কোলাহলে ভরা শহরের মধ্যেই হঠাৎ বেশ ছিমছাম শান্তিপূর্ণ পুরনো দোচালা দুটো ঘর। কথা হচ্ছে বাংলাদেশের উত্তর ফটক পাবনার জোড়বাংলা মন্দিরের। পাবনা শহর থেকে একটু ভেতরেই, দক্ষিণ রাঘবপুর এলাকায় রয়েছে নজরকাড়া এই প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন। শহরের বাসস্ট্যান্ড থেকে ২০-২৫ মিনিটের দূরত্বেই আছে ঐতিহাসিক এই নিদর্শন। এটি ঠিক কীসের মন্দির বা আসলেও মন্দির কি না এ ব্যাপারে এখনো বেশ সন্দেহ রয়ে গেছে।
মন্দির নির্মাণের সময়ের যথাযথ কোনো শিলালিপি না পাওয়ায় মন্দিরটির ইতিহাস নিয়ে পুরোপুরি সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী জানা যায় আঠেরো শতকের মাঝামাঝি সময় এই মন্দিরটি গড়ে ওঠে। ব্রজমোহন ক্রোড়ী নামক মুর্শিদাবাদের নবাবের তহশীলদার এই মন্দিরটির নির্মাণকারী হিসেবে ধরা হয়। অনেকে বলে থাকেন মন্দিরটি অলৌকিকভাবে একরাতের ভেতর গড়ে ওঠে। আবার কেউ কেউ বলেন, পলাশির যুদ্ধে হেরে যাবার পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা পদ্মা ওরফে গঙ্গা পেরিয়ে এখানে পালিয়ে আসেন এবং কিছু সময় অজ্ঞাতবাসে কাটান। নবাবের লুকোবার ব্যবস্থা করার জন্যই তার তহশিলদার আগে থেকে এসে রাতারাতি এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
বর্তমানে এই প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীন। ইট দিয়ে তৈরি অনুচ্চ বেদীর ওপরের দোচালা এই মন্দিরটি টেরাকোটার এক অপূর্ব নিদর্শন। প্রবেশপথ ও সংলগ্ন স্তম্ভ ও দেওয়ালে একসময় প্রচুর পোরামাটির চিত্রফলক আঁকা ছিলো। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে সেসবের বেশ অনেকটাই ক্ষতি হয়। যদিও বর্তমানে মন্দির সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। পশ্চিমমুখী এই মন্দিরের সামনে রয়েছে একটি বারান্দা এবং তাতে দুটি স্তম্ভের সাহায্যে প্রবেশপথ রয়েছে ৩টি। গ্রাম বাংলার দোচালা ঘরের আদোলে তৈরি এই মন্দিরে দুটি কক্ষের সামনেরটি মণ্ডপ এবং অপরটি গর্ভগৃহ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর মন্দিরের পেছন অংশে রয়েছে মন্দির থেকে বেরোনোর রাস্তা। পুরো মন্দিরটির দেওয়াল জুড়ে ছিলো রামায়ণ-মহাভারত সহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। সত্যিই দু-বাংলা মিলিয়ে বঙ্গ প্রদেশে নিদর্শনের শেষ নেই।