অ্যামেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে মিশিগান স্টেট গভর্নর হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির গ্রেচেন হুইটমার আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী টুডোর ডিক্সন।
ভোটের প্রায় ৯৯ শতাংশ গণনায় গ্রেচেন হুইটমার পেয়েছেন ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৪৪০ ভোট। যা মোট ভোটের ৫৪.৫ শতাংশ। অন্যদিকে রিপাবলিকান টুডোর ডিক্সন পেয়েছেন ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮০ ভোট। যা মোট ভোটের ৪৩.৯ শতাংশ।
গত ৮ নভেম্বর মিশিগান গভর্নর, লোটন গভর্নর, সেক্রেটারি অফ স্টেট, অ্যাটর্নি জেনারেল, মিশিগান কংগ্রেস, মিশিগান সেনেটর, মিশিগান স্টেট হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ, মিশিগান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং ডিস্ট্রিক্ট জজ পদসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ বোর্ডের নানা পদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। মিশিগান স্টেটে রেজিস্ট্রার ভোটারের সংখ্যা ৮২ লাখ ১৩ হাজার ২৮১ জন।
অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ডেমোক্র্যাটিক দলের ডানা নেসেল ২৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৩৮ ভোট পেয়ে ফের নির্বাচিত হয়েছেন। মোট ভোটের ৫৩.২ শতাংশ পেয়েছেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী মাথিউ ডিপ্রেনো পেয়েছেন ১৯ লাখ ৫০ হাজার ১৯ ভোট। যা মোট ভোটের ৪৪.৫ শতাংশ।
এদিকে মিশিগান স্টেট সেনেটে রিপাবলিকানদের শিবিরে আঘাত হেনেছে ডেমোক্র্যাটরা। ২০২০ সালের নির্বাচনে ৩৮টি আসনের মধ্যে ২২টিতে জিতে সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়েছিল রিপাবলিকানরা। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ৩৮টি সেনেটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৯ টিতে এগিয়ে রয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। তবে ডিস্ট্রিক্ট-৯ ও ডিস্ট্রিক্ট-১২ আসনের ফলাফল এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ওই দুটি আসনে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান প্রার্থীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান কম থাকায় আবারও গণনা হবে।
অন্যদিকে মিশিগান হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ ১১০ ডিস্টিক্টের মধ্যে ৫৬টিতেই ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। গত ২০২০ সালের নির্বাচনে ৫৬টি ডিস্ট্রিক্টে বিজয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্টতা পেয়েছিল রিপাবলিকানরা। এই মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে রিপাবলিকানদের দুর্গ ভেঙে দিয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। মোট ১১০টি ডিস্ট্রিক্টের মধ্যে ৫৬ ডিস্ট্রিক্টে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। এছাড়া মিশিগান কংগ্রেসে ১৩টির মধ্যে ৭টি আসনেই জিতেছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীরা।
ডেমোক্র্যাটিক দলের জয়ে বাংলাদেশি-আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থীর পক্ষে তারা ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে বাংলাদেশি ভোটারদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে নারী ও নতুন ভোটারের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রাইমারি নির্বাচনের চেয়ে এই মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাংলাদেশি-আমেরিকান ভোটাররা বেশি অংশ নেন। গভর্নর পদে দ্বিতীয় মেয়াদে গ্রিচেন হুইটমারের প্রতিযোগিতা এবং ভোটের ব্যালটে গর্ভপাতে হ্যাঁ ও না ভোটের প্রস্তাব থাকায় ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রভাব ফেলেছে।
তবে একাধিক সূত্র বলছে, বেশিরভাগ বাংলাদেশি-আমেরিকান গ্রেচেন হুইটমারসহ ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীদের ভোট দিলেও গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণের পক্ষে ভোট দিয়েছেন বড় একটা অংশ। তারা ডেমোক্র্যাটিকদের গর্ভপাত নির্বাচনী ইস্যুকে নৈতিকভাবে মেনে নেননি। অথচ তারা ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে সাপোর্ট করেন।
এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে গর্ভপাত সুরক্ষায় ব্যাপক গণসংযোগ করেছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। তারা বলছে, যার শরীর তার অধিকার। অপরদিকে গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণে প্রচারণা চালিয়েছে রিপাবলিকান দল। তারা বলছে, এটি জীব হত্যা, তাই গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।
গণভোটে গর্ভপাত সুরক্ষায় হ্যাঁ ভোট পড়েছে ২৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬২। মোট ভোটের ৫৬.৯ শতাংশ। গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণে না ভোট পড়েছে ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩৭৫। যা মোট ভোটের ৪৩.৩ শতাংশ।