পবিত্র রমজান মাস মসলিম উম্মাহর কাছে খুবই ফজিলত পূর্ণ মাস। এই মাসে ফরজ রোজা সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সুন্নত ইবাদত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিদিন রাতের তারাবি নামাজ।
তারাবি নামাজ কী?
রমজানে রাত্রিকালে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়। তারাবির নামাজের সময় হলো- এশার নামাজের পর থেকে ফজরের নামাজের আগ পর্যন্ত।
তারাবি নামাজের বিধান
তারাবি নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অপারগতা ছাড়া তা পরিত্যাগকারী গুনাহগার হবে। পুরুষদের জন্য মসজিদে জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করা সুন্নত। নারীদের জন্যও ২০ রাকাত তারাবি সুন্নত।তারাবি-সেহরিতে যেভাবে রমজানকে স্বাগত জানাল মুসলিম বিশ্ব
তারাবি নামাজের ফজিলতের বিষয়টি হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমজান অর্থাৎ তারাবির নামাজ আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস, ১৮৭৯)
ওমর রা.-এর যুগে তারাবি
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রা.-এর সময়কালে তারাবির নামাজ সম্পর্কে আবদুর রাহমান ইবনু আবদ আল-ক্বারী রহ.বলেন-
আমি রমজানের এক রাতে ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর সাথে মসজিদে নাববীতে গিয়ে দেখি যে, লোকেরা এলোমেলোভাবে জামাতে বিভক্ত। কেউ একাকি নামাজ আদায় করছে আবার কোন ব্যক্তি নামাজ আদায় করছে এবং ইকতেদা করে একদল লোক নামাজ আদায় করছে।
ওমর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন কারীর (ইমামের) পিছনে একত্রিত করে দেই, তবে তা উত্তম হবে। এরপর তিনি উবাই ইবনু কাব রা.-এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন।
এরপর আরেকদিন রাতে আমি ওমর রা.-এর সঙ্গে বের হলাম। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে নামাজ আদায় করছিল।
ওমরা বললেন, কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ওই অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা নামাজ আদায় কর…(বুখারি, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস, ১৮৮০)
তারাবির নামাজে গুরুত্ব দেবেন যে কারণে
রমজান মাসের পুরোটা সময় বরকতপূর্ণ ও ইবাদতের জন্য নির্ধারিত। এ মাসে যেকোনো ইবাদত করা হলে তার সওয়াব বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নফল আদায়ে ফরজের সমতুল্য সওয়াব দেওয়া হয় এবং ফরজ আদায় করলে কয়েকগুণ বেশি সওয়াব দেওয়া হয়।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে একটি নফল আমল করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি নফল আদায় করল।’ (মিশকাত, হাদিস, ১৮৬৮)
হাদিসের ফজিলতের আলোকে বলা যেতে পারে রমজানে তারাবি নামাজের সওয়াবও এই হিসেবে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, তারাবি নামাজ আদায়কারীকে ফরজের সওয়াব প্রদান করা হবে।
সাধারণত, পুরো বছর আমল ইবাদতের সুযোগ হয়ে উঠে না। রমজান উপলক্ষে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের কাজ কমিয়ে দেন। এছাড়াও অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে কাজের চাপ কমিয়ে ফেলেন। এই সুযোগ আমলের প্রতি কিছুটা বাড়তি মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে। এতে করে রমজানের পবিত্রতা আদায়ের পাশাপাশি নিজের আমলের পাল্লা কিছুটা ভারি হয়ে উঠবে। পরকালে আল্লাহর তায়ালা সামনে হিসেব দেওয়া কিছুটা সহজ হবে।