পবিত্রতা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। অপবিত্রতা, নোংরামি দেহমনকে অসুস্থ করে তোলে। পবিত্র থাকতেই ভালোবাসে সবাই। তবে চলাফেরা করতে গিয়ে পরিস্থিতির কারণে শরীর অপবিত্র হয়ে যায় অনেকভাবেই। কিছু কিছু অপবিত্রতা থেকে মুক্ত হতে গোসল করে হয়। আবার কখনও কখনও অজু করলেই হয়ে যায়।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতে দন্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রী সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিআমত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। -(সুরা মায়েদা, আয়াত, ০৬)
পবিত্রতা অর্জন করে মানুষ নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, ফরজ ও বিভিন্ন নফল ইবাদত করে থাকে। ফরজ ইবাদত মানুষকে পরকালে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে। বান্দার পক্ষে কখনো সম্ভব নয় যথাযথভাবে ফরজ ও ওয়াজিবগুলো পালন করা। বরং তা পালন করতে গিয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়াই স্বাভাবিক। তাই ইবাদতে কোনও কিছুর ঘাটতি থাকলে তা পূরণে ঢাল হয়ে দাঁড়াবে নফল ইবাদত।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার কাছ থেকে সবার আগে যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হল নামাজ। নামাজ ঠিক হলে সে পরিত্রাণ ও সফলতা লাভ করবে। নইলে (নামাজ ঠিক না হলে) ধ্বংস ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সুতরাং (হিসাবের সময়) ফরজ নামাজে কোনও কমতি দেখা গেলে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের বলবেন, ‘দেখ, আমার বান্দার কোনও নফল (নামাজ) আছে কি না।’ অতএব তার নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ঘাটতি পূরণ করা হবে। তারপর অন্য আমলের হিসাব গ্রহণ করা হবে।’ -(সুনানে আবু দাউদ, ৭৭০, তিরমিজি, ৩৩৭, ইবনে মাজাহ, ১১৭)
এছাড়া ফরজ এবং ওয়াজিবের দায়িত্বগুলো পালন করার পর অতিরিক্ত নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা মূলত আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ। তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালে শান্তির জন্য সুযোগ পেলেই মানুষ তাহাজ্জুদ, বিভিন্ন মাসনুন দোয়া ও দরুদ পড়ে থাকেন।
অনেক সময় গোসল ফরজের মতো অপবিত্র না হলেও অজু করতে হবে এমন অপবিত্রতা ঘটে যায়। তাৎক্ষণিক অজু করাও সম্ভব হয় না। এমন মুহূর্তে কেউ দোয়া দরুদ পড়তে চাইলে তা অজু ছাড়াই পড়া যাবে। এভাবেও হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পেয়ে যাবে। তবে আলেমরা সবসময় অজু অবস্থায় থাকার এবং অজু করেই সবধরণের দোয়া দরুদ পড়াকে উত্তম বলেন এবং পড়তে উৎসাহিত করেন ও পরামর্শ দেন। -(মাবসুতুস সারাখসি : ২/২৬, ফাতহুল বারি : ১/৩৪৩, ফাতাওয়ায়ে রশিদিয়া : ২৫৩)