এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে পৈতৃক নিবাসে নন্দিত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের ৪৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ জন জিপিএ-৫ পেয়ে শতভাগ পাশ করার সফলতা অর্জন করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। ফলাফল প্রকাশের পরপরই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।
শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের বিদ্যালয় থেকে মোট ৪৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ১৪ জন, মানবিক শাখা থেকে ১৬ জন এবং বিজ্ঞান শাখা থেকে ১৯ জন। তাদের মধ্যে ৪৮ জনই জিপিএ-৫ লাভ করেছে। শুধু বিজ্ঞান শাখার একজন শিক্ষার্থী জিপিএ ৪.৮৩ পেয়েছে। অন্যান্য বছরের মতো এবারো প্রতিষ্ঠানটির শতকরা পাশের হার শতভাগ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন জানায়, আমরা আশানুরূপ রেজাল্ট করতে পেরে খুবই আনন্দিত।
সে আরও জানায়, হুমায়ূন আহমেদ স্যার একজন সুপরিচিত গুণী লেখক ছিলেন। এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতে পেরে আমরা গর্বিত।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হুমায়ূন আহমেদের নিজ গ্রাম নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি আমতলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লী কুতুবপুরে তিন একর জায়গা নিয়ে ১৯৯৬ সালে হুমায়ূন আহমেদ তার এই স্বপ্নের স্কুলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তিনি। এরপর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের করা নকশা অনুযায়ী দৃষ্টিনন্দন স্কুলভবন নির্মাণের পর মাত্র ৪৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০০৬ সালে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। নিজ অর্থায়নে এবং পরিকল্পনায় বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তিনি প্রায় সময়ই ছুটে আসতেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন। পড়াশোনার খোঁজখবর নিতেন এবং স্কুলটি ঘিরে হুমায়ূন আহমেদের দেখা নানারকম স্বপ্নের বর্ণনা তাদের শোনাতেন। কিন্তু এসব স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই না দেশে পাড়ি জমান হুমায়ূন আহমেদ।
এদিকে হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন তার সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওনসহ বিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা নিরলস পরিশ্রম করে প্রতি বছরই প্রত্যেকটি পরীক্ষায় শতভাগ সফলতা অর্জনের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। বর্তমানে ৩৪২ জন শিক্ষার্থী ও ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী হুমায়ূন আহমেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
শুধু পড়াশোনাই নয়, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সফলতার স্বাক্ষর রাখছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় উপজেলা-জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রাখায় ২০১৯ সালে নিম্ন মাধ্যমিক এবং ২০২২ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে স্কুলটি। প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও শতভাগ সফলতা অর্জন করে আসছে।
কেন্দুয়া