ঢাকা ১১:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় কোটি টাকার সম্পত্তি রক্ষায় অবস্থান কর্মসূচি ও স্বারকলিপি প্রদান

নওগাঁ মডেল টাউনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা মূল্যের ১৮ শতক সম্পত্তি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তার এই কাজে ব্যক্তি মালিকানা জমিকে খাস জমিতে রূপান্তরে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামের বে-আইনী তৎপরতার অভিযোগ এনে অবস্থান কর্মসূচি ও স্বারকলিপি প্রদান করেছে ভুক্তভোগীরা।

বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) বেলা ১১টায় শহরের চকপাথুরিয়া এলাকায় নওগাঁ মডেল টাউনের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসানের হাতে স্বারকলিপি তুলে দেন ভুক্তভোগী জমির মালিকরা। স্বারকলিপিতে এসিল্যান্ড রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চকপাথুরিয়া এলাকাটি নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় সেখানে দীর্ঘ বছর যাবত তাঁরা জমি কিনে দোকানপাট তৈরী করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এ অবস্থায় সম্প্রতি সেখানে আবাসিক প্রকল্প নির্মাণের জন্য কিছু জমির মালিকের থেকে চুক্তি সাপেক্ষে জমি কিনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস। তবে কুদ্দুস তার কথা রাখেননি। জমিগুলো কেনার আশ্বাস দিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিকে খাস হিসেবে রূপান্তর করতে এসিল্যান্ডের সহযোগীতা নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে নিজেদের জমি রক্ষায় অবস্থান কর্মসূচি ও অভিযুক্তদের বিচারের দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেন।

স্বারকলিপিতে বলা হয়, শহরের চকপাথুরিয়া এলাকায় আরএস খতিয়ান ৮০ এবং আরএস ২৮৪ দাগে থাকা ১৮ শতক সম্পত্তির ভূমি উন্নয়ন কর ১৪২৯ সন পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন জমির ৮ জন মালিক। জমিটি সংলগ্ন ১৪ শতক খাস সম্পত্তিসহ মোট ৩২ শতক সম্পত্তি দীর্ঘ বছর যাবত ওই ৮ জনের দখলেই রয়েছে। সম্প্রতি ওই ৩২ শতক জমির ভেতরে থেকে খাস ১৪ শতক বের করে আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুসকে লিজ দিতে জমির ৮ মালিককে তাঁদের নামজারি কেস বাতিল করার হুমকি দিয়ে আসছেন এসিল্যান্ড রফিকুল ইসলাম। সেখানকার বাস্তব চিত্র এসিল্যান্ডের কাছে তুলে ধরতে গেলেও তিনি কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। উল্টো খারিজের কেসগুলো বাতিলের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।

চকপাথুরিয়া মহল্লার বাসিন্দা আবুল হোসেন, বিদ্যুৎ হোসেন ও আলতাফ হোসেনসহ অনেকেই বলেন, মূল সড়ক সংলগ্ন জমি কখনোই খাঁস হিসেবে ছিলো না। এই জমি আজিজুলসহ বেশ কয়েকজনের কেনা সম্পত্তি। দীর্ঘ বছর যাবত তাঁদেরই ভোগদখলে আছে। এই সম্পত্তিতে কিছুদিন আগে এসে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে গেছেন এসিল্যান্ড রফিকুল ইসলাম। ওই মুহুর্তে এসিল্যান্ডকে প্রকৃত বিষয়টি জানাতে গেলে তিনি এলাকার মুরুব্বীদের সাথেও খারাপ আচরন করেন।

দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে এভাবে কারোর সম্পত্তি বেহাত হতে দেখে চুপ হয়ে থাকতে পারলাম না। তাই আমরাও এসে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি।

ভুক্তভোগী আজিজুল হক, আবুল কালাম আজাদ ও নাসিমা খাতুন বলেন, সরকারের খাস ১৪ শতক সম্পত্তি আমাদের ১৮ শতকের বাহিরে কোন দিকে আছে তা ভূমি অফিসের কোন নথিতে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। আমাদের মালিকানাধীন ১৮ শতক মূল সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় এর দাম কোটি টাকা। সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় এই জমিটি আব্দুল কুদ্দুস চুক্তি অনুসারে কিনতে চেয়েছিলো। পরে এসিল্যান্ডের সাথে যোগসাজস করে এটাকেই খাসে রূপান্তরের অপচেষ্টা শুরু করেছে। এটা জানার পরই আমরা পাল্টা অবস্থান নিয়েছি।

তারা বলেন, আমাদের জমিটি এতোদিন যে অবস্থায় ছিলো সে অবস্থাতেই থাকবে।

এটাকে কারোর অবৈধ দখলে যেতে দিবো না। এসিল্যান্ড জমিটিকে খাসে রূপান্তরের জন্য আমাদের হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। রক্ষক হয়েও এসিল্যান্ডের ভক্ষকের ভূমিকার কারণে বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ ও স্বারকলিপি দিয়েছি। এটার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা ওই জমিতে কাওকে প্রবেশ করতে দিবো না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ মডেল টাউন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, অবৈধভাবে কারোর জমি দখলচেষ্টা করা হয়নি। অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তীহীন।

নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এই অফিসে যোগদানের আগেই ওই জমি খাস হয়েছে। মূল্যবান ওই জমি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সেটা করতে গেলে কিছু প্রতিবন্ধকতা আসবে এটাই স্বাভাবিক। অভিযোগগুলোর কোন সত্যতা নেই।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, স্বারকলিপিতে বেশ কিছু বিষয়ে অভিযোগ তুলে ধরেছেন চকপাথুরিয়া এলাকার বাসিন্দারা। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

নওগাঁয় কোটি টাকার সম্পত্তি রক্ষায় অবস্থান কর্মসূচি ও স্বারকলিপি প্রদান

আপডেট সময় ০৫:৫৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩

নওগাঁ মডেল টাউনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি টাকা মূল্যের ১৮ শতক সম্পত্তি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তার এই কাজে ব্যক্তি মালিকানা জমিকে খাস জমিতে রূপান্তরে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলামের বে-আইনী তৎপরতার অভিযোগ এনে অবস্থান কর্মসূচি ও স্বারকলিপি প্রদান করেছে ভুক্তভোগীরা।

বৃহস্পতিবার (০৮ জুন) বেলা ১১টায় শহরের চকপাথুরিয়া এলাকায় নওগাঁ মডেল টাউনের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসানের হাতে স্বারকলিপি তুলে দেন ভুক্তভোগী জমির মালিকরা। স্বারকলিপিতে এসিল্যান্ড রফিকুল ইসলাম ও আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চকপাথুরিয়া এলাকাটি নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় সেখানে দীর্ঘ বছর যাবত তাঁরা জমি কিনে দোকানপাট তৈরী করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এ অবস্থায় সম্প্রতি সেখানে আবাসিক প্রকল্প নির্মাণের জন্য কিছু জমির মালিকের থেকে চুক্তি সাপেক্ষে জমি কিনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস। তবে কুদ্দুস তার কথা রাখেননি। জমিগুলো কেনার আশ্বাস দিয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিকে খাস হিসেবে রূপান্তর করতে এসিল্যান্ডের সহযোগীতা নেন। বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে নিজেদের জমি রক্ষায় অবস্থান কর্মসূচি ও অভিযুক্তদের বিচারের দাবীতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেন।

স্বারকলিপিতে বলা হয়, শহরের চকপাথুরিয়া এলাকায় আরএস খতিয়ান ৮০ এবং আরএস ২৮৪ দাগে থাকা ১৮ শতক সম্পত্তির ভূমি উন্নয়ন কর ১৪২৯ সন পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন জমির ৮ জন মালিক। জমিটি সংলগ্ন ১৪ শতক খাস সম্পত্তিসহ মোট ৩২ শতক সম্পত্তি দীর্ঘ বছর যাবত ওই ৮ জনের দখলেই রয়েছে। সম্প্রতি ওই ৩২ শতক জমির ভেতরে থেকে খাস ১৪ শতক বের করে আবাসন ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুসকে লিজ দিতে জমির ৮ মালিককে তাঁদের নামজারি কেস বাতিল করার হুমকি দিয়ে আসছেন এসিল্যান্ড রফিকুল ইসলাম। সেখানকার বাস্তব চিত্র এসিল্যান্ডের কাছে তুলে ধরতে গেলেও তিনি কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেন না। উল্টো খারিজের কেসগুলো বাতিলের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।

চকপাথুরিয়া মহল্লার বাসিন্দা আবুল হোসেন, বিদ্যুৎ হোসেন ও আলতাফ হোসেনসহ অনেকেই বলেন, মূল সড়ক সংলগ্ন জমি কখনোই খাঁস হিসেবে ছিলো না। এই জমি আজিজুলসহ বেশ কয়েকজনের কেনা সম্পত্তি। দীর্ঘ বছর যাবত তাঁদেরই ভোগদখলে আছে। এই সম্পত্তিতে কিছুদিন আগে এসে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে গেছেন এসিল্যান্ড রফিকুল ইসলাম। ওই মুহুর্তে এসিল্যান্ডকে প্রকৃত বিষয়টি জানাতে গেলে তিনি এলাকার মুরুব্বীদের সাথেও খারাপ আচরন করেন।

দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে এভাবে কারোর সম্পত্তি বেহাত হতে দেখে চুপ হয়ে থাকতে পারলাম না। তাই আমরাও এসে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি।

ভুক্তভোগী আজিজুল হক, আবুল কালাম আজাদ ও নাসিমা খাতুন বলেন, সরকারের খাস ১৪ শতক সম্পত্তি আমাদের ১৮ শতকের বাহিরে কোন দিকে আছে তা ভূমি অফিসের কোন নথিতে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। আমাদের মালিকানাধীন ১৮ শতক মূল সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় এর দাম কোটি টাকা। সড়ক সংলগ্ন হওয়ায় এই জমিটি আব্দুল কুদ্দুস চুক্তি অনুসারে কিনতে চেয়েছিলো। পরে এসিল্যান্ডের সাথে যোগসাজস করে এটাকেই খাসে রূপান্তরের অপচেষ্টা শুরু করেছে। এটা জানার পরই আমরা পাল্টা অবস্থান নিয়েছি।

তারা বলেন, আমাদের জমিটি এতোদিন যে অবস্থায় ছিলো সে অবস্থাতেই থাকবে।

এটাকে কারোর অবৈধ দখলে যেতে দিবো না। এসিল্যান্ড জমিটিকে খাসে রূপান্তরের জন্য আমাদের হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন। রক্ষক হয়েও এসিল্যান্ডের ভক্ষকের ভূমিকার কারণে বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ ও স্বারকলিপি দিয়েছি। এটার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা ওই জমিতে কাওকে প্রবেশ করতে দিবো না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ মডেল টাউন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, অবৈধভাবে কারোর জমি দখলচেষ্টা করা হয়নি। অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তীহীন।

নওগাঁ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এই অফিসে যোগদানের আগেই ওই জমি খাস হয়েছে। মূল্যবান ওই জমি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সেটা করতে গেলে কিছু প্রতিবন্ধকতা আসবে এটাই স্বাভাবিক। অভিযোগগুলোর কোন সত্যতা নেই।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান বলেন, স্বারকলিপিতে বেশ কিছু বিষয়ে অভিযোগ তুলে ধরেছেন চকপাথুরিয়া এলাকার বাসিন্দারা। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।