ঢাকা ০৬:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ’

বাংলাদেশ জঙ্গিবাদী, অসহিষ্ণু এবং এদেশের সংখ্যালঘুরা বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে—বিশ্বের কাছে  এমন একটা চেহারা দেখাতে প্রতিবেশী দেশ ভারত পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। নেতাদের অভিযোগ-চট্টগ্রামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের যে বিবৃতি, তা রীতিমতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। চট্টগ্রামের ঘটনা পরিকল্পিত। এটাকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডা করে অপপ্রচার চালাচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশ। তারা ( ভারত) বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর যে তৎপরতা চলছে, তা রুখে দিতে সরকার ও জণগণকে আহ্বান জানান নেতারা।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে  এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একটা হিংসার চূড়ান্ত জায়গায় যাচ্ছে। এ রকম ঘটনা দেশে কম দেখি। আশপাশে দেখি। এ ঘটনা যখন শুরু হয়েছে, তখন প্রতিবেশী দেশের বক্তব্য–বিবৃতি আমাদের চিন্তিত করে।’

পত্রিকা অফিসের সামনে গরু জবাইয়ের ঘটনাকে বীভৎস ঘটনা উল্লেখ করে মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা মিডিয়ার পরিপূর্ণ স্বাধীনতার কথা বলি। কোনো কিছু পছন্দ না হলে সেটা বলার ধরন আছে। কিন্তু অস্ত্রের ভাষায় বলবেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

সরকারকে চোখ–কান খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মান্না বলেন, ‘সরকার ঘটনা ঘটার পর কাজ করবে, সেটা নয়। লক্ষণ দেখলেই বোঝা যায়, কী হতে পারে। গত কয়েক দিন যেসব ঘটনা ঘটেছে, এর পেছনে পেছনে সরকার হেঁটেছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত সক্রিয় নয়। সরকারকে আরও সতর্ক থাকতে বলব।’

দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে  বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পরে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পরাজয়কে বিজেপি সরকার তাদের পরাজয় হিসেবে দেখছে। তারা বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা, গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী তৎপরতা, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তৎপরতা অব্যহত রেখেছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুল হক বলেন, ‘ভারত সরকারের পক্ষে তাদের প্রতিনিধি সংবাদ সম্মেলন করে যে ভাষায় বিবৃতি বা বক্তব্য দিচ্ছেন, এটাকে মনে করি একধরনের উসকানি দেওয়ার শামিল।’

পরিকল্পিত সহিংসতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চট্টগ্রামে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, হত্যার যে ধরন, তা দেখে বোঝা যায়, তারা উসকানি দিচ্ছে, যাতে মুসলমানরা তাদের (হিন্দুদের) ওপর হামলা করে। সেই হামলাগুলোকে বাংলাদেশের বাস্তবতা হিসেবে সারা দুনিয়ায় দেখানো যায়। অভ্যুত্থানকে কালিমালিপ্ত করা হয়। এ ধরনের তৎপরতাকে প্রতিরোধ করতে হবে।

গণতান্ত্রিক যাত্রাকে নস্যাৎ করতে একটি গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ফ্যাসিস্টরা যেকোনো ঘটনায় ঢুকে পড়তে পারে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।

দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। কোনোভাবেই অভ্যুত্থানের বিজয়কে নস্যাৎ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, চট্টগ্রামের ঘটনা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপান্তর করার সচেতন চেষ্টা সবাই মিলে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে। বাকি সময়টা ভারতের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে উসকানি দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্ন মাধ্যমে যে উসকানি দেওয়া হচ্ছে, জনগণকে সচেতন থেকে তা মোকাবিলা করতে হবে।

দেশে অস্থির অবস্থা তৈরি করতে পরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের পক্ষ থেকে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশ্নে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর নজির নেই।

কিছু ব্যক্তি মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে জানিয়ে শহীদ উদ্দীন মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমকে বিভিন্ন তকমা লাগানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও জমায়েত হয়ে মব তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘মত ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু যাকে পছন্দ করি না, তার অফিসে গিয়ে হামলা করা, গরু জবাই করা গণতন্ত্রের চেতনার অংশ হতে পারে না।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ’

আপডেট সময় ০৪:৪৫:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ জঙ্গিবাদী, অসহিষ্ণু এবং এদেশের সংখ্যালঘুরা বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে—বিশ্বের কাছে  এমন একটা চেহারা দেখাতে প্রতিবেশী দেশ ভারত পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার তৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। নেতাদের অভিযোগ-চট্টগ্রামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের যে বিবৃতি, তা রীতিমতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। চট্টগ্রামের ঘটনা পরিকল্পিত। এটাকে আন্তর্জাতিক এজেন্ডা করে অপপ্রচার চালাচ্ছে পাশ্ববর্তী দেশ। তারা ( ভারত) বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর যে তৎপরতা চলছে, তা রুখে দিতে সরকার ও জণগণকে আহ্বান জানান নেতারা।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে  এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে গণতন্ত্র মঞ্চ।

সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। একটা হিংসার চূড়ান্ত জায়গায় যাচ্ছে। এ রকম ঘটনা দেশে কম দেখি। আশপাশে দেখি। এ ঘটনা যখন শুরু হয়েছে, তখন প্রতিবেশী দেশের বক্তব্য–বিবৃতি আমাদের চিন্তিত করে।’

পত্রিকা অফিসের সামনে গরু জবাইয়ের ঘটনাকে বীভৎস ঘটনা উল্লেখ করে মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা মিডিয়ার পরিপূর্ণ স্বাধীনতার কথা বলি। কোনো কিছু পছন্দ না হলে সেটা বলার ধরন আছে। কিন্তু অস্ত্রের ভাষায় বলবেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

সরকারকে চোখ–কান খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মান্না বলেন, ‘সরকার ঘটনা ঘটার পর কাজ করবে, সেটা নয়। লক্ষণ দেখলেই বোঝা যায়, কী হতে পারে। গত কয়েক দিন যেসব ঘটনা ঘটেছে, এর পেছনে পেছনে সরকার হেঁটেছে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত সক্রিয় নয়। সরকারকে আরও সতর্ক থাকতে বলব।’

দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে  বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক সাইফুল হক বলেন, ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পরে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার পরাজয়কে বিজেপি সরকার তাদের পরাজয় হিসেবে দেখছে। তারা বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা, গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী তৎপরতা, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তৎপরতা অব্যহত রেখেছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুল হক বলেন, ‘ভারত সরকারের পক্ষে তাদের প্রতিনিধি সংবাদ সম্মেলন করে যে ভাষায় বিবৃতি বা বক্তব্য দিচ্ছেন, এটাকে মনে করি একধরনের উসকানি দেওয়ার শামিল।’

পরিকল্পিত সহিংসতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চট্টগ্রামে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, হত্যার যে ধরন, তা দেখে বোঝা যায়, তারা উসকানি দিচ্ছে, যাতে মুসলমানরা তাদের (হিন্দুদের) ওপর হামলা করে। সেই হামলাগুলোকে বাংলাদেশের বাস্তবতা হিসেবে সারা দুনিয়ায় দেখানো যায়। অভ্যুত্থানকে কালিমালিপ্ত করা হয়। এ ধরনের তৎপরতাকে প্রতিরোধ করতে হবে।

গণতান্ত্রিক যাত্রাকে নস্যাৎ করতে একটি গোষ্ঠী তৎপর রয়েছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ফ্যাসিস্টরা যেকোনো ঘটনায় ঢুকে পড়তে পারে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।

দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু। কোনোভাবেই অভ্যুত্থানের বিজয়কে নস্যাৎ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, চট্টগ্রামের ঘটনা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপান্তর করার সচেতন চেষ্টা সবাই মিলে নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে। বাকি সময়টা ভারতের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে উসকানি দেওয়া হচ্ছে, বিভিন্ন মাধ্যমে যে উসকানি দেওয়া হচ্ছে, জনগণকে সচেতন থেকে তা মোকাবিলা করতে হবে।

দেশে অস্থির অবস্থা তৈরি করতে পরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের পক্ষ থেকে যে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশ্নে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানোর নজির নেই।

কিছু ব্যক্তি মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে জানিয়ে শহীদ উদ্দীন মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমকে বিভিন্ন তকমা লাগানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও জমায়েত হয়ে মব তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘মত ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু যাকে পছন্দ করি না, তার অফিসে গিয়ে হামলা করা, গরু জবাই করা গণতন্ত্রের চেতনার অংশ হতে পারে না।’