প্রায় তিন দশক ধরে বিকল বৃটিশ আমলে তৈরী লালমনিরহাটে রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর টার্ন টেবিলটি। তাই ইঞ্জিন বা কোচ ঘোরানোর জন্য ঢাকায় যেতে হতো। এতে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হতো রেলওয়ের। দুটোই সাশ্রয়ের জন্য ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশনের সিক লাইন এলাকায় প্রস্তুত করা হয় নতুন একটি টার্ন টেবিল। উদ্বোধনের আগে কোচ বা ইঞ্জিন ঘোরানোর ভারবহনে অক্ষম বর্তমান টার্ন টেবিল উদ্বোধন নিয়ে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে বৃটিশ আমলে তৈরী লালমনিরহাটে রেলের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর টার্ন টেবিলটি বিকল হয়ে পড়লে ব্যবহার বন্ধ করে রেলওয়ে দপ্তর। এরপর থেকে লালমনিরহাট বিভাগের কোচ ও ইঞ্জিন ঘোরানোর জন্য কোচ ও ইঞ্জিনগুলো কয়েক মাস পর পর ঢাকায় নেয়া হতো। তাই লালমনিরহাট রেলওয়ে সিক লাইন এলাকায় টার্ন টেবিল নির্মানের উদ্যোগ নেয়। যা নির্মাণের জন্য রেলওয়ে দপ্তর ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। বরাদ্দ পেয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামানের (বাবু) নকশা ও প্রযুক্তিতে এ টার্ন টেবিলটি নির্মাণ কাজ শুরু করে আর শেষ হয় গত মার্চ মাসে। তবে উক্ত টার্ন টেবিল নির্মাণে কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের প্রকৌশলী তাসরুজ্জামানের (বাবু) নিজেই মুল ঠিকাদারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার অন্যতম সহযোগি ওই অফিসে কর্মরত উজ্জ্বল ও হিমেলকে দিয়ে ছয়-নয় ভুয়া ভাউচার তৈরি করে টার্ন টেবিল নির্মাণে ২৫ লাখ টাকা লোপাটের বিষয়টি ওই অফিসের একটি বিশস্ত সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
অপর একটি বিশস্ত সুত্র জানান, টার্ন টেবিল নির্মাণের স্থাপনাটির তিন ধাপে পাকা দেয়াল রয়েছে, যা সীমানা প্রাচীর, সুরক্ষা প্রাচীর ও লাইন দেয়াল নামে পরিচিত। এর মেঝে আরসিসি ঢালাই, পানি নিষ্কাশন, রোলার থ্রাস্ট বিয়ারিং, আটটি এক্সেল বিয়ারিং, এমএস লোহার তৈরি এইচবিম, অব্যবহৃত রেললাইন, ট্রেনের অব্যবহৃত চারটি চাকা, এমএস টপ প্লেট, চেকার প্লেট, বলস্টার প্লেট, এমএস অ্যাঙ্গেল ও জিআই পাইপের রেলিং টার্ন টেবিল নির্মাণে রেলওয়ের পূরাতন লৌহজাত নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার ছাড়া বাহির থেকে যেসব সামগ্রী কেনা হয়েছে তা অতি নিম্নমাণের। তারপরেও ভাউচার দেখানো হয়েছে দুই-তিন গুন বেশী টাকার। এতে বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের প্রকৌশলী তাসরুজ্জামানের (বাবু) মুল ঠিকাদার হলেও উজ্জ্বল ও হিমেলকে দিয়ে টার্ন টেবিলের নির্মাণ সামগ্রী কেনতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি আশ্রয় নিয়েছেন। এ টার্ন টেবিলটি নির্মাণ কাজ চলতি বছরের গত মার্চ মাসে শেষ হলেও বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা পরিদর্শনের এসে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ সেখানে ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানো দুরের কথা সাধারণ ট্রেনের বগি উঠিয়ে মবিল ও ১০/১৫ জন ঠেলেও ঘোরানো যাচ্ছে না। ফলে উদ্বোধনের আগে কোচ বা ইঞ্জিন ঘোরানোর ভারবহনে অক্ষম টার্ন টেবিলটি এপ্রিল মাসের শেষ দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার কথা থাকলেও এখন উদ্বোধন নিয়ে নানান সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামানের (বাবু) বলেন, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী এ টার্ন টেবিলের কার্যকারিতা সফলভাবে যাচাই করা হয়েছে। এটি বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম টার্ন টেবিল। ৩৫০ টন ওজনের ভার বহনে সক্ষম এ টার্ন টেবিলে ১৪ টন ওজনের একটি ব্রিজ রয়েছে। এর ওপরে ইঞ্জিন ও কোচ তুলে ঘোরানো হবে। টার্ন টেবিল নির্মাণে টেন্ডার প্রসঙ্গে বিভাগীয় রেলওয়ে দপ্তরের প্রকৌশলী আরো বলেন, আমাদের রেলওয়ের নিয়ম মেনে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয়েছে। কাজে কোন ধারণে অনিয়ম হয়নি। কাজ করেছেন ঠিকাদার, আমি শুধু দেখভাল করেছি। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে বলেন।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবদুস সালামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ব্যর্থ হয় এই প্রতিবেদক।