রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের চারটি আংশিক অধিকৃত অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করেছেন। বুধবার (১৯ অক্টোবর) সামরিক শাসন জারি করা এসব অঞ্চলকে রাশিয়া নিজেদের বলে দাবি করে থাকে।
যদিও রাশিয়া এগুলো একতরফাভাবে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং এই চারটি অঞ্চল – দোনেতস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া – এর কোনোটিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে না মস্কো। তবে বুধবার পুতিন সেখানে যেভাবে সামরিক আইন জারি করেছে যেন এই চার এলাকা রাশিয়ারই অঞ্চল।
রয়টার্স বলছে, বুধবার প্রেসিডেন্ট পুতিন যে আইনটি জারি করেছেন তা ২০০২ সালের পর থেকে কখনও ব্যবহার করা হয়নি এবং রাশিয়া আগ্রাসন বা ‘আগ্রাসনের তাৎক্ষণিক হুমকির’ মুখোমুখি হলেই তা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
নিচে পুতিনের সর্বশেষ এই ডিক্রির কিছু সম্ভাব্য পরিণতি তুলে ধরা হলো:
মবিলাইজেশন বা সেনা সমাবেশ
রাশিয়ায় সামরিক আইন জারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি সাধারণ বা আংশিক সৈন্য সমাবেশকে অনুমোদন করে। তবে রাশিয়ায় ইতোমধ্যে একটি আংশিক সংহতি বা আংশিক সেনা সমাবেশ হয়েছে এবং অধিকৃত অঞ্চলগুলোতেও তা প্রসারিত হয়েছে। আর তাই যুদ্ধে পাঠানোর জন্য আরও পুরুষকে ডাকা হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
ডিক্রিতে বলা হয়েছে, সামরিক আইনের অধীনে ‘রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর চাহিদা মেটাতে’ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষের থাকবে এবং সেই অনুযায়ী ‘আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা’ নিশ্চিত করা হবে।
দক্ষিণ ইউক্রেনের মাইকোলাইভ অঞ্চলের গভর্নর ভিটালি কিম বলেছেন, রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলে ‘থেকে যাওয়া আমাদের (ইউক্রেনীয়) জনগণকে রিজার্ভ সেনা হিসেবে ব্যবহারের’ বিষয়টি কার্যকর করাই পুতিনের ডিক্রির উদ্দেশ্য বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
তবে কোনো অঞ্চল দখলে দেওয়ার পর সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করতে বাধ্য করাকে জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ
কোনো অঞ্চলে সামরিক আইন জারি হলে সেখানে চলাচলে বিধিনিষেধ এবং মানুষকে তাদের বাড়িতে বন্দি করে কারফিউ জারি করার ক্ষমতা পায় কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়ান মানবাধিকার আইনজীবী পাভেল চিকভ বলেছেন, সামরিক আইনের ফলে চেকপয়েন্ট স্থাপন এবং যানবাহনে তল্লাশির ক্ষমতা পাবে কর্তৃপক্ষ। যে কাউকে ৩০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখার ক্ষমতাও থাকবে কর্তৃপক্ষের হাতে।
খেরসনে রাশিয়ান-নিযুক্ত কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলে বেসামরিক নাগরিকদের প্রবেশে সাত দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এই অঞ্চলে রাশিয়ান-নিযুক্ত প্রশাসনের প্রধান ভ্লাদিমির সালদোকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্র-চালিত বার্তাসংস্থা তাস বলেছে, তিনি সামরিক বাহিনীকে সেখানকার কর্তৃত্ব হস্তান্তর করেছেন এবং খেরসনে এখনই কারফিউ জারির প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করেছেন।
মানুষকে জোরপূর্বক অন্যত্র স্থানান্তর
আইনজীবী পাভেল চিকভের মতে, সামরিক আইন জারির মতো পদক্ষেপগুলো বাসিন্দাদের জোরপূর্বক অন্য অঞ্চলে স্থানান্তরের অনুমতি দিতে পারে।
রাশিয়ান আইন নিরাপদ এলাকায় বাসিন্দাদের অস্থায়ী ‘পুনর্বাসন’ এবং ‘অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের বস্তুগুলো’ সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেয়। সালদো বুধবার জানিয়েছেন, ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের কারণে আগামী ছয় দিনের মধ্যে খেরসন অঞ্চলের রুশ অংশ থেকে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার লোককে সরিয়ে নেওয়া হবে।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান নিকোলাই পাত্রুশেভ বুধবার বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডনবাস অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের অন্যান্য অংশের ৫০ লাখ বাসিন্দা কিয়েভের নিপীড়ন থেকে রাশিয়ায় ‘আশ্রয় পেয়েছেন’।
ইউক্রেন অবশ্য আগেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অধিকৃত অঞ্চল থেকে মানুষকে বিতাড়িত করার অভিযোগ করেছে। গত সেপ্টেম্বরে একজন মার্কিন দূত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, ৯ লাখ থেকে ১৬ লাখ ইউক্রেনীয়কে জোরপূর্বক অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বুধবার ক্রিমিয়াসহ রাশিয়াজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। এসময় ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করা চারটি অঞ্চলে সামরিক শাসন জারি করার কথাও জানান তিনি।
এর পাশাপাশি আঞ্চলিক গভর্নরদের আরও বেশি ক্ষমতা দিয়েছেন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় মধ্যরাত থেকে এসব নির্দেশ কার্যকর হয়েছে।
মূলত ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন থেকে রুশ-সমর্থিত প্রশাসন পালিয়ে যেতে শুরু করার পর প্রেসিডেন্ট পুতিন এসব সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন।