বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের পরই সম্ভাবনা কমে গিয়েছিল অনেকটা। তবুও বোলাররা লড়লেন তাদের সবটুকু দিয়ে।
কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না তাদের। দুটি রিভিউ ‘ক্লোজ কল’ হয়ে গেলো বিপক্ষে। শেষ অবধি লড়েও বোলাররা অবশ্য নিতে পারলেন না তিনটির বেশি উইকেট। হতাশার ব্যাটিংয়ের পর দারুণ বোলিংয়েও হলো না ভাবনার বাইরের কিছু।
বুধবার লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ১৯৩ রানে অলআউট হয়ে যায় তারা। জবাব দিতে নেমে ৬৩ বল হাতে রেখেই জয় পায় পাকিস্তান।
ছোট লক্ষ্যে খেলতে নেমে সাবধানী শুরু করে পাকিস্তান। সুইংয়ের দারুণ ব্যবহারে দুর্দান্ত বল করেন শরিফুল ইসলাম। যদিও উইকেটের দেখা মিলছিল না। ইনিংসের নবম ওভারে গিয়ে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ, সেটিও এনে দেন শরিফুলই। তার বলে আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে ২০ রান করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তিনি।
এরপর বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয়। শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদের বলে অল্পের জন্য আউটসাইড লেগ হওয়ায় দুটি এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়, শেষ হয়ে যায় রিভিউও। দুবারই বাঁচেন ইমাম উল হক। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজের বলে তাকে আউট দেন আম্পায়ার। কিন্তু এবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ইমাম।
শেষে অবশ্য উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ, তবে সাজঘরে ফেরেন বাবর আজম। ২২ বলে ১৭ রান করা বাবর আজমকে বোল্ড করেন তাসকিন আহমেদ। তিনি তার পুরো স্পেলজুড়েই করেন দুর্দান্ত বোলিং। কিন্তু ইমাম-উল-হকের উইকেট যতক্ষণে যায়, ততক্ষণে ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের।
৩৩তম ওভারের পঞ্চম বলে গিয়ে আউট হন ইমাম। তখন পাকিস্তানের রান ১৫৯। ৮৪ বলে ৭৮ রান করা ইমামকে বোল্ড করেন মিরাজ। দলকে বাকি পথ টেনে নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও আগা সালমান। ৭৯ বলে ৬৩ রান করে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের হতাশার শুরু হয় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই। আগের ম্যাচে মেক শিফট ওপেনার হয়ে খেলতে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ হাঁকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। তাকে এ ম্যাচেও নামানো হয়েছিল উদ্বোধনী ব্যাটার হিসেবে। কিন্তু নাঈম শেখ প্রথম ওভার মেডেন দেওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে এসে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আউট হয়ে যান মিরাজ। প্যাডে আসা বল স্কয়ার লেগে অপ্রত্যাশিতভাবে ক্যাচ দেন তিনি।
জ্বরের কারণে আগের দুই ম্যাচে না থাকা লিটন দাস একাদশে ফেরেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর জায়গায়। উইকেটে এসে দারুণ কিছু শটও খেলেন তিনি। কিন্তু পা দেন শাহিন শাহ আফ্রিদির ফাঁদে। কয়েকটি বল ব্যাটে খেলিয়ে, স্লোয়ার দিয়ে, হুট করেই জোরের ওপর বাউন্সার করেন তিনি। সেটি বুঝতে না পারা লিটনের ব্যাটের কানায় বল লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে। আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতে ৪ চারে ১৩ বলে ১৬ রান করে।
নাঈম শেখও কিছু শটে আত্মবিশ্বাসের ছাপ রাখছিলেন। কিন্তু এই ব্যাটারও বড় করতে পারেননি ইনিংস। ৪ চারে ২৫ বলে ২০ রান করে হারিস রউফের বলে পুল করতে যান তিনি। টাইমিং ঠিকঠাক মতো হয়নি, নিজেই সহজ ক্যাচ নেন রউফ। এরপর হারিস রউফের গতিতে পরাস্ত হন তাওহীদ হৃদয়ও। ৯ বলে ২ রান করে তিনি হয়ে যান বোল্ড।
পাওয়ার প্লের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে ধীরে ধীরে টেনে তোলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। দুজনই দারুণভাবে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। আশাও বাড়ছিল বড় রানের। এর মধ্যে জুটির একশর সঙ্গে সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়। কিন্তু এরপরই যেন বিভ্রান্ত হয়ে যান সাকিব। তার পেটের কাছে থাকা বলে পুল করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন তিনি। ফাহিম আশরাফের বলে আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৫৩ রান করেন সাকিব।
দলের বিপদ এরপর কেবল বেড়েছেই। শামীম পাটোয়ারীকে সাত নম্বরে পাঠানো হয়। তিনি একটি দৃষ্টিনন্দন ছক্কাও হাঁকান। কিন্তু ইফতেখার আহমেদের বলে ২৩ বলে ১৬ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। মুশফিকুর রহিমও তিলে তিলে তৈরি করা ইনিংসের শেষটা করতে পারেননি ঠিকভাবে।
৫ চারে ৮৭ বলে ৬৪ রান করে মুশফিক রউফের বলে মারতে গিয়ে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দেন। আট ব্যাটার নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার ছিলেন আফিফ হোসেন। কিন্তু তিনি নাসিম শাহের শট বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১১ বলে ১২ রান করেন। বাংলাদেশের টেল গুটাতে এরপর আর সময় নেয়নি। হারিস রউফ চার, নাসিম শাহ তিন ও শাহিন শাহ আফ্রিদি নেন এক উইকেট।