ঢাকা ০৮:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রিয় নেতা সম্পর্কে একান্ত আলাপচারিতায় সরকার মাজহারুল মান্নান

আজ আপনি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। যখন রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব জিএম কাদের এবং মহাসচিব জনাব মুজিবুল হক চুন্নু মহোদয় এ সংক্রান্ত পত্র আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন। ঠিক তখন থেকেই দলে আপনার দায়িত্ব আরও বাড়ল। কারণ আপনি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি রংপুর মহানগর সভাপতি এবং জেলা আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্বে আছেন। পাশাপাশি আপনি বাংলাদেশের মধ্যে সবথেকে বেশি ভোটের ব্যবধানে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের দুইবার নির্বাচিত মেয়র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে আমি ২০০৪ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে গণমাধ্যমে চাকরি নিয়ে রংপুর আসি, তার মাস খানেক পর হাজী আব্দুর রাজ্জাক ভাইয়ের মাধ্যমে আপনার সাথে আমার পরিচয়। দিনে দিনে আপনি হয়ে উঠেছেন আমার পরম অভিভাবক। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী বাবার মৃত্যুর পর সেই অভিভাবকত্বের জায়গাটাও আপনি নিয়েছেন আমার। একজন প্রান্তজনের পাশে থাকা রাজনীতিবিদ ছাড়াও আপনি একজন ভালো অভিভাবক, এটার সাক্ষী আমি। অনেকেই বলেন আপনি আমার চাচা। কিন্তু আমি আপনাকে ভাই বলে ডাকি। ভাই-চাচা যে নামেই হোক আপনি আমার আত্মিক অভিভাবক।

আপনি একজন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র । তারপরেও আপনি যখন খরির দোকানে অথবা ফলের দোকানে অথবা ডিমের দোকানে বসে মানুষের কথা শোনেন, রাস্তায় যখন জুতা সেলাই কারীদের সাথে বসে গল্পে মেতে ওঠেন, অথবা কখনো কোন কর্মীর বাইকের পেছনে, রিক্সায় অথবা অটোতে উঠে যখন নগর ভ্রমন করেন, ভোর অথবা গভীর রাত হলেও মানুষের ডাকে যখন সাড়া দেন। তখন সন্তান হিসেবে আমার গর্বে বুকের ছাতা বড় হয়ে যায়।

আপনি যখন অবলিলায় আপনার বেড়ে ওঠার কঠিন মুহুর্তগুলোর গল্প শোনান। যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরেও আর্থিক টানাপোড়েনে হার মেনে হল ছেড়ে আসার গল্প শোনান। জীবিকার জন্য
যখন লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের সময় নিজে ট্রাক্টর চালিয়ে মাটি কাটার গল্প বলেন। সেই ইনকাম দিয়ে যখন বোনকে বিয়ে দেয়ার গল্প শোনান। যখন রাজশাহীতে এলাকার মানুষের আলু রাখতে গিয়ে ট্রাক নস্ট হলে দুরের কোন বাড়িতে আলুসিদ্ধ করে তা খেয়ে তিনদিন আলুর ট্রাক পাহাড়ার গল্প শোনান। যখন বাড়িতে ট্রাক্টরের ইঞ্জিনের সরঞ্জামাদি আনতে রাজশাহীতে গিয়ে দুইদিন না খেয়ে তা সংগ্রহের গল্প শোনান। আপনি যখন কাউনিয়ার তিস্তা রেলওয়ে সেতুর উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইনের কাজ নিতে প্রানন্তকর চেষ্টার কথা শোনান। অভিজ্ঞতা না থাকলেও কিভাবে নির্বাহী প্রকৌশলীকে কনফিডেন্ট দেখিয়ে নিজেই প্রস্তাবনা দিয়ে সেই কাজ নিয়ে দ্রুততম সময়ে তা সম্পন্ন করার কথা শোনান। আপনি যখন লালমনিরহাটের পাটগ্রামের তিনবিঘা করিডোরের নীচ দিয়ে নিজস্ব বুদ্ধিতে পানি ব্যবহার করে বিদ্যুতের লাইন ওপারে নিয়ে যাওয়ার গল্প শোনান। সবার সামনে এসব গল্প যখন আপনি বলেন, তখন সেগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমি শুনি। আপনার এসব জীবনের গল্প আমাকে আলোকিত-আলোড়িত করে। পরিবারের জন্য, মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করবার প্রেরণার বাতিঘর আপনার এই গল্পগুলো আমার কাছে। আমার ক্ষুদ্র কাজের মধ্যে সেটা আমি বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।

আপনি যখন রাজনীতি করতে এসে গুলি খাওয়াসহ নির্যাতনের গল্পগুলো বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের সময় প্রশাসনের নির্যাতনের গল্প শোনান। পুলিশের তাড়া খেয়ে খামার মোড় এলাকার এক নর্দমায় পড়েও ধরাপড়ার পর বিভীষিকাময় শারীরিক নির্যাতনের গল্প বলেন। কখনও কখনও নির্যাতনের ক্ষতচিন্হ যখন পোশাক খুলে দেখান, কারাগারে যাওয়ার জন্য সব সময় পোশাক সাথে রাখার গল্প বলেন। যখন আপনি রাজনৈতিক মাঠে ঘোষণা দেন, কর্মীদের গায়ে গুলি লাগার আগে আপনার গায়ে লাগবে। আপনি সামনে থাকবেন, পেছনে নয়। এসব কথা যখন আপনি বলেন, তখন আপনার পাশে থাকা নেতাকর্মীদের আমি ফলো করি। দেখি তারা কিভাবে তাদের রাজনৈতিক অভিভাবকের কথা গভীর মনোযোগে শোনেন। আমি অভিভূত হই, যখন আমি রংপুরে আসার পর রাজনৈতিক মাঠে আপনার দুঃসাহসিক অভিযাত্রাগুলো মাঠে থেকে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কভার করি।

১৯ বছর আপনার পাশে থেকে, আপনার সাথে পথ চলে যেটা আমি শিখেছি সেটা হলো, ” কেউ আসলে, তার কথা শুনতে। কিছু করতে না পারলেও পরামর্শ দিতে।”

সততা আর সাহস বুকে নিয়ে সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলার যে স্পীডের গল্প আপনি শোনান। যখন আপনি সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানে গিয়ে জোড়গলায় ঘোষনা দেন, ‘ আমার বিরুদ্ধেও কোন অনিয়ম, দুর্ণীতির তথ্য প্রমাণ থাকলে তা প্রচার ও প্রকাশ করবেন। যখন আপনি বলেন, যদি সাংবাদিকরা সেটা না করে তাহলে পেশার সাথে গাদ্দারি করা হয়।” এসব কথা যখন আপনি বলেন, তখন কি যে ভালোলাগে আপনাকে মুখে বলে বা লিখে প্রকাশ করা যাবে না। অনেক কিছুই লিখতে চাই আপনাকে নিয়ে। যদি আল্লাহ আমাকে বেঁচে রাখেন।

আপনি জাতীয় পার্টির যে দায়িত্ব পেলেন, আমি মনে করি এটি আপনাকে রাজনৈতিকভাবে আরও শানিত করবে, পোক্ত করবো। আপনাকে অনেক অভিনন্দন ও শুভ কামনা। আপনার আরও সামনে এগুবার প্রার্থনা থাকলো মহান আল্লাহর কাছে। তিনি যেন আপনাকে সুস্থ্য রাখেন, দীর্ঘায়ু করেন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রিয় নেতা সম্পর্কে একান্ত আলাপচারিতায় সরকার মাজহারুল মান্নান

আপডেট সময় ১১:১৭:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৩

আজ আপনি জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। যখন রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব জিএম কাদের এবং মহাসচিব জনাব মুজিবুল হক চুন্নু মহোদয় এ সংক্রান্ত পত্র আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন। ঠিক তখন থেকেই দলে আপনার দায়িত্ব আরও বাড়ল। কারণ আপনি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্যের পাশাপাশি রংপুর মহানগর সভাপতি এবং জেলা আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্বে আছেন। পাশাপাশি আপনি বাংলাদেশের মধ্যে সবথেকে বেশি ভোটের ব্যবধানে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের দুইবার নির্বাচিত মেয়র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে আমি ২০০৪ সালের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে গণমাধ্যমে চাকরি নিয়ে রংপুর আসি, তার মাস খানেক পর হাজী আব্দুর রাজ্জাক ভাইয়ের মাধ্যমে আপনার সাথে আমার পরিচয়। দিনে দিনে আপনি হয়ে উঠেছেন আমার পরম অভিভাবক। ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী বাবার মৃত্যুর পর সেই অভিভাবকত্বের জায়গাটাও আপনি নিয়েছেন আমার। একজন প্রান্তজনের পাশে থাকা রাজনীতিবিদ ছাড়াও আপনি একজন ভালো অভিভাবক, এটার সাক্ষী আমি। অনেকেই বলেন আপনি আমার চাচা। কিন্তু আমি আপনাকে ভাই বলে ডাকি। ভাই-চাচা যে নামেই হোক আপনি আমার আত্মিক অভিভাবক।

আপনি একজন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র । তারপরেও আপনি যখন খরির দোকানে অথবা ফলের দোকানে অথবা ডিমের দোকানে বসে মানুষের কথা শোনেন, রাস্তায় যখন জুতা সেলাই কারীদের সাথে বসে গল্পে মেতে ওঠেন, অথবা কখনো কোন কর্মীর বাইকের পেছনে, রিক্সায় অথবা অটোতে উঠে যখন নগর ভ্রমন করেন, ভোর অথবা গভীর রাত হলেও মানুষের ডাকে যখন সাড়া দেন। তখন সন্তান হিসেবে আমার গর্বে বুকের ছাতা বড় হয়ে যায়।

আপনি যখন অবলিলায় আপনার বেড়ে ওঠার কঠিন মুহুর্তগুলোর গল্প শোনান। যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরেও আর্থিক টানাপোড়েনে হার মেনে হল ছেড়ে আসার গল্প শোনান। জীবিকার জন্য
যখন লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের সময় নিজে ট্রাক্টর চালিয়ে মাটি কাটার গল্প বলেন। সেই ইনকাম দিয়ে যখন বোনকে বিয়ে দেয়ার গল্প শোনান। যখন রাজশাহীতে এলাকার মানুষের আলু রাখতে গিয়ে ট্রাক নস্ট হলে দুরের কোন বাড়িতে আলুসিদ্ধ করে তা খেয়ে তিনদিন আলুর ট্রাক পাহাড়ার গল্প শোনান। যখন বাড়িতে ট্রাক্টরের ইঞ্জিনের সরঞ্জামাদি আনতে রাজশাহীতে গিয়ে দুইদিন না খেয়ে তা সংগ্রহের গল্প শোনান। আপনি যখন কাউনিয়ার তিস্তা রেলওয়ে সেতুর উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইনের কাজ নিতে প্রানন্তকর চেষ্টার কথা শোনান। অভিজ্ঞতা না থাকলেও কিভাবে নির্বাহী প্রকৌশলীকে কনফিডেন্ট দেখিয়ে নিজেই প্রস্তাবনা দিয়ে সেই কাজ নিয়ে দ্রুততম সময়ে তা সম্পন্ন করার কথা শোনান। আপনি যখন লালমনিরহাটের পাটগ্রামের তিনবিঘা করিডোরের নীচ দিয়ে নিজস্ব বুদ্ধিতে পানি ব্যবহার করে বিদ্যুতের লাইন ওপারে নিয়ে যাওয়ার গল্প শোনান। সবার সামনে এসব গল্প যখন আপনি বলেন, তখন সেগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমি শুনি। আপনার এসব জীবনের গল্প আমাকে আলোকিত-আলোড়িত করে। পরিবারের জন্য, মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করবার প্রেরণার বাতিঘর আপনার এই গল্পগুলো আমার কাছে। আমার ক্ষুদ্র কাজের মধ্যে সেটা আমি বাস্তবায়নের চেষ্টা করি।

আপনি যখন রাজনীতি করতে এসে গুলি খাওয়াসহ নির্যাতনের গল্পগুলো বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের সময় প্রশাসনের নির্যাতনের গল্প শোনান। পুলিশের তাড়া খেয়ে খামার মোড় এলাকার এক নর্দমায় পড়েও ধরাপড়ার পর বিভীষিকাময় শারীরিক নির্যাতনের গল্প বলেন। কখনও কখনও নির্যাতনের ক্ষতচিন্হ যখন পোশাক খুলে দেখান, কারাগারে যাওয়ার জন্য সব সময় পোশাক সাথে রাখার গল্প বলেন। যখন আপনি রাজনৈতিক মাঠে ঘোষণা দেন, কর্মীদের গায়ে গুলি লাগার আগে আপনার গায়ে লাগবে। আপনি সামনে থাকবেন, পেছনে নয়। এসব কথা যখন আপনি বলেন, তখন আপনার পাশে থাকা নেতাকর্মীদের আমি ফলো করি। দেখি তারা কিভাবে তাদের রাজনৈতিক অভিভাবকের কথা গভীর মনোযোগে শোনেন। আমি অভিভূত হই, যখন আমি রংপুরে আসার পর রাজনৈতিক মাঠে আপনার দুঃসাহসিক অভিযাত্রাগুলো মাঠে থেকে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কভার করি।

১৯ বছর আপনার পাশে থেকে, আপনার সাথে পথ চলে যেটা আমি শিখেছি সেটা হলো, ” কেউ আসলে, তার কথা শুনতে। কিছু করতে না পারলেও পরামর্শ দিতে।”

সততা আর সাহস বুকে নিয়ে সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলার যে স্পীডের গল্প আপনি শোনান। যখন আপনি সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানে গিয়ে জোড়গলায় ঘোষনা দেন, ‘ আমার বিরুদ্ধেও কোন অনিয়ম, দুর্ণীতির তথ্য প্রমাণ থাকলে তা প্রচার ও প্রকাশ করবেন। যখন আপনি বলেন, যদি সাংবাদিকরা সেটা না করে তাহলে পেশার সাথে গাদ্দারি করা হয়।” এসব কথা যখন আপনি বলেন, তখন কি যে ভালোলাগে আপনাকে মুখে বলে বা লিখে প্রকাশ করা যাবে না। অনেক কিছুই লিখতে চাই আপনাকে নিয়ে। যদি আল্লাহ আমাকে বেঁচে রাখেন।

আপনি জাতীয় পার্টির যে দায়িত্ব পেলেন, আমি মনে করি এটি আপনাকে রাজনৈতিকভাবে আরও শানিত করবে, পোক্ত করবো। আপনাকে অনেক অভিনন্দন ও শুভ কামনা। আপনার আরও সামনে এগুবার প্রার্থনা থাকলো মহান আল্লাহর কাছে। তিনি যেন আপনাকে সুস্থ্য রাখেন, দীর্ঘায়ু করেন।