ঢাকা ০৮:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মুক্তি পাচ্ছে ‘রুম নম্বর ২০১১’ গণতন্ত্র ও বিএনপি সমান্তরাল : মির্জা ফখরুল আ.লীগ দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল : তারেক রহমান

পাঁচ বছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি দ্বিগুণ

ঢাকা: দেশের রপ্তানি বাণিজ্য অর্ধশত বিলিয়ন হলেও, তা তৈরি পোশাকশিল্প কেন্দ্রিক। মোট রপ্তানির ৪৭ বিলিয়ন বা ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক খাতের।

এর বাইরে এক বিলিয়নের ঘরে রয়েছে মাত্র চারটি পণ্য। এর মধ্যে অন্যতম কৃষিজাত পণ্য। গত পাঁচ বছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৬৭৩ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। চার বছরে বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে এক দশমিক ১৬৩ মিলিয়ন উপনীত হয়। পরের অর্থবছর ২০২২-২৩-এ কিছুটা কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে আবারও রপ্তানি বেড়েছে। আগস্ট-জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছে ১৭৪ মিলিয়ন ডলার। দুই মাসে কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, চলতি বছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়ে আবারও বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প সম্ভাবনাময় শিল্প, যা রপ্তানির ক্ষেত্রে আগামীতে বড় অবদান রাখবে। কিন্তু বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রভাবে গত বছর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গিয়েছে। এতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আমরা কম্পিটিশন করতে পারছিলাম না। ক্রেতারা চলে গিয়েছিল। যে কারণে রপ্তানি কমেছে। কিছু কাঁচামালের দাম আবারও কমার কারণে চলতি বছরে রপ্তানি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানান বাংলাদেশ অ্যাগো-প্রসেসর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক।

বাংলাদেশ যে সব কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করে তার মধ্যে প্রধানত শুকনা খাদ্য, তামাক ও তামাকজাত পণ্য, শাক-সবজি, প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ চর্বি ও তেল, সুগার-কনফেকশনারি, ফল ও জুস, পানীয়, চা, সেমাই, জুস, ওয়েল কেক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে রপ্তানির পরিমাণে দেড়শ মিলিয়নের উপরে থাকা কৃষিজাত পণ্যগুলো হলো—শুকনো খাবার, টোব্যাকো, প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ চর্বি ও তেল।

বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করা অন্য পণ্যগুলো হলো—হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। এর মধ্যে কৃষিজাত পণ্যই ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে এবং গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রায় পুরোটাই স্থানীয়ভাবে মূল্য সংযোজিত।

তৈরি পোশাকশিল্প, হোম টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বড় অংশ কাঁচামাল আমদানি করতে চলে যায়। এ ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য বিশ্বের প্রায় ১৩০ দেশে রপ্তানি হয়। ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া ও জাপানে বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এসব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় প্রভাব পড়ে। মানুষ খরচ করার ক্ষেত্রে হিসাবি হয়েছে। কী হয় তা দেখার জন্য পর্যবেক্ষণে থাকে। যে কারণে দেশগুলোতে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেয়। ক্ষেত্র বিশেষে, কোনো কোনো ক্রেতা কম দামে পণ্য পেতে আশপাশের দেশগুলোতে চলে যায়। এসব কারণে রপ্তানি কিছুটা কমেছিল বলে জানান বাংলাদেশ অ্যাগো প্রসেসর অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত বছর ছিল বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কায় আমাদের টিকে থাকার বছর। আমরা সেটা মোকাবিলা করতে পেরেছি। বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের দাম কমেছে। তার সুবিধা আমরা পাওয়া শুরু করেছি। এ কারণে উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। এর প্রভাব রপ্তানিতে পড়েছে। আগামী সময়ে রপ্তানির ক্রমবর্ধমান ধারাতে ফেরা সম্ভব হবে।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে সরকার প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এই প্রণোদনার কারণে বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। ফ্রেইট ভাড়াও কিছুটা কমেছে। তবে বাড়তি ফ্রেইট ভাড়া এখনো রয়ে গেছে এবং এখনো ঝুঁকি রয়ে গেছে বলে মনে করেন কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের এই নির্বাহী।

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আশপাশের দেশগুলোতে কাঁচামালের দাম কম, সেখান থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্রেইট ভাড়াও বাংলাদেশের অর্ধেক। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে রপ্তানিকারকদের অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। কৃষি পণ্য রপ্তানির যে সম্ভাবনা রয়েছে, এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

পাঁচ বছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি দ্বিগুণ

আপডেট সময় ০১:২৭:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ঢাকা: দেশের রপ্তানি বাণিজ্য অর্ধশত বিলিয়ন হলেও, তা তৈরি পোশাকশিল্প কেন্দ্রিক। মোট রপ্তানির ৪৭ বিলিয়ন বা ৮৫ শতাংশ তৈরি পোশাক খাতের।

এর বাইরে এক বিলিয়নের ঘরে রয়েছে মাত্র চারটি পণ্য। এর মধ্যে অন্যতম কৃষিজাত পণ্য। গত পাঁচ বছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৬৭৩ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। চার বছরে বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে এক দশমিক ১৬৩ মিলিয়ন উপনীত হয়। পরের অর্থবছর ২০২২-২৩-এ কিছুটা কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে আবারও রপ্তানি বেড়েছে। আগস্ট-জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছে ১৭৪ মিলিয়ন ডলার। দুই মাসে কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, চলতি বছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়ে আবারও বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প সম্ভাবনাময় শিল্প, যা রপ্তানির ক্ষেত্রে আগামীতে বড় অবদান রাখবে। কিন্তু বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির প্রভাবে গত বছর উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গিয়েছে। এতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে আমরা কম্পিটিশন করতে পারছিলাম না। ক্রেতারা চলে গিয়েছিল। যে কারণে রপ্তানি কমেছে। কিছু কাঁচামালের দাম আবারও কমার কারণে চলতি বছরে রপ্তানি আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানান বাংলাদেশ অ্যাগো-প্রসেসর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক।

বাংলাদেশ যে সব কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করে তার মধ্যে প্রধানত শুকনা খাদ্য, তামাক ও তামাকজাত পণ্য, শাক-সবজি, প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ চর্বি ও তেল, সুগার-কনফেকশনারি, ফল ও জুস, পানীয়, চা, সেমাই, জুস, ওয়েল কেক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে রপ্তানির পরিমাণে দেড়শ মিলিয়নের উপরে থাকা কৃষিজাত পণ্যগুলো হলো—শুকনো খাবার, টোব্যাকো, প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ চর্বি ও তেল।

বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করা অন্য পণ্যগুলো হলো—হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। এর মধ্যে কৃষিজাত পণ্যই ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে এবং গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রায় পুরোটাই স্থানীয়ভাবে মূল্য সংযোজিত।

তৈরি পোশাকশিল্প, হোম টেক্সটাইল, চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির বড় অংশ কাঁচামাল আমদানি করতে চলে যায়। এ ক্ষেত্রে কৃষিপণ্য একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্য।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য বিশ্বের প্রায় ১৩০ দেশে রপ্তানি হয়। ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া ও জাপানে বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এসব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় প্রভাব পড়ে। মানুষ খরচ করার ক্ষেত্রে হিসাবি হয়েছে। কী হয় তা দেখার জন্য পর্যবেক্ষণে থাকে। যে কারণে দেশগুলোতে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেয়। ক্ষেত্র বিশেষে, কোনো কোনো ক্রেতা কম দামে পণ্য পেতে আশপাশের দেশগুলোতে চলে যায়। এসব কারণে রপ্তানি কিছুটা কমেছিল বলে জানান বাংলাদেশ অ্যাগো প্রসেসর অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বনফুল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত বছর ছিল বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কায় আমাদের টিকে থাকার বছর। আমরা সেটা মোকাবিলা করতে পেরেছি। বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের দাম কমেছে। তার সুবিধা আমরা পাওয়া শুরু করেছি। এ কারণে উৎপাদনও বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। এর প্রভাব রপ্তানিতে পড়েছে। আগামী সময়ে রপ্তানির ক্রমবর্ধমান ধারাতে ফেরা সম্ভব হবে।

কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে সরকার প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এই প্রণোদনার কারণে বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। ফ্রেইট ভাড়াও কিছুটা কমেছে। তবে বাড়তি ফ্রেইট ভাড়া এখনো রয়ে গেছে এবং এখনো ঝুঁকি রয়ে গেছে বলে মনে করেন কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের এই নির্বাহী।

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, আশপাশের দেশগুলোতে কাঁচামালের দাম কম, সেখান থেকে রপ্তানির ক্ষেত্রে ফ্রেইট ভাড়াও বাংলাদেশের অর্ধেক। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশে রপ্তানিকারকদের অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। কৃষি পণ্য রপ্তানির যে সম্ভাবনা রয়েছে, এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন।