বিরাট কোহলি আবারও প্রমাণ করলেন কেন তাকে সময়ের সেরা ক্রিকেটার বলা হয়। দল যখন ধুঁকছিল তখনও একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরিও পেয়েছিলেন। এই ম্যাচেও পেতে পারতেন। মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন কোহলি।
দলের জয়ের জন্য যখন ৫ রান দরকার ছিল তখন কোহলিরও সেঞ্চুরি হতে ৫ রানের প্রয়োজন। ম্যাট হেনরিকে ছয় মারতে গিয়েই ফিলিপসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। শচিন টেন্ডুলকারের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড একটুর জন্য ছোঁয়া হলো না তার।
কিন্তু সেঞ্চুরি না পেলেও দলকে অসাধারণ এক জয় এনে দিতে পেরেই বেশি খুশি কোহলি। কোহলি ও জাদেজার দারুণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে নিউজিল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জয় পেল ভারত।
২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত সূচনা পায় স্বাগতিক ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ডিপ এক্সট্রা কাভার দিয়ে ট্রেন্ট বোল্টকে চার মারেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তার এমন মারকুটে ব্যাটিং চলমান থাকে ইনিংসের ১১ ওভার পর্যন্ত।
১২তম ওভারের প্রথম বলেই ভারত শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন লকি ফার্গুসন। রোহিতকে বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরান এই ডান হাতি পেসার। এই সময়ে ৪০ বলে ৪৬ রান তুলে নেন রোহিত। এর মাঝে একটি মাইলফলকেও পৌঁছে যান রোহিত শর্মা।
এবি ডি ভিলিয়ার্সকে টপকে বিশ্বকাপে ছক্কা হাকানো ব্যাটসম্যানদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসেন তিনি। ৪৯টি ছক্কা মেরে তালিকায় সবার ওপরে গেইল।
রোহিত শর্মার আউটের পর টিকতে পারেননি অপর ওপেনার শুভমান গিলও। মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে তাকেও আউট করেন ফার্গুসন। ৩১ বলে ২৬ রান করেন গিল। এই ইনিংসের মাধ্যমে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম ৩৮ ইনিংসে দুই হাজার রান করার রেকর্ড গড়েন গিল।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে ভারত। কিন্তু তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৯ বলে ৫২ রান তুলে দলকে প্রাথমিক বিপর্যয় থেকে উৎরাতে সাহায্য করেন শ্রেয়াস আইয়ার ও বিরাট কোহলি। কোহলির তুলনায় আইয়ার ছিলেন মারকুটে।
২৯ বলে ৩৩ রান করে ট্রেন্ট বোল্টের বলে যখন আইয়ার আউট হন তখন দলের রান ২২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১২৮। ওভারপ্রতি রান তোলার দিকে ভারত বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে ছিল।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে আবারো অর্ধশত রানের জুটি গড়েন বিরাট কোহলি। এবার তার সঙ্গী লোকেশ রাহুল। ৫৪ রানের সেই জুটি সান্টনার। ৩৩তম ওভারের প্রথম বলে সামনে এগিয়ে খেলতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। আম্পায়ার আউট না দিলেও কিউইরা রিভিউ নিলে পরবর্তীতে আউটের সিদ্ধান্ত দেন।
রাহুলের আউটের ওভারেই নিজের ৬৯তম ওয়ানডে অর্ধশতক পূরণ করেন বিরাট কোহলি। পান্ডিয়ার বদলে দলে সুযোগ পাওয়া সুর্যকুমার যাদব ঠিক পরের ওভারেই রানআউটের শিকার হলে ১৯১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপদে পড়ে ভারত। একপ্রান্তে আগলে রেখে কোহলিই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
তবে যাদবের আউটের পর আর তেমন বিপদে পড়তে হয়নি ভারতকে। রবীন্দ্র জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে ঠিকই দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে মাঠ ছাড়েন বিরাট কোহলি। তার সময়োপযোগী ইনিংসের কারণেই ২ ওভার বাকি থাকতেই ভারত পেল অসাধারণ এক জয়।
বিরাট কোহলি ৯৫ রানে আউট হন। রবীন্দ্র জাদেজা ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন। কিউইদের পক্ষে ফার্গুসন ২টি, সান্টনার, ম্যাট হেনরি ও বোল্ট ১টি করে উইকেট পান।
ধর্মশালায় গুরুত্বপূর্ণ এই লড়াইয়ে টস জিতে ভারত। প্রথমে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। পুরো ৫০ ওভার খেললেও নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়েছে ২৭৩ রানে। অর্থাৎ জিততে হলে ভারতকে করতে হবে ২৭৪।
অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করে শুরুতেই কিউইদের চেপে ধরেন ভারতীয় বোলাররা। ১৯ রানের মধ্যে ২ উইকেট তুলে নেয় তারা।
মোহাম্মদ সিরাজের বলে ডেভন কনওয়ে শূন্য রানেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ২৭ বলে ১৭ করা উইল ইয়ংককে বোল্ড করেন মোহাম্মদ শামি।
তবে শুরুর সেই বিপদ দারুণভাবে কাটিয়ে ওঠেন রাচিন রাবিন্দ্র আর ড্যারেল মিচেল। ১৫২ বলে ১৫৯ রানের মারকুটে জুটি গড়েন তারা। অবশেষে ৩৪তম ওভারে এই জুটি ভেঙে স্বাগতিক শিবিরে স্বস্তি ফেরালেন মোহাম্মদ শামি।
শামির অফকাটারের লোভে পড়ে লংঅনে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন রাবিন্দ্র। শুভমান গিল নেন সহজ ক্যাচ। ৮৭ বলে ৬ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৭৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন রাবিন্দ্র।
এরপর টম লাথাম বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। কিউই অধিনায়ককে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন কুলদ্বীপ যাদব। ৭ বলে ৫ করেন লাথাম।
তবে দেখেশুনে খেলে ১০০ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন ড্যারেল মিচেল। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি ইনিংস। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে একটি প্রান্ত ধরে ছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
শেষ পর্যন্ত ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে তিনি হন শামির শিকার। ১২৭ বলে ১৩০ রানের ইনিংসে ৯টি বাউন্ডারি আর ৫টি ছক্কা হাঁকান মিচেল। শামি ৫৪ রান খরচায় নেন ৫টি উইকেট। ২টি উইকেট শিকার কুলদ্বীপ যাদবের।