ঢাকা ১০:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মানবজাতির মুক্তির দিশারি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আবুল হাশেম বক্কর বি আর টি সির চেয়ারম্যানের অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে সেমিনারে অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান চৌধুরী ভুয়া ঠিকানায় নিরাপত্তা ছাড়পত্রের চেষ্টা গণপূর্তের প্রকৌশলী রাজু আহমেদের পটুয়াখালীতে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ২০ দিন কারাদন্ড অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে পটুয়াখালী সদর উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত একমঞ্চে গাইবেন আতিফ আসলাম ও তাহসান ভোজ্যতেলে ভ্যাট ছাড় দিল এনবিআর শেখ হাসিনাকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার রাকুলের পোশাকটি কেমন হবে, পরামর্শ দিতেন বাবা

উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী তন্ত্রমন্ত্রের ‘পাতা খেলা’

দর্শকদের করতালি উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তন্ত্রমন্ত্রের ‘পাতা খেলা’। মনোমুগ্ধকর ‘পাতা খেলা’ দেখতে শত শত নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। এদিকে বিলুপ্ত প্রায় খেলাটির খবর পেয়ে ক্যামেরাবন্দী করতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন, বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান। তার সাথে ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয় চারণ কবি সংঘের সহ-সভাপতি কবিয়াল নির্মল চন্দ্র সরকার।

আবহমান বাংলার সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে তুমড়ি বা পাতা খেলা। সনাতন হিন্দু ধর্মের পদ্মাদেবী তথা মনসা দেবীর অলৌকিক লীলা থেকে কালের বির্বতনে এ পাতা খেলার উৎপত্তি। মনসা দেবীর অলৌকিক লীলা সনাতন ধর্ম থেকে বাঙালীর সংস্কৃতিতে স্থান করে নিয়েছে। প্রতি বছরের শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের তিথি সংক্রান্তিতে সনাতন হিন্দু-ধর্মাবলম্বীরা পদ্মাদেবীর তুষ্টির জন্য মনসা পূজা করে থাকে। মনসা পূজার পরের দিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রবাণের তুমড়ি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকালে বিরলের হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো আদিবাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির তুমুড়ীবান ও পাতা (সাপ) খেলা। দর্শকপ্রিয় ও দুঃসাহসী তন্ত্রমন্ত্রের খেলাটি হয় বিরলের রাণীপুকুর ইউপি’র বিষ্ণুপুর লোহাডাঙ্গা গ্রামের আদিবাসী তুড়ী পল্লীতে।

খেলাটিতে লক্ষনীয় ছিল শত শত নারী পুরুষ ও শিশুদের উপচে পড়া ভিড়। পড়ন্ত বিকালে তাপদাহ উপেক্ষা করে তান্ত্রিক ও দর্শকরা মাঠের চারিদিকে অবস্থান নেয়। এরপর ২০১ টাকা নির্ধারিত মাঠ ফি দিয়ে মাঠের চার কোনে সহযোগী তান্ত্রিকদের সাথে নিয়ে আসন গেড়ে বসেন, তান্ত্রিক সুমন চন্দ্র শীল, আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল আলিম, সুজন ও কার্তিক। এর আগে মাঠের মাঝ খানে খেলা পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে খেলার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মাঠের মাঝখানে ঘোঠ বা একটি কলাগাছ বসানো হয়। একটি কুচু পাতার উপরে দুধ রেখে কলা গাছে উপরে ছেড়ে দেয়া হয় ৫টি বিষধর সাপ। সাপ ছেড়ে দিয়ে খেলা পরিচালনা করতে থাকেন, কমিটির পক্ষ থেকে আরেক তান্ত্রিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সাথী সরকার। খেলা শেষে বিজয়ী তান্ত্রিক সুমন চন্দ্র শীলসহ খেলায় অংশগ্রহণকারী সকল তান্ত্রিকগণকে হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনের পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এ ব্যাপারে হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনের সভাপতি এম এ কুদ্দুস সরকার বলেন, তন্ত্র-মন্ত্রের এ তুমুড়ীবান ও পাতা বা সাপ খেলাটি আদিবাংলার একটি গ্রামীণ সংস্কৃতি। আধুনিক যুগেও আদিবাসী তুড়ী সম্প্রদায়ের মানুষরা ঐতিহ্যগতভাবে খেলাটি আকড়ে ধরে আছে। স্থানীয় মনসা পুজা কমিটির সাবেক সভাপতি বীরেন সিং জানান, এই খেলাটি আমাদের অনেক দিনের পুরোনো খেলা। বাপ-দাদার আমল থেকেই এই খেলাটি আমরা মনসা পূজার পরের দিন করে থাকি। খেলা দেখতে আসা নতুন প্রজন্মের অনেকে জানিয়েছে তাদের অভিব্যাক্তি। বিনোদন ও দর্শক প্রিয় এ খেলাটি কালের আবর্তনে যেন হারিয়ে না যায় এমন প্রত্যাশা দর্শক ও আয়োজকদের।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মানবজাতির মুক্তির দিশারি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আবুল হাশেম বক্কর

উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী তন্ত্রমন্ত্রের ‘পাতা খেলা’

আপডেট সময় ০৮:২২:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ অগাস্ট ২০২২

দর্শকদের করতালি উৎসাহ আর উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তন্ত্রমন্ত্রের ‘পাতা খেলা’। মনোমুগ্ধকর ‘পাতা খেলা’ দেখতে শত শত নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। এদিকে বিলুপ্ত প্রায় খেলাটির খবর পেয়ে ক্যামেরাবন্দী করতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন, বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক ড. আমিনুর রহমান সুলতান। তার সাথে ছিলেন, বাংলাদেশ জাতীয় চারণ কবি সংঘের সহ-সভাপতি কবিয়াল নির্মল চন্দ্র সরকার।

আবহমান বাংলার সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে তুমড়ি বা পাতা খেলা। সনাতন হিন্দু ধর্মের পদ্মাদেবী তথা মনসা দেবীর অলৌকিক লীলা থেকে কালের বির্বতনে এ পাতা খেলার উৎপত্তি। মনসা দেবীর অলৌকিক লীলা সনাতন ধর্ম থেকে বাঙালীর সংস্কৃতিতে স্থান করে নিয়েছে। প্রতি বছরের শ্রাবণ-ভাদ্র মাসের তিথি সংক্রান্তিতে সনাতন হিন্দু-ধর্মাবলম্বীরা পদ্মাদেবীর তুষ্টির জন্য মনসা পূজা করে থাকে। মনসা পূজার পরের দিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রবাণের তুমড়ি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার পড়ন্ত বিকালে বিরলের হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো আদিবাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির তুমুড়ীবান ও পাতা (সাপ) খেলা। দর্শকপ্রিয় ও দুঃসাহসী তন্ত্রমন্ত্রের খেলাটি হয় বিরলের রাণীপুকুর ইউপি’র বিষ্ণুপুর লোহাডাঙ্গা গ্রামের আদিবাসী তুড়ী পল্লীতে।

খেলাটিতে লক্ষনীয় ছিল শত শত নারী পুরুষ ও শিশুদের উপচে পড়া ভিড়। পড়ন্ত বিকালে তাপদাহ উপেক্ষা করে তান্ত্রিক ও দর্শকরা মাঠের চারিদিকে অবস্থান নেয়। এরপর ২০১ টাকা নির্ধারিত মাঠ ফি দিয়ে মাঠের চার কোনে সহযোগী তান্ত্রিকদের সাথে নিয়ে আসন গেড়ে বসেন, তান্ত্রিক সুমন চন্দ্র শীল, আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুল আলিম, সুজন ও কার্তিক। এর আগে মাঠের মাঝ খানে খেলা পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে খেলার প্রচলিত রীতি অনুযায়ী মাঠের মাঝখানে ঘোঠ বা একটি কলাগাছ বসানো হয়। একটি কুচু পাতার উপরে দুধ রেখে কলা গাছে উপরে ছেড়ে দেয়া হয় ৫টি বিষধর সাপ। সাপ ছেড়ে দিয়ে খেলা পরিচালনা করতে থাকেন, কমিটির পক্ষ থেকে আরেক তান্ত্রিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সাথী সরকার। খেলা শেষে বিজয়ী তান্ত্রিক সুমন চন্দ্র শীলসহ খেলায় অংশগ্রহণকারী সকল তান্ত্রিকগণকে হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনের পক্ষ থেকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এ ব্যাপারে হামেরা দিনাজপুরিয়া সংগঠনের সভাপতি এম এ কুদ্দুস সরকার বলেন, তন্ত্র-মন্ত্রের এ তুমুড়ীবান ও পাতা বা সাপ খেলাটি আদিবাংলার একটি গ্রামীণ সংস্কৃতি। আধুনিক যুগেও আদিবাসী তুড়ী সম্প্রদায়ের মানুষরা ঐতিহ্যগতভাবে খেলাটি আকড়ে ধরে আছে। স্থানীয় মনসা পুজা কমিটির সাবেক সভাপতি বীরেন সিং জানান, এই খেলাটি আমাদের অনেক দিনের পুরোনো খেলা। বাপ-দাদার আমল থেকেই এই খেলাটি আমরা মনসা পূজার পরের দিন করে থাকি। খেলা দেখতে আসা নতুন প্রজন্মের অনেকে জানিয়েছে তাদের অভিব্যাক্তি। বিনোদন ও দর্শক প্রিয় এ খেলাটি কালের আবর্তনে যেন হারিয়ে না যায় এমন প্রত্যাশা দর্শক ও আয়োজকদের।