আমাদের সহায়তা করতে পারে সে বিষয়ে আমরা এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের সচেতন করব।’

নাসরিন নামের ওই আফগান নারী বলেন, ‘আমি সত্যিই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি; আমার খাওয়ার বা জ্বালানি ব্যবহারের জন্য কিছুই নেই; আমি শীতের জন্য কোনও প্রস্তুতি নিইনি। আমাকে আমার মেয়েকে বিক্রি করতে হবে এবং শীতের জন্য কিছু জিনিস আনতে হবে।’

বলখ প্রদেশের অবস্থা এবং সেখানে বসবাসকারী বাসিন্দাদের অত্যন্ত খারাপ অবস্থা বর্ণনা করার সময় নিজের সম্পর্কে কর্মকর্তাদের কাছে এসব কথা বলেন তিনি। নাসরিন বলেন, স্থানীয় সরকার বা মানবিক সংস্থাগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে কোনও সহায়তা দেয়নি।

নাসরিন আরও বলেন, ‘আমি নিজে দুই-তিনবার কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছিলাম এবং আমার নাম সাহায্যের তালিকায় রাখার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। তারা বলেছিলেন, আমরা আপনার নাম লিখেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি কোনও সহায়তা পাইনি।’

তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দেশটির জনগণ কোনো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে এবং এতে করে দেশটিতে গুরুতর মানবিক সংকটের অভিযোগও করেছে তারা।

এছাড়া বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আফগানিস্তানে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অত্যধিক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ৩৮ শতাংশ আফগান নাগরিকের চলমান সংকটের প্রভাব এড়াতে সহায়তা প্রদান করেছে।

উল্লেখ্য, ২০ বছর পর গত বছরের ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়।

অবশ্য সরকার গঠন করলেও বিশ্বের কোনো দেশই এখনও পর্যন্ত তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর জেরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাও আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তাসহ অর্থ সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়।

ফলে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট প্রতিদিনই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এছাড়া তালেবানের ক্ষমতা গ্রহণের আগে থেকেই বিদেশি সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল আফগানিস্তানের অর্থনীতি।

গত বছরের আগস্ট থেকে সেই সহায়তা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত এক বছরেরও বেশি সময়ে সেই আর্থিক ও মানবিক সংকট কেবলই বেড়েছে।