ঢাকা ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই : চারজনের যাবজ্জীবন

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মঞ্জু শেখ (২৮) নামের নামে এক চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের মামলায় চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা; অনাদায়ে এক বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার সোহরাব মন্ডল পাড়ার মো. সুলতান মৃধার ছেলে মো. শাহাদাত মৃধা লাভলু, একই উপজেলার আব্দুল আজিজ মৃধা পাড়ার মো. বিল্লাল মোল্লার ছেলে মো. মনোয়ার হোসেন মনু, সোহরাব মন্ডল পাড়ার মো. বাতেন সরদারের ছেলে মো. রিপন সরদার ও মিনাজ উদ্দিন শেখ পাড়ার মো. আক্কাস শেখের ছেলে মো. কোবাদ শেখ।

এছাড়া হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় মো. রুবেল বেপারী নামে এক আসামিকে হত্যার দায় থেকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। তবে ছিনতাই করা মোটরসাইকেলটি ক্রয় করে লুকিয়ে রাখার অপরাধে ৪১১ ধারায় তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

বুধবার (১৫ মে) বিকেলে রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক মোসাম্মৎ জাকিয়া পারভীন এ রায় দেন।

রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত পাঁচজনের মধ্যে চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক আসামি শাহাদাত মৃধা লাভলুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মঞ্জু শেখ গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর দৌলতদিয়া রহমান ফকিরের পাড়ার বাবলু শেখের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। তাঁর মুসলিমা নামে ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মঞ্জু শেখ ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর রাতে মঞ্জুকে হত্যা করে লাশ দৌলতদিয়া আক্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে আইনউদ্দিন ব্যাপারীপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীর শাখা খালের পাড়ে ফেলে তার ডিসকভার মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরদিন ২৭ অক্টোবর সকালে স্থানীয় কৃষকরা জমিতে কাজ করতে গিয়ে লাশটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তাঁর থুতনির নিচে, ঠোঁটের ওপরে, মাথায় ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন ছিল এবং বাম পায়ের রগ কাটা ছিল।

এ ঘটনায় ২৭ অক্টোবর মঞ্জুর বাবা বাবলু শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তে নেমে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়ার পর মঞ্জুকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ এ রায় দেন।

তবে মামলার রায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মঞ্জু শেখ এর বাবা বাবলু শেখ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার ছেলেকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ফাঁসি না দিয়ে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমি এ রায় মানি না। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট উজির আলী শেখ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এবং আমি এ রায়ে সন্তুষ্ট। আমি মনে করি এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এটি সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই : চারজনের যাবজ্জীবন

আপডেট সময় ০৬:৪৪:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মঞ্জু শেখ (২৮) নামের নামে এক চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের মামলায় চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা; অনাদায়ে এক বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার সোহরাব মন্ডল পাড়ার মো. সুলতান মৃধার ছেলে মো. শাহাদাত মৃধা লাভলু, একই উপজেলার আব্দুল আজিজ মৃধা পাড়ার মো. বিল্লাল মোল্লার ছেলে মো. মনোয়ার হোসেন মনু, সোহরাব মন্ডল পাড়ার মো. বাতেন সরদারের ছেলে মো. রিপন সরদার ও মিনাজ উদ্দিন শেখ পাড়ার মো. আক্কাস শেখের ছেলে মো. কোবাদ শেখ।

এছাড়া হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় মো. রুবেল বেপারী নামে এক আসামিকে হত্যার দায় থেকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। তবে ছিনতাই করা মোটরসাইকেলটি ক্রয় করে লুকিয়ে রাখার অপরাধে ৪১১ ধারায় তাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।

বুধবার (১৫ মে) বিকেলে রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক মোসাম্মৎ জাকিয়া পারভীন এ রায় দেন।

রায় ঘোষণার সময় দণ্ডিত পাঁচজনের মধ্যে চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পলাতক আসামি শাহাদাত মৃধা লাভলুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

মঞ্জু শেখ গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের চর দৌলতদিয়া রহমান ফকিরের পাড়ার বাবলু শেখের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। তাঁর মুসলিমা নামে ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মঞ্জু শেখ ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর রাতে মঞ্জুকে হত্যা করে লাশ দৌলতদিয়া আক্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে আইনউদ্দিন ব্যাপারীপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীর শাখা খালের পাড়ে ফেলে তার ডিসকভার মোটরসাইকেলটি নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরদিন ২৭ অক্টোবর সকালে স্থানীয় কৃষকরা জমিতে কাজ করতে গিয়ে লাশটি দেখতে পেয়ে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তাঁর থুতনির নিচে, ঠোঁটের ওপরে, মাথায় ও ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপের চিহ্ন ছিল এবং বাম পায়ের রগ কাটা ছিল।

এ ঘটনায় ২৭ অক্টোবর মঞ্জুর বাবা বাবলু শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তে নেমে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়ার পর মঞ্জুকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ এ রায় দেন।

তবে মামলার রায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মঞ্জু শেখ এর বাবা বাবলু শেখ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার ছেলেকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের ফাঁসি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ফাঁসি না দিয়ে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমি এ রায় মানি না। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট উজির আলী শেখ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এবং আমি এ রায়ে সন্তুষ্ট। আমি মনে করি এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এটি সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত।