প্রতারক মমতাজ বেগম ও মুজিবুর রহমান এর দ্বারা প্রতারণার স্বীকার ভুক্তভোগী ভিকটিম মুঞ্জুর আলম এসএসসি পাস করার পর থেকে চাকুরির জন্য চেষ্টা করে আসছিল। গত ২০২১ সালে তার ভাগিনীর বিয়েতে মমতাজ বেগম এর সাথে ভিকটিমের পরিচয় হয়। উক্ত পরিচয়ের সূত্র ধরে তিনি জানতে পারেন মমতাজ বেগম ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন, এনএসআই (যা আসলে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) এর উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছে। মমতাজ বেগম ভিকটিম মুঞ্জুর আলমকে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার পদে চাকুরী লাভের প্রলোভন দেখায়। উক্ত প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে চাকুরী প্রত্যাশী মুঞ্জুর আলমকে মমতাজ বেগম ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার পদে চাকুরী দিবে মর্মে আশ্বস্ত করে। ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে এনএসআই এর ফিল্ড অফিসার পদে চাকুরী লাভের বিষয়টি ভিকটিম মুঞ্জুর আলম অপর চাকুরী প্রত্যাশী তার বোন জামাই, মামা এবং বন্ধুকে জানালে তারা সকলে চাকুরীর জন্য মমতাজ বেগমের বাড়িতে যায় এবং মমতাজ বেগমের স্বামী মুজিবুর রহমান তাদের সবাইকে চাকুরী দিতে পারবে বলে পুনরায় আশ্বস্ত করে। উক্ত আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে গত ২২ নভেম্বর ২০২১ তারিখে চাকুরী প্রত্যাশী ভিকটিম মুঞ্জুর আলম ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তার মামা একরাম হোসেন ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, তার বন্ধু নয়ন ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা এবং তার বোন জামাই ১২ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ৩৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা মমতাজ বেগমকে প্রদান করে। উক্ত টাকার সিকিউরিটি হিসেবে ষ্ট্যাম্পে প্রতারকরা লিখিত অঙ্গীকারনামা প্রদান করে এবং বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার ০৫ টি চেক প্রদান করে। দীর্ঘ ০২ বছর ০৬ মাস পর এনএসআই এর সার্কুলার হলেও মমতাজ বেগম তাদেরকে চাকুরী দিতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে খোঁজ খবর নিয়ে তারা জানতে পারে যে মমতাজ বেগম ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন, এনএসআই (যা আসলে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) এর উপ-পরিচালক পদে কখনোই চাকুরী করেনি এবং সে সরকারি কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগী ভিকটিমদের নিকট হতে অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে ৩৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে চাকুরী প্রত্যাশীরা টাকা ফেরত চাইলে মমতাজ বেগম ও তার স্বামী তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় এবং বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করে।
পরবর্তীতে ভিকটিম এবং অন্যান্য চাকুরী প্রত্যাশীরা র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত আবেদন দাখিল করেন। উক্ত আবেদনের বিষয়টি অধিনায়ক, র্যাব-৭, চট্টগ্রাম মানবিকতার সহিত আমলে নিয়ে উল্লেখিত ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরকে সনাক্তকরণ ও গ্রেফতারের জন্য ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী এবং ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখতে নির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় র্যাবের সাথে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)ও উক্ত প্রতারক চক্রকে ধরতে মাঠে নামে। এরই প্রেক্ষিতে গত ২২ মে ২০২৪ ইং তারিখ আনুমানিক ১৮২০ ঘটিকায় চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানাধীন প্রেমতলা কলেজ রোড এলাকায় আসামির বসতবাড়িতে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে আসামি ১। মমতাজ বেগম (৩৪), স্বামী-মোঃ মুজিবুর রহমান, সাং-কাজীমুদ্দিন মিস্ত্রিবাড়ী, থানা-সীতাকুন্ড, জেলা-চট্টগ্রাম’’কে আটক করা সম্ভব হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামির দেয়া স্বীকারোক্তিমতে তার হেফাজতে থাকা তার শোবার ঘরের খাটের নীচে বিশেষ কৌশলে রক্ষিত আসামির নিজ হাতে বের করে দেয়া মতে ০৫টি বায়ুরোধক পলিপ্যাক হতে সর্বমোট ৯৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারপূর্বক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময়ে তার বসত ঘর তল্লাশি করে আসামীর প্রতারণার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ডকুমেন্টও জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে মমতাজ বেগমের দেয়া তথ্য মতে র্যাব ও এনএসআই এর যৌথ আভিযানিক দল একই তারিখ ২০৪৫ ঘটিকায় অভিযান পরিচালনা করে মমতাজ বেগমের অপরাধের সহযোগী তার স্বামী আসামি ২। মোঃ মুজিবুর রহমান (৪৬), পিতা-সামছুরজ্জামান, সাং-কাজীমুদ্দিন মিস্ত্রিবাড়ী, থানা-সীতাকুন্ড, জেলা-চট্টগ্রাম’কে সীতাকুণ্ড থানা এলাকার মাহমুদাবাদ দীঘির পাড় এলাকাস্থ তার বসতবাড়ি থেকে আটক করতে সক্ষম হয়। আটককৃত আসামি মুজিবুর রহমান স্বীকার করে, সে তার স্ত্রী মমতাজ বেগমকে এনএসআইয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে পরস্পর যোগসাজশে চাকুরী প্রার্থীদের চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন লোকজনদের নিকট হতে টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করে আসছে। এছাড়া মমতাজ বেগম দীর্ঘদিন যাবৎ মাদকদ্রব্য ইয়াবা ট্যাবলেট বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রয় করে আসছিল মর্মে স্বীকার করে। উভয় আসামিকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সর্বাত্মকভাবে র্যাবের আভিযানিক দলকে সহায়তা করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদ্বয় এবং উদ্ধারকৃত মাদক ও অন্যান্য আলামত সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে আসামিদ্বয়কে চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।