ঢাকা ১১:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান আর নেই

ভোলা জেলার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার সাবেক সাংসদ সিদ্দিকুর রহমান ওরফে (বাঘা) ছিদ্দিক চলে গেলেন পৃথিবীর মাঁয়া ত্যাগ করে পরপারে।

বাঘা সিদ্দিকের গ্রামের বাড়ি বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের বড়পাতা গ্রামে। ১৯৪৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রয়াত আব্দুল হক হাওলাদার। ৬ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনিই শুধু বেঁচে ছিলেন।

তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-২ আসনের(তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-৪) সংসদ সদস্য ছিলেন। জীবিত অবস্থায় তিনি ঢাকায় নিভৃত জীবন যাপন করেছেন।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোলা পাকিস্থানি হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে ৬ মে ভোলার খেয়াঘাট দিয়ে এসে পাক বাহীনি ওয়াপদাকে মূল ক্যাম্প করে। পরবর্তীতে ওই স্থান থেকে ভোলা সদর সহ অন্যান্য থানা গুলোতে পাক বাহীনি ক্যাম্প স্থাপন করে। ভোলা সহ প্রতিটি থানায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা সহ ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছিল পাক-হানাদাররা।

ভোলা সদর সহ বিভিন্ন থানায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা তখন বিচ্ছিন্ন ভাবে তাদের হামলার জবাব দিচ্ছিলো।সংগঠিত যুদ্ধ বলতে যা বুঝায় তার অনেকটাই ছিল অনুপস্থিত। সেনাবাহিনীতে কর্মরত বোরহানউদ্দিনের সন্তান সিদ্দিকুর রহমান সেনাবাহীনী থেকে পালিয়ে খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশালে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। ভোলার করেন অবস্থা বেগতিক দেখে ৯ নাম্বার সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল তাকে ভোলায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য পাঠান।

সিদ্দিক ভোলায় এসে কাজী মোতাহার মাষ্টার, রেজা-এ-করিম চৌধুরী(চুন্নু মিয়া), রতন চৌধুরী, সাইফুল্লাহ জুলু, শশী, হোসেন চৌধুরী, কাজী আহতাব উদ্দিন, আলী আকবর, আজিজল মিয়া, হযরত আলী,আচমত মিয়া, আলতাফ রহমান, মাহবুব আলম মুন্সি, নাছির তালুকদার, গিয়াস তালুকদার, সহ অনেককে নিয়ে ভোলা হানাদার মুক্ত করার পরিকল্পনা করেন।

ভোলা হানাদার মুক্তকরনে বোরহানউদ্দিনে ২২ অক্টোরব দেউলার যুদ্ধ এবং ২৭ অক্টোবর টনির হাট(ঘুইংঘার হাটের) যুদ্ধ সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃত। দেউলার যুদ্ধে হাই কমান্ড ছিদ্দিকের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী দখদার মুক্ত করে এ অঞ্চল। ওই যুদ্ধে ৬৪ পাক হানাদার নিহত হয় এবং অনেককে বন্দি করা হয়।টনির হাট যুদ্ধে প্রথমে হযরত আলী এবং আজিজল মিয়া পাকিস্থানিদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে কিন্তু কাঙ্খিত লক্ষ্যে তারা পৌছতে পারছিল না। তখন ছিদ্দিক ও তার বাহিনী সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধে হানাদারদের পরাজিত করেন। ওই স্থানে ৫ পাক-হানাদার নিহত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্যরা ভোলায় পালিয়ে যায়।ওই দুই যুদ্ধে ৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর ভোলাবাসী মুক্তির আনন্দ মিছিলে শামিল হয়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিদ্দিকুর রহমান আর নেই

আপডেট সময় ০৫:০৩:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ জুন ২০২৩

ভোলা জেলার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার সাবেক সাংসদ সিদ্দিকুর রহমান ওরফে (বাঘা) ছিদ্দিক চলে গেলেন পৃথিবীর মাঁয়া ত্যাগ করে পরপারে।

বাঘা সিদ্দিকের গ্রামের বাড়ি বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেউলা ইউনিয়নের বড়পাতা গ্রামে। ১৯৪৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রয়াত আব্দুল হক হাওলাদার। ৬ ভাই ১ বোনের মধ্যে তিনিই শুধু বেঁচে ছিলেন।

তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-২ আসনের(তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-৪) সংসদ সদস্য ছিলেন। জীবিত অবস্থায় তিনি ঢাকায় নিভৃত জীবন যাপন করেছেন।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভোলা পাকিস্থানি হানাদার মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে ৬ মে ভোলার খেয়াঘাট দিয়ে এসে পাক বাহীনি ওয়াপদাকে মূল ক্যাম্প করে। পরবর্তীতে ওই স্থান থেকে ভোলা সদর সহ অন্যান্য থানা গুলোতে পাক বাহীনি ক্যাম্প স্থাপন করে। ভোলা সহ প্রতিটি থানায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা সহ ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছিল পাক-হানাদাররা।

ভোলা সদর সহ বিভিন্ন থানায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা তখন বিচ্ছিন্ন ভাবে তাদের হামলার জবাব দিচ্ছিলো।সংগঠিত যুদ্ধ বলতে যা বুঝায় তার অনেকটাই ছিল অনুপস্থিত। সেনাবাহিনীতে কর্মরত বোরহানউদ্দিনের সন্তান সিদ্দিকুর রহমান সেনাবাহীনী থেকে পালিয়ে খুলনা, পটুয়াখালী, বরিশালে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন। ভোলার করেন অবস্থা বেগতিক দেখে ৯ নাম্বার সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল তাকে ভোলায় যুদ্ধ পরিচালনার জন্য পাঠান।

সিদ্দিক ভোলায় এসে কাজী মোতাহার মাষ্টার, রেজা-এ-করিম চৌধুরী(চুন্নু মিয়া), রতন চৌধুরী, সাইফুল্লাহ জুলু, শশী, হোসেন চৌধুরী, কাজী আহতাব উদ্দিন, আলী আকবর, আজিজল মিয়া, হযরত আলী,আচমত মিয়া, আলতাফ রহমান, মাহবুব আলম মুন্সি, নাছির তালুকদার, গিয়াস তালুকদার, সহ অনেককে নিয়ে ভোলা হানাদার মুক্ত করার পরিকল্পনা করেন।

ভোলা হানাদার মুক্তকরনে বোরহানউদ্দিনে ২২ অক্টোরব দেউলার যুদ্ধ এবং ২৭ অক্টোবর টনির হাট(ঘুইংঘার হাটের) যুদ্ধ সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃত। দেউলার যুদ্ধে হাই কমান্ড ছিদ্দিকের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী দখদার মুক্ত করে এ অঞ্চল। ওই যুদ্ধে ৬৪ পাক হানাদার নিহত হয় এবং অনেককে বন্দি করা হয়।টনির হাট যুদ্ধে প্রথমে হযরত আলী এবং আজিজল মিয়া পাকিস্থানিদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে কিন্তু কাঙ্খিত লক্ষ্যে তারা পৌছতে পারছিল না। তখন ছিদ্দিক ও তার বাহিনী সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধে হানাদারদের পরাজিত করেন। ওই স্থানে ৫ পাক-হানাদার নিহত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্যরা ভোলায় পালিয়ে যায়।ওই দুই যুদ্ধে ৮৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১০ ডিসেম্বর ভোলাবাসী মুক্তির আনন্দ মিছিলে শামিল হয়।