ঢাকা ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিকরগাছায় মা-বাবার দোয়া নামের বাড়িতেই জায়গা হয়নি বৃদ্ধ বাবা-মায়ের

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে একটি বাড়ির নাম “মা-বাবার দোয়া”। আর ঠিক ঐ বাড়িতেই জায়গা হয়নি বৃদ্ধ বাবা মায়ের। প্রায় তিন বছর তাঁরা মেয়ে-জামাতার বাড়িতে অবস্থান করেছেন। তারপরই ঠাঁই নেন নিজেদের গ্রামের মসজিদে। একপর্যায়ে গতকাল (২৪ জুলাই) সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওই বাবা মাকে বাড়িতে তুলে দিয়েছেন। এমনই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, নিশ্চিন্তপুর গ্রামে মসজিদের ভেতর শুয়ে আছেন আব্দুল জলিল (৭০)। পাশে বসে থাকা স্ত্রী রোজিনা বেগমও (৬০) চলাচলেও প্রায় অক্ষম। আব্দুল জলিল জানান, পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে তাঁর ছেলে নাসির উদ্দীন তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতো, আর তিন বছর আগে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বলেন- এত দিন মেয়ে-জামাতার বাড়িতে ছিলাম। আর কতদিন মেয়ে-জামাতার বাড়িতে থাকবো তাই ফিরে এসে আমরা গত শনিবার বাড়িতে উঠতে গিয়েছিলাম কিন্তু ছেলে ও ছেলের বউ আমাদের বাড়িতে উঠতে দেননি, তাই বাধ্য হয়ে মসজিদে উঠেছি।

নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, তিন-চার বছর ধরে নাসির ও তাঁর মা-বাবা, বোনদের সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছে। যা মিমাংসা করতে আমরা গ্রামবাসী ব্যর্থ হয়েছি। আব্দুল জলিলের মেয়ে পারভীন আক্তার বলেন, নাসির আমার ভাই যা ভাবতে আমার লজ্জা হয়, সে বাবা-মা সহ আমাদেরকে অনেকবার মারধর করেছেন। জালিয়াতি করে আমার বাবার কাছ থেকে বসতবাড়ির জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বাবা-মাকে বের করে দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দীন বলেন, জমি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বে আমার বাবা ও বোনেরা আমার নামে ১৮টি মামলা করেছেন, আর আমিও তাঁদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করেছি। আমি বাবা-মাকে বাড়িতে থাকতে দেব কিন্তু বোনদের বাড়িতে জায়গা দেব না।

বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি ইউএনও মো. মাহবুবুল হক জানতে পেরে সোমবার  বিকেলে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে যান। তিনি ওই বাবা-মাকে মসজিদ থেকে এনে ছেলের বাড়িতে উঠিয়ে দেন। এ সময় ছেলে নাসিরকে আজ মঙ্গলবারের মধ্যে বাড়ি খালি করে দিতে বলেন। যতদিন পর্যন্ত  বসতবাড়ির জমিটি নাসিরের নামে রেকর্ড না হবে তত দিন তিনি এই বাড়িতে আর উঠতে পারবেন না বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল হকে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এম মামুনুর রশিদ, নির্বাসখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সুযোগ্য চেয়ারম্যান খাইরুজ্জামান। ইউপি সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গ উপস্থিত ছিলেন।
Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ঝিকরগাছায় মা-বাবার দোয়া নামের বাড়িতেই জায়গা হয়নি বৃদ্ধ বাবা-মায়ের

আপডেট সময় ০৫:৩৮:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই ২০২৩

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে একটি বাড়ির নাম “মা-বাবার দোয়া”। আর ঠিক ঐ বাড়িতেই জায়গা হয়নি বৃদ্ধ বাবা মায়ের। প্রায় তিন বছর তাঁরা মেয়ে-জামাতার বাড়িতে অবস্থান করেছেন। তারপরই ঠাঁই নেন নিজেদের গ্রামের মসজিদে। একপর্যায়ে গতকাল (২৪ জুলাই) সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওই বাবা মাকে বাড়িতে তুলে দিয়েছেন। এমনই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার নির্বাসখোলা ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামে।

খোজ নিয়ে জানা যায়, নিশ্চিন্তপুর গ্রামে মসজিদের ভেতর শুয়ে আছেন আব্দুল জলিল (৭০)। পাশে বসে থাকা স্ত্রী রোজিনা বেগমও (৬০) চলাচলেও প্রায় অক্ষম। আব্দুল জলিল জানান, পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে তাঁর ছেলে নাসির উদ্দীন তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতো, আর তিন বছর আগে বাড়ি থেকে বের করে দেন। বলেন- এত দিন মেয়ে-জামাতার বাড়িতে ছিলাম। আর কতদিন মেয়ে-জামাতার বাড়িতে থাকবো তাই ফিরে এসে আমরা গত শনিবার বাড়িতে উঠতে গিয়েছিলাম কিন্তু ছেলে ও ছেলের বউ আমাদের বাড়িতে উঠতে দেননি, তাই বাধ্য হয়ে মসজিদে উঠেছি।

নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, তিন-চার বছর ধরে নাসির ও তাঁর মা-বাবা, বোনদের সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছে। যা মিমাংসা করতে আমরা গ্রামবাসী ব্যর্থ হয়েছি। আব্দুল জলিলের মেয়ে পারভীন আক্তার বলেন, নাসির আমার ভাই যা ভাবতে আমার লজ্জা হয়, সে বাবা-মা সহ আমাদেরকে অনেকবার মারধর করেছেন। জালিয়াতি করে আমার বাবার কাছ থেকে বসতবাড়ির জমি লিখে নিয়ে বাড়ি থেকে বাবা-মাকে বের করে দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নাসির উদ্দীন বলেন, জমি নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বে আমার বাবা ও বোনেরা আমার নামে ১৮টি মামলা করেছেন, আর আমিও তাঁদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করেছি। আমি বাবা-মাকে বাড়িতে থাকতে দেব কিন্তু বোনদের বাড়িতে জায়গা দেব না।

বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়টি ইউএনও মো. মাহবুবুল হক জানতে পেরে সোমবার  বিকেলে নিশ্চিন্তপুর গ্রামে যান। তিনি ওই বাবা-মাকে মসজিদ থেকে এনে ছেলের বাড়িতে উঠিয়ে দেন। এ সময় ছেলে নাসিরকে আজ মঙ্গলবারের মধ্যে বাড়ি খালি করে দিতে বলেন। যতদিন পর্যন্ত  বসতবাড়ির জমিটি নাসিরের নামে রেকর্ড না হবে তত দিন তিনি এই বাড়িতে আর উঠতে পারবেন না বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল হকে।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এম মামুনুর রশিদ, নির্বাসখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সুযোগ্য চেয়ারম্যান খাইরুজ্জামান। ইউপি সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গ উপস্থিত ছিলেন।