জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট দেশের ৬ কোটি শ্রমিকের নিত্যদিনের অভাব-অনটন আরও বাড়াবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে এসব মন্তব্য করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।
তিনি বলেন, জাতীয় বাজেটে শ্রমিক উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ এবং শ্রমিকদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু না করার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ সময় শ্রমিকদের জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান তারা।
লিখিত বক্তৃতায় অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা ৬ কোটি শ্রমিকের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।
শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সরকারের অর্থ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে এবং জাতীয় সংসদে ৮ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। সরকার শ্রমিকদের নাগরিক হিসেবে গণ্য করে না এবং ক্ষমতার রাজনীতির জন্য তাদের শুধুমাত্র ভোটার হিসেবে ব্যবহার করে। এই বাজেট ৬ কোটি শ্রমিকের অভাব-অনটন আরও বাড়াবে এবং তাদেরকে আরও দরিদ্র করে তুলবে। এই বাজেটে শ্রমিকদের প্রতি অবিচার হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে এবং সকল শ্রমিক সংগঠন, গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক শক্তি শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, জিডিপির উন্নয়নের সূচক ৫.৭ শতাংশ এবং মাথাপিছু আয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ পোশাক শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড ৫ জন শ্রমিক পরিবারের জন্য ১২,৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে, যা একজন শ্রমিকের মাসিক আয় মাত্র ২৫০০ টাকা দাঁড়ায়। এই বৈষম্যমূলক আয় নির্ধারণ শ্রমিকদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।
মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের নিজস্ব আবাসন নেই এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সম্পদ ও খাদ্য বৈষম্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বাসা ভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে শ্রমিক পরিবারগুলো দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে।
সরকারি ১৪ লাখ কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বেতন-ভাতার বরাদ্দ ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। অথচ শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর কোনো পদক্ষেপ নেই। গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ৩০ কেজি চাল, ২০ কেজি আটা, ৫ কেজি চিনি, ৫ লিটার তেল রেশনিং চালু করলে বছরে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
এছাড়া আগামী ২৫ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি শিল্প অঞ্চলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ, গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক টিইউস’র আইন বিষয়ক সম্পাদক কেএম মিন্টু, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এফএম আবু সাঈদ, টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন প্রমুখ।