বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, ‘‘এই সরকার থাকবে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে… প্রধান নির্বাচন কমিশনার সারা জাতির সঙ্গে মশকরা করেছেন।“
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিলকে ‘একতরফা’ আখ্যা দিয়ে তা ‘ঘৃণাভরে’ প্রত্যাখান করার কথা জানিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশনের তফসিলে দেশে ‘কোনো দিন নির্বাচন হবে না’ বলেও ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট এবং ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমার সুযোগ রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বুধবার সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণার পর পর ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সিইসি গোটা জাতির সঙ্গে ‘ইয়ার্কি করেছেন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘গোটা বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যপুরি আহ্বান উপেক্ষা করে ‘নিশিরাতের সরকারের তল্পিবাহক’ নির্বাচন কমিশন ‘একতরফা’ নির্বাচনের ‘তামাশার তফসিল’ ঘোষণা করেছে।
“শেখ হাসিনার নির্দেশে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য ‘মেরুদণ্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট’ নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে তা আমরা চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছি।”
বিএনপি আন্দোলনে নেমেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে। একই দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেও আন্দোলনে গিয়েছিল দলটি। একই পথে ছিল তাদের শরিকরাও।
সে সময় ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে ৫ জানুয়ারি ভোট হয়েছিল। তার আগেই অবশ্য দেড়শরও বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গিয়েছিলেন।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ভোটে আসে তার জোটকে নিয়েই। তবে সেই নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে আবার নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফেরে, যে সরকার ব্যবস্থাকে উচ্চ আদালত অসাংবিধানিক ঘোষণা করে ২০১১ সালেই। ওই বছরই জাতীয় সংসদ নির্বাচিত সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে।
গত ৩১ অক্টোবর থেকে টানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। দুটি কর্মদিবস বাদ দিয়ে প্রতি কর্মদিবসেই অবরোধ ঘোষণা করেছে দলটি।
রিজভী বলেন, ‘‘দেশে একটি ভীতিকর, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হাসিনা মার্কা ‘একতরফা’ নির্বাচনের এই তথাকথিত ‘তফসিল রঙ্গ’ জনগণ মানে না। এই ‘নীল নকশা’ নির্বাচনে তফসিলে বাংলাদেশের মাটিতে কোনো দিন নির্বাচন হবে না।”
এই তফসিল ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় দেশে যে ‘ভয়াবহ অচলাবস্থা’ ও ‘চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা’ তৈরি হবে তার পুরো দায়ভার সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে বলেও ঘোষণা দেন বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, ‘‘এই সংকটের কারণে ‘আওয়ামী মাফিয়া চক্রকে’ চিরকাল দায়ী থাকতে হবে, যা জনগণের চলমান অগ্নিগর্ভ আন্দোলন আরও তীব্র, আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হবে এবং অতিদ্রুত ‘আওয়ামী নাৎসী সরকারের’ পতন ঘটবে ইনশাল্লাহ।”
সিইসি ‘অবাধ, সুষ্ঠু’ নির্বাচনের যে প্রতিশ্রুতির কথা বলেছেন, তাকে ‘হাস্যকর’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘‘এই সরকার থাকবে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে… প্রধান নির্বাচন কমিশনার সারা জাতির সঙ্গে মশকরা করেছেন।
“শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, তার মন্ত্রীরা থাকবেন আর তার অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন ব্যাপার। সম্পূর্ণ রূপে আমি মনে করি, এটা ডাহা মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি।”
পরপর তিনটি নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ এনে বিএনপি নেতা বলেন, “অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রেখে আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর দেশকে নরকপুরীতে ও জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনে পিষ্ট মানুষ তাদের ভোট ও ভাতের অধিকার, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ফিরে পেতে মরণপন লড়াইয়ে রাজপথে নেমেছে। জনগণ ১৫ বছরের অত্যাচারের জবাব দিতে ঘুরে দাড়িঁয়েছে।”
‘আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল ‘একতরফা’ নির্বাচনের বিরোধিতা করছে দাবি করে রিজভী বলেন, “কার জন্য এই নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে? … স্বৈরাচারী সরকার পতনের অতল গহ্বরের মুখে দাঁড়িয়ে দেশকে নিশ্চিত সংঘাতের দিকে ধাবিত করে পুনরায় ‘গরু-ছাগল দিয়ে’ নির্বাচনের পাঁয়তারা করেছে।”