দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির ক্ষমতা দখল করে। ওই সময় গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সুচিকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে তারা। তবে জোর করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে ভালোভাবে নেয়নি সাধারণ মানুষ। তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এখন মিয়ানমারের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ আগামী এক বছরের মধ্যে পতন হতে পারে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের।
বেসামরিক মানুষ সামরিক শাসন মেনে না নেওয়ায় জান্তা বাহিনী তাদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালিয়েছে। তবে তাতেও পিছু হটেননি বেসামরিকরা। উল্টো গত দুই বছরে তাদের প্রতিরোধ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। পুরো মিয়ানমারজুড়ে অসংখ্য সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনী জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) নামে তারা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর মিয়ানমারে এত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দেখা যায়নি। মিয়ানমারের কেন্দ্রীয়ভাগ, যেটি ড্রাই জোন হিসেবে পরিচিত এ অঞ্চলে অবস্থিত শহরগুলো সবসময় শান্ত ও নির্মল থেকেছে। কিন্তু এখন সেসব শহরেও সংঘর্ষ ছড়িয়েছে।
মাগওয়ে নামের শহরটিও তেমনই একটি শান্ত শহর। এখানে বামার-বৌদ্ধদের বসবাস সবচেয়ে বেশি। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সীমান্ত এলাকাগুলোতে স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে লড়াইরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীদের ওপর যে ধরনের অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে সেসব নির্যাতন থেকে বেঁচে ছিল মাগওয়ের মতো শহরের বাসিন্দারা। ফলে এখানকার মানুষরাও শান্ত ছিলেন।
কিন্তু পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) জানিয়েছে, এখন শুধুমাত্র ড্রাই জোনেই তাদের ৬৪৭ জন সদস্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পিডিএফের মতো সশস্ত্র দলগুলো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বোমা হামলা, গুপ্ত হত্যার চেষ্টা এবং সেনাবহরের ওপর গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে। এর জবাবে সেনাবাহিনীও নিজেদের আলাদা সশস্ত্র বাহিনী (মিলিশিয়া) তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকদের ধারণা- বেসামরিকদের ওপর বর্বর হওয়ায় সামরিক অভ্যুত্থানের প্রায় দুই বছর পর এখন সামরিক জান্তার হাতে পুরো মিয়ানমারের মাত্র ১৭ ভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ আছে।
‘দ্য স্পেশাল অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল ফর মিয়ানমার’ নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ, সঙ্গে বেসামরিকদের আন্দোলন এখন এতটাই তীব্র যে সেনাবাহিনী যে অঞ্চলে তাদের সেনা ও রসদ পাঠাতে পারে না সেই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণই হারিয়ে ফেলার ঝুঁকিতে থাকে।’
সংস্থাটি জানিয়েছে, ‘উত্তর কাচিন স্টেট থেকে দক্ষিণ তানিনথারি এবং ভারত সীমান্তের পশ্চিম চিন থেকে পূর্বাঞ্চলে থাইল্যান্ড সীমান্তষেঁষা কারেনি স্টেট পর্যন্ত এখন প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। ১৯৪০ সালের পর যা সর্বোচ্চ।
মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের সাবেক বিশেষজ্ঞ- ইয়াংঘি লি, মারজুকি দারুসমান এবং ক্রিস সিদোতি বলেছেন, জান্তা খুব সম্ভবত ২০২৩ সালের পুরো সময়টা টিকে থাকতে পারবে না, যদি না বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টে দিতে নাটকীয় কিছু না ঘটে।