ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসের দক্ষিণে লাস তেজেরিয়াস শহরে ভয়াবহ ভূমিধসে ঘরবাড়ি ভেসে গেছে। মূলত প্রবল বৃষ্টিপাতের পর সৃষ্ট এই বন্যা ও ভূমিধসে কমপক্ষে ২৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং আরও ৫২ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সোমবার (১০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। অবশ্য ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ২২ জন বলে জানানো হয়েছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবল বৃষ্টির কারণে মধ্য ভেনেজুয়েলায় পাঁচটি ছোট নদী প্লাবিত হওয়ার পরে কমপক্ষে ২৫ জন মারা গেছেন। এ ঘটনায় এখনও ৫২ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দেশটির সিটিজেন সিকিউরিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট রেমিজিও সেবেলোস রোববার সন্ধ্যায় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন।
ভেনেজুয়েলার ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেলসি রদ্রিগেজ দিনের শুরুতে জানান, শনিবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে আশপাশের পাহাড় থেকে বড় বড় গাছের গুঁড়ি এবং ধ্বংসাবশেষ কারাকাসের ৪০ মাইল (৬৭ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত তেজেরিয়াস শহরের আবাসিক এলাকায় এসে পড়ে। এর ফলে মানুষের ঘরবাড়ির পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং কৃষি জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
রদ্রিগেজ বলেন, মাত্র আট ঘণ্টায় এক মাসের সমপরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে এবং এতে করে বন্যার সৃষ্টি হয় ও খাবার পানীয়র সকল ব্যবস্থাই বন্যার পানিতে ভেসে যায়। তিনি বলেন, শহরজুড়ে কাদা ও পাথরের নিচে আটকে পড়া লোকদের খুঁজে বের করাই এখন আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। এছাড়া সামরিক বাহিনীর সদস্য ও উদ্ধারকর্মীরা বেঁচে যাওয়া মানুষদের খোঁজে নদীর তীরে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।
বন্যার পানিতে তেজেরিয়াস শহরের একটি প্লাবিত রাস্তা থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট রদ্রিগেজ বলেন, ‘আমরা ছেলেদের, মেয়েদের হারিয়েছি। তেজেরিয়াস শহরে যা ঘটেছে তা একটি ট্র্যাজেডি।’ এদিকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এক টুইট বার্তায় বলেছেন, তিনি এই এলাকাটিকে একটি দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং প্রাণহানির ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছেন। রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রায় ৭৩ হাজার বাসিন্দার শহর তেজেরিয়াসের রাস্তাগুলো এখন কাদা, নুড়ি-পাথর, এলোমেলোভাবে গাছ ও গাছের ডালে ভরা এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের ধ্বংসাবশেষে পরিপূর্ণ।
৪৩ বছর বয়সী ট্যাক্সি ড্রাইভার আরমান্দো এসকালোনা বলছেন, শনিবার রাতে তারা চার্চে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এসময়ই আকস্মিকভাবে তারা বন্যার পানিতে আটকা পড়েন। তিনি বলেন, তিনি অল্প সময়ের জন্য তার পরিবারকে নিজের আলিঙ্গনে রেখেছিলেন, কিন্তু পরে একটি অজানা বস্তু তার মাথায় আঘাত করে এবং তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর নিজের পরিবারকে খুঁজে পাননি তিনি।
এসকালোনা বলছেন, ‘আমি আমার স্ত্রী এবং আমার ৫ বছরের ছেলেকে হারিয়েছি। আমি কথাই বলতে পারছি না। আমরা চার্চে সেই অনুষ্ঠানে ছিলাম এবং সবকিছু এত দ্রুত ঘটে গেল।’ অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, ভারী বৃষ্টির পর প্লাবিত নদীগুলোর একটি এল পাটো নদী বেশ কয়েকটি বাড়ি, দোকান এবং একটি কসাইখানাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।
দেশটির নাগরিক সুরক্ষা ব্যবস্থার উপমন্ত্রী কার্লোস পেরেজ রোববার এক টুইটে বলেছেন, এক হাজার উদ্ধারকারী ওই এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ করছেন। অন্যদিকে রদ্রিগেজ বলেছেন, রোববার সকালে আরও তিনটি মধ্যাঞ্চলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমিধস হয়েছে, তবে কোনো ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি।