ভোক্তার পকেট কাটতে বাজারে ফের বিক্রেতারা কারসাজি করেছেন। সিন্ডিকেট করে বাড়াচ্ছেন সব ধরনের দরকারি পণ্যের দাম। পরিস্থিতি এমন, বন্যায় ত্রাণ কার্যক্রমে চিড়া-গুড় ও মুড়ির বিক্রি বাড়ায় বাড়তি মুনাফা করতে খুচরা বাজারে এসব পণ্য এক প্রকার উধাও করা হয়েছে।
কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম। পাশাপাশি বন্যার অজুহাতে প্রতি ডজন ডিম ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। কেজিপ্রতি আলুর দাম বাড়ানো হয়েছে ৫ টাকা। আর পেঁয়াজের কেজি ১০-১৫ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজি কিনতেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি মূল্য। ফলে এসব পণ্য কিনতে নাকাল হচ্ছেন ভোক্তা।
এদিকে এসব পণ্যের দাম বাড়লেও খুচরা বাজারে চিনির দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম কমেছে ৩০ টাকা। আর ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল আছে। তবে সব ধরনের মসলা পণ্য এখনও উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, রামপুরা বাজারসহ একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, কোনো সরকারের আমলেই নিত্যপণ্যের বাজারে ক্রেতার স্বস্তি ছিল না। কোনো না কোনো ভাবে এক শ্রেণির অসাধু বিক্রেতা ভোক্তাদের নাজেহাল করেছে। তাই এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত হবে এই পরিবেশ থেকে ক্রেতাকে বের করে আনা।
তিনি জানান, নতুনভাবে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। ইতোমধ্যে সরকার কাজ শুরু করেছে। এছাড়া আমরা দেখেছি পরিবহণে চাঁদা বন্ধ হওয়ায় বাজারে পণ্যের দাম কিছুটা কমেছিল। তবে এই কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে।
এদিকে খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা, যা কয়েকদিন আগেও ৬৫-৭০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। যা আগে ৭৫ টাকা ছিল। প্রতি কেজি গুড় মানভেদে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই পণ্য আগের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারে এসব পণ্য কিনতে এসেছেন অনার্স পড়–য়া শিক্ষার্থী মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি যুগান্তরকে বলেন, দেশে বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। দুবেলা খাবার জোগানে শুকনা খাবারের মধ্যে চিড়া, মুড়ি ও গুড় বেশি করে কিনছেন। তাই বাজারে চাহিদা বাড়ায় বিক্রেতারা এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এটা কেমন কথা?
বিক্রেতারা বাড়তি মুনাফা করতে বাজার থেকে এসব পণ্য এক প্রকার সরিয়ে ফেলেছেন। তিনি বলেন, পণ্যের চাহিদা বড়লেই দাম বাড়বে তা মানা যায় না। কারণ বিক্রেতারা ২ সপ্তাহ আগে যে দামে বিক্রি করেছেন সেই একই দামে বিক্রি করলে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় না।
এ বিষয়ে কাওরান বাজারে কিচেন মার্কেটের চিড়া-মুড়ি ব্যবসায়ী মেসার্স মায়ের দোয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নূর মোহাম্মদ বলেন, চিড়া-মুড়ি এখন বাজারে নেই বললেই চলে। বাজারে কিছু প্যাকেটজাত চিড়া-মুড়ি পাওয়া গেলেও দাম বেশি। খোলা চিড়া-মুড়ি আমরা নিজেরাই পাচ্ছি না। যা আসছে তাও আসার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, মিল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই আমাদেরও বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে গুড় ব্যবসায়ী আমিন ইসলাম বলেন, দুদিন ধরে বাজারে গুড়ের সংকট চলছে। তাই পণ্য না থাকায় বিক্রি বন্ধ আছে। উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী গুড় পাওয়া যাচ্ছে না। বরং তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, অনেকে অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু গুড় দিতে পারছি না।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২৫ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ১০৫-১১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। যা আগে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। যা ৭ দিন আগেও ১৫০ টাকা ছিল।
এদিকে গত কয়েকদিনে কিছু সবজির দাম অপরিবর্তিত থাকলেও কিছু সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০-২২০, করলা ৬০-৭০, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা, পটোল, ধুন্দল ও পেঁপে ৪০-৫০ টাকা। পাকা টমেটো ১৪০-১৫০, গাজর ১৫০, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, সোনালি ২৬০ থেকে ২৭০ এবং দেশি মুরগি বিক্র হচ্ছে ৫৪০ থেকে ৫৭০ টাকা। তবে কমেছে গরুর মাংসের দাম। ৭ দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা কমে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।