আমাদের প্রবীণ প্রজন্মের রূপকথার গল্পের মতো শোনানো তালপাতায়/কলাপাতায় লেখা, অন্ধকারে কুপির আলোতে লেখাপড়া করার দৃশ্য এখনো দেখা যাচ্ছে বাগেরহাট জেলার ‘শিশু শিক্ষা নিকেতনে’!
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাঁশের কলম ব্যবহার করে তালপাতায় লিখে বর্ণপরিচয় শেখে।
২০০৫ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বাগেরহাট জেলার চিতলমারীর ডুমুরিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামে ‘শিশু শিক্ষা নিকেতন’ নামের এই বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে। মূলত এটি একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় যেখানে আশেপাশের পাঁচটি গ্রামের মোট ৩৮ জন শিশু পড়ালেখা করে। বিদ্যালয়টিতে প্রায় ১৯ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে নিযুক্ত রয়েছেন প্রবীণ পণ্ডিত কালীপদ বাছার। ৭৫ বছর বয়সি শিক্ষক কালিপদ বাছার বিশ্বাস করেন যে, তালপাতায় লিখলে শিশুদের হাতের লেখা সুন্দর হয় এবং লাইন সোজা হয়। আর তাই তিনি নিজ হাতে যত্নের সাথে শিশুদের তালপাতায় লেখা শেখান। মাসিক ১৫০ টাকা বেতনে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বর্ণমালা, সংখ্যা ও নৈতিক শিক্ষা লাভ করে থাকে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে এই বিদ্যালয়। প্রাক-প্রাথমিক ধাপ শেষ হলে শিক্ষার্থীরা পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
শতবর্ষী ঐতিহ্য লালনকারী এ বিদ্যালয়টি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিদ্যালয়টিতে কোনো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় প্রচন্ড গরমে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করতে কষ্ট হয়। এখানে নেই নিরাপদ খাবার পানির সুব্যবস্থাও! প্রতিবছর বন্যার সময় বিদ্যালয়টি প্লাবিত হয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটায়। এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের নিকট দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করে শিশুদের জন্য পড়ালেখার নিরাপদ পরিবেশ গঠনের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।