ঢাকা: আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ও সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণাকে এখনই গুরুত্ব দিচ্ছে না সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে দলটির তৎপরতা ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি রাখছে সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের পদত্যাগের একা দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে চূড়ান্ত আন্দোলনের কথা বলছে দলটি। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। সেই মুহূর্তে এই মহাসমাবেশ থেকেই বিএনপি ঢাকায় লাগাতার অবস্থান নেওয়া বা অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে পারে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দলটির নেতাকর্মীদের গতিবিধি ও তৎপরতা পর্যবেক্ষণে রেখেছে সরকার ও আওয়ামী লীগ।
সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, এক দফা আন্দোলন নিয়ে বিএনপি আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এ কারণেই একের পর এক আল্টিমেটাম দিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনকে যেভাবে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে দলটির, তাদের সেই শক্তি-সামর্থ্য নেই। তবে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত অতীতের মতো সহিংসতা, সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করতে পারে বলে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের আশঙ্কা রয়েছে।
এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ও দলের নেতাকর্মীরা কঠোর অবস্থানে থাকবে। পাশাপাশি বিএনপির গতিবিধি কি হবে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির কোনো পরিকল্পনা আছে কি না সে দিকেও লক্ষ্য রাখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। কারও দিক থেকে সন্দেহজনক কোনো তৎপরতার তথ্য পাওয়া পেলে তার বিরুদ্ধেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে বলে সূত্রগুলো জানায়।
এদিকে সরকারের ও আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও ইতোমধ্যেই ২৮ আন্দোলন সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও রাজপথে অবস্থান নেবে জানিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপিকে রাস্তায় নামতেই দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি যত কথাই বলুক বাস্তবে কিছু করতে পারবে না। আর ২৮ অক্টোবর আমরাও মাঠে থাকব, যখন যে ব্যবস্থা নেওয়ার তখন সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির এটাই প্রথম না, তারা অনেক বার আল্টিমেটাম দিয়েছে। এটাকে সরকার খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে না। তবে আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন যে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১৯ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত আন্দোলন করছে ঠিক আছে। কিন্তু আন্দোলনের নামে মানুষের জানমালের ক্ষতি করলে, অগ্নিসন্ত্রাস করলে যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সে ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে আমি তাদের বলে দিয়েছি।
এদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জনের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত দলটি নির্বাচনে আসবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের অনেকেই মনে করেন। তাদের মতে, বিএনপি আন্দোলনকে যেভাবে সফল করার চিন্তা করছে, তারা সেটা করতে পারবে না। সরকারের বিরুদ্ধে যতই আল্টিমেটাম দেওয়া হোক, এই আন্দোলন শেষ মুহূর্তে ব্যর্থ হবে। শুধু তাই নয়, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনেও আসতে পারে বলে তারা জানান।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, লাগাতার অবস্থানে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি বিএনপির নেই। তবে আন্দোলন, অবরোধ যাই বলুক শেষ পর্যন্ত বিএনপি ব্যর্থ হয়ে নির্বাচনে আসবে। না এসে উপায় কি, দল ভেঙে যাবে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি নিজেই এখন আল্টিমেটামের মধ্যে পড়ে গেছে। সব সময় দেখা যায়, সরকারে যারা থাকে তাদের পতন হওয়ার বিষয় থাকে। কিন্তু বিরোধী দলের পতন হয় এটা বাংলাদেশেই প্রথম দেখা যাচ্ছে। বিএনপির আল্টিমেটাম রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি ছাড়া কিছুই না।