১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে যারা আসাম গিয়েছেন, তাদেরকে আপাতত ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ঘোষণায় আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এক রায়ে বলেছেন, ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সাবেক পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে যারা ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে প্রবেশে করেছেন, শুধু তাদেরকেই তাদের সবাইকে বৈধ নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আসামের রাজ্য সরকারকে নির্দেশও দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।
ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি এমএম সুন্দরেশ বিচারপতি মনোজ মিশ্র এবং বিচারপতি জেবি পার্দিওয়ালা। এদের মধ্যে প্রধান বিচারপতিসহ প্রথম ৪ জন এ রায়ের পক্ষে এবং জেবি পার্দিওয়ালা বিপক্ষে ছিলেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই নিউজ। গত ৭ অক্টোবর আসামের রাজ্য সরকারকে নোটিশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। সেই নোটিশে ভারতে প্রচলিত নাগরিকত্ব আইন (সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫৫) অনুসারে আসামের অভিবাসীদের ব্যাপারে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল।
নোটিশের পর সুপ্রিম কোর্টে একটি হলফনামা (এফিডেভিড) জমা দেয় আসামের রাজ্য সরকার। সেখানে বলা হয় ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তৎকালীণ পূর্বপাকিস্তান থেকে যারা আসামে প্রবেশ করেছেন, তাদের মধ্যে থেকে ১৭ হাজার ৮৬১ জনকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে এবং ৩২ হাজার ৩৮১ জনকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী ‘বিদেশি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে আসা ১৪ হাজার ৩৪৬ জন অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিল হলফনামায়। বৃহস্পতিবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, ভারতের নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫-এর ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত সাবেক পূর্বপাকিস্তান থেকে যেসব অভিবাসী আসামে এসেছেন, তাদের সবাই ভারতের বৈধ নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা মনে করেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সীমান্তবর্তী অন্য রাজ্যগুলো যেমন পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় আসাম অনুপ্রবেশ সমস্যায় বেশি ভুক্তভোগী হয়েছিল। তাই তাদের সঙ্গে আসামকে এক করে ভাবলে চলবে না। বেঞ্চের মতে, আসামে ৪০ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছিল। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছিল ৫৭ লক্ষ অনুপ্রবেশকারী। কিন্তু আসামের ওপর অনুপ্রবেশের প্রভাব অনেক বড় ছিল। কারণ পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে আসামের জমির পরিমাণ অনেক কম।
এর আগে আসামে অবৈধ অভিবাসন সংক্রান্ত ওই ধারা ‘অসাংবিধানিক’ দাবি করে আদালতে মোট ১৭টি আবেদন জমা পড়েছিল। সেগুলো একত্র করে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সংবিধান বেঞ্চে গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুর দিকে শুনানি শুরু হয়েছিল। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার এর রায় ঘোষণা করে আদালত।