আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে গুমের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম ৭১-এর ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে গুমের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং শুরু করেছেন শেখ হাসিনা। বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল। এরা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না। শত শত সাংবাদিক চাকরিচ্যুত হলো। অনেক টিভিসহ পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। প্রত্যেকটা সংবাদপত্র এবং মিডিয়া হাউসকে তারা ভয়ভীতির সংস্কৃতির মধ্যে নিয়ে সেলফ সেন্সরশিপ এবং প্রেসার সেন্সরশিপ চালু করে দখল করে নিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সত্য কথা বলার জন্য কোটা আন্দোলন চলছিল। কিন্তু সে আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিল তৎকালীন নেতারা। সেগুলো যদি রিওয়াইন্ড করে শুনেন তাহলে বুঝতে পারবেন তাদের চিন্তা-ভাবনা কতটা সংকীর্ণ, কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং কতটা কর্তৃত্ববাদী ছিল। সেই আন্দোলনই আস্তে আস্তে জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। অনেকগুলো দফা থেকে একদফায় চলে এসেছিল। কারণ, জনগণ বুঝতে পেরেছিল তাদের (আওয়ামী লীগ) পতন ছাড়া একদফা, আটদফা বা নয়দফা কোনো কিছুই আর কাজ হবে না।’
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘১৭ বছর যাবত আওয়ামী দুঃশাসনের জগদ্দল পাথরের মতো যারা বুকে চেপে বসেছিল, অন্যায়, দুঃশাসন, নির্যাতনে নিষ্পেষিত হয়ে এদেশের মানুষ এবং এই সমাজ আজকে বিভাজিত। এই সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও সমাজকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হলে এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রত্যাশা অনেক থাকলেও এই সরকার শুধু প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে জনগণের সরকারের কাছে দায়িত্ব দেবে। কাজেই আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির মধ্যে একটু লাগাম টেনে ধরতে হবে। কোনো অবস্থাতেই এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা সঠিক হবে না। কারণ, প্রশাসনের সর্বস্তরে তাদের (আওয়ামী লীগ) লোক বহাল তবিয়তে বসে আছে। কিছু লোক সরেছে মাত্র। এদেরকে ক্লিন করতে হবে, সময়ও দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসরা শুধু বাংলাদেশে নয়, এই পৃথিবীতে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় এবং যার প্রতি মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস রয়েছে। এই বিশ্বাস করাকে খারাপভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব তার কার্যনির্বাহী কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে বিচক্ষণতার সঙ্গে এই প্রশাসন নির্দলীয়করণ হবে অর্থাৎ বৈষম্যবিরোধী নয়, বৈষম্যের শিকার মানুষগুলোকে তাদের অধিকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’
আন্দোলনে আহতদের নিয়ে পেশাজীবী এই নেতা বলেন, ‘এখনো হাসপাতালে শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা আহত হয়ে ভর্তি আছেন। কেউ হাত হারিয়েছেন, কেউ পা হারিয়েছেন, কেউ চোখ হারিয়েছেন। তাদের সুস্থতা তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার এবং আমরা সবাই মিলে পাশে দাঁড়াব- এই অঙ্গীকার আমাদের সবার থাকা উচিত। কারণ, তারা এই দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।’