ঢাকা ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজশাহীতে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি

দেশব্যাপী বিদ্যুতের লোডশেডিং ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বিদ্যুৎ অফিসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে রাজশাহী জেলা বিএনপির উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজশাহীর নেসকো অফিসের সামনে বিএনপির নেতৃবৃন্দ অবস্থান নেয়।

তবে শুরু থেকে সেখানে অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নেসকো অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে সেখানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

বিএনপির নেতারা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে নজির বিহীন দুর্নীতি হয়েছে। যার কারণে সারাদেশে আজ বিদ্যুতের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার নামে এখন গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করছে। অবস্থানের পর বিএনপির নেতৃবৃন্দ নেসকোর সচিব সালমা খাতুনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জৈষ্ঠ্যের খরতাপে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর ওপর বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে মানুষ এক ভয়াবহ দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। গ্রামে চাহিদার তুলনায় ৩০/৩৫ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ ২৪ ঘন্টায় মাত্র ২/১ ঘন্টা বিদ্যুৎ পায়। মফস্বল শহরগুলোতে রাতে ২ ঘন্টার বেশী বিদ্যুৎ থাকে না। দিনের বেলাও অধিকাংশ সময় লোডশেডিংয়ে আচ্ছন্ন থাকে।

প্রচন্ড গরম ও যানবাহনের ধুমায়িত বহ্নিতে রাজধানী যেন গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। এখানেও দিনে-রাতে ৬/৭ ঘন্টার বেশী বিদ্যুৎ থাকে না। মানুষের বসতবাড়িতে সীমাহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি বিদ্যুতের অভাবে ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বৃহৎ শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ও পর্যায়ক্রমে সেগুলি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর চেইন রিএ্যাকশনে ক্রমাগতভাবে কর্মহীন হবে লক্ষ লক্ষ মানুষ ।

সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনকে প্রাইভেট কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প দেয়া হয়েছে। তাদের বিপুল- অর্থবিত্তের মালিক বানানোর জন্য এই সকল প্রকল্প স্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়। যাদের মধ্যে কেউ সিঙ্গাপুরে গিয়ে সর্বোচ্চ ধনীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। অথচ জনগণের পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে কেবলমাত্র এই খাতে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে পরিশোধ করা হচ্ছে। এই লুটপাটের পরিণতিই হচ্ছে অভাবনীয় লোডশেডিংয়ের আত্মপ্রকাশ। লোডশেডিংয়ের বর্তমান দুর্বিষহ পরিস্থিতির জন্য বর্তমান সরকারের গণবিরোধী নীতিই দায়ী। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটকে বৈধ করতেই ইনডেমনিটি আইন করা হয়েছে।

সরকার সবসময় বড় গলায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের কথা বলে এসেছে। পরিবেশ ও মানুষের অস্তিত্বের কথা বিবেচনা না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির নামে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তাহলে আজ কেন এতো অসহনীয় বিদ্যুৎ বিপর্যয়। আসলে এই সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে চলেছে দুর্নীতির মহা তেলেসমাতি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনে করে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের সুযোগ দিয়ে আওয়ামী সরকার ফৌজদারী অপরাধ করেছে। সেজন্য এই রেন্টাল-কুইক রেন্টালের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হওয়া উচিৎ। এরা জনগণের দুশমন বলেই বিদ্যুতের মতো অতি আবশ্যকীয় একটি খাতকে চুরির খনিতে পরিণত করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র এবং নির্বাচনকে বরবাদ করে আমজনতার মৌলিক নাগরিক চাহিদার সমাধানের পথে না গিয়ে মেগা প্রজেক্টের প্রতি অতি আগ্রহের প্রতিফলনই হলো বর্তমান দুর্বিষহ লোডশেডিং। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা চুরি ও কুইক রেন্টালের নামে কুইক চুরি বর্তমান সরকারের ঘোষিত কর্মসূচি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি অবিলম্বে অবর্ণনীয় লোডশেডিং বন্ধ এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে জোরালো আহবান জানাচ্ছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজশাহীতে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি

আপডেট সময় ০২:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩

দেশব্যাপী বিদ্যুতের লোডশেডিং ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বিদ্যুৎ অফিসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে রাজশাহী জেলা বিএনপির উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজশাহীর নেসকো অফিসের সামনে বিএনপির নেতৃবৃন্দ অবস্থান নেয়।

তবে শুরু থেকে সেখানে অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নেসকো অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে সেখানে বক্তব্য রাখেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

বিএনপির নেতারা বলেন, বিদ্যুৎ খাতে নজির বিহীন দুর্নীতি হয়েছে। যার কারণে সারাদেশে আজ বিদ্যুতের বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার নামে এখন গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করছে। অবস্থানের পর বিএনপির নেতৃবৃন্দ নেসকোর সচিব সালমা খাতুনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জৈষ্ঠ্যের খরতাপে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর ওপর বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে মানুষ এক ভয়াবহ দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। গ্রামে চাহিদার তুলনায় ৩০/৩৫ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ ২৪ ঘন্টায় মাত্র ২/১ ঘন্টা বিদ্যুৎ পায়। মফস্বল শহরগুলোতে রাতে ২ ঘন্টার বেশী বিদ্যুৎ থাকে না। দিনের বেলাও অধিকাংশ সময় লোডশেডিংয়ে আচ্ছন্ন থাকে।

প্রচন্ড গরম ও যানবাহনের ধুমায়িত বহ্নিতে রাজধানী যেন গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। এখানেও দিনে-রাতে ৬/৭ ঘন্টার বেশী বিদ্যুৎ থাকে না। মানুষের বসতবাড়িতে সীমাহীন দুর্ভোগের পাশাপাশি বিদ্যুতের অভাবে ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বৃহৎ শিল্প-কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ও পর্যায়ক্রমে সেগুলি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর চেইন রিএ্যাকশনে ক্রমাগতভাবে কর্মহীন হবে লক্ষ লক্ষ মানুষ ।

সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনকে প্রাইভেট কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প দেয়া হয়েছে। তাদের বিপুল- অর্থবিত্তের মালিক বানানোর জন্য এই সকল প্রকল্প স্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়। যাদের মধ্যে কেউ সিঙ্গাপুরে গিয়ে সর্বোচ্চ ধনীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন। অথচ জনগণের পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে কেবলমাত্র এই খাতে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার উপরে পরিশোধ করা হচ্ছে। এই লুটপাটের পরিণতিই হচ্ছে অভাবনীয় লোডশেডিংয়ের আত্মপ্রকাশ। লোডশেডিংয়ের বর্তমান দুর্বিষহ পরিস্থিতির জন্য বর্তমান সরকারের গণবিরোধী নীতিই দায়ী। বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটকে বৈধ করতেই ইনডেমনিটি আইন করা হয়েছে।

সরকার সবসময় বড় গলায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের কথা বলে এসেছে। পরিবেশ ও মানুষের অস্তিত্বের কথা বিবেচনা না করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির নামে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তাহলে আজ কেন এতো অসহনীয় বিদ্যুৎ বিপর্যয়। আসলে এই সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতে চলেছে দুর্নীতির মহা তেলেসমাতি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনে করে বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটের সুযোগ দিয়ে আওয়ামী সরকার ফৌজদারী অপরাধ করেছে। সেজন্য এই রেন্টাল-কুইক রেন্টালের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হওয়া উচিৎ। এরা জনগণের দুশমন বলেই বিদ্যুতের মতো অতি আবশ্যকীয় একটি খাতকে চুরির খনিতে পরিণত করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র এবং নির্বাচনকে বরবাদ করে আমজনতার মৌলিক নাগরিক চাহিদার সমাধানের পথে না গিয়ে মেগা প্রজেক্টের প্রতি অতি আগ্রহের প্রতিফলনই হলো বর্তমান দুর্বিষহ লোডশেডিং। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা চুরি ও কুইক রেন্টালের নামে কুইক চুরি বর্তমান সরকারের ঘোষিত কর্মসূচি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি অবিলম্বে অবর্ণনীয় লোডশেডিং বন্ধ এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে জোরালো আহবান জানাচ্ছে।