২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শনিবার (২৯ অক্টোবর) থেকে আবার বাজারে এসেছে ইলিশ মাছ। প্রথম দিন থেকেই প্রচুর পরিমাণ ইলিশ বাজারে আসবে। তবে দাম ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বিক্রেতারা বলছেন, কেবল ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে, তাই এখনও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ইলিশের দাম বাড়বে না কমবে সেটা বুঝতে আরও দুই-একদিন সময় লাগবে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে প্রচুর ইলিশ থাকলেও দাম কমেনি। নিষেধাজ্ঞার আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
রোববার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার দ্বিতীয় দিনে বাজারে প্রচুর ইলিশের সরবরাহ আছে। ক্রেতাদের ধারণা ছিল, ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার পর বাজারে হয়ত দাম কম থাকবে। কিন্তু সেই তুলনায় দাম না কমে আগের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন আকৃতির ইলিশগুলো।
বাজারে এক কেজির চেয়ে কম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়, এর চেয়ে কিছুটা ছোট ইলিশ প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেড় কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের বড় ইলিশ ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ইলিশ ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময়ের ওপর গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে ২৮ অক্টোবর (শুক্রবার)। সেদিন মধ্যরাত থেকেই মাছ ধরা শুরু হয়। শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল থেকেই বাজারে আসতে শুরু করে ইলিশ। সেই হিসেবে নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশ বিক্রির আজ দ্বিতীয় দিন।
জানা গেছে, আশ্বিনের অমাবস্যার পর থেকে পূর্ণিমার শুরু পর্যন্ত সময়ে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য উপযুক্ত হয়। ইলিশের এই প্রধান প্রজনন মৌসুমে প্রতি বছর নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ থাকে। এ বছরও নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনের বিরতির পর ইলিশ শিকার শুরু করেছে জেলেরা। এ অবস্থায় ইলিশ ধরা পড়ার স্থানগুলো থেকে জানা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা শেষে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে।
কিন্তু সেই প্রভাব রাজধানীর বাজারগুলোতে পড়েনি। ফলে আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় স্থানীয় মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞার দ্বিতীয় দিনে বাজারে ইলিশের সরবরাহ প্রচুর। কিন্তু সেই তুলনায় দাম বেশি। এমনটাই দাবি করেন বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, খবরে শুনেছি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। তাই ভেবেছিলাম বাজারে হয়ত নতুন ইলিশ তুলনামূলক কম দামে পাওয়া যাবে। কিন্তু এসে দেখি উল্টো চিত্র, আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। দাম এখনও কমেনি, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১১০০ টাকায়।
তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার আগেও একই রকম ছিল দাম। ছোট বড় মাঝারি— কোনো ধরনের ইলিশের দামই কমেনি। তবে বাজারে প্রায় সব দোকানেই ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রচুর সরবরাহ আছে, শুধু দামটাই বেশিরাজধানীর গুলশান সংলগ্ন একটি মাছের বাজারে নিয়মিত ইলিশ মাছ বিক্রি করেন শাহিনুর রহমান। তিনি বলেন, বাজারে প্রচুর ইলিশের সরবরাহ আছে এটা ঠিক। কিন্তু সেই তুলনায় দাম কমেনি।
ঝাঁকে ঝাঁকে নদীতে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে এটা আমরাও শুনেছি। কিন্তু পাইকারি বাজারে ইলিশ কিনতে গিয়ে দেখলাম আগের দামেই আড়তে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে।যেহেতু দীর্ঘদিন পর বাজারে ইলিশ উঠেছে, তাই ভাবলাম ক্রেতাদের চাহিদা থাকবে। সে কারণে ইলিশ এনেছি। বিক্রেতারা সবাই কিছু কিছু করে ইলিশ এনেছে। কিন্তু সেভাবে দাম না কমায় চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ইলিশের দাম কমবে না কি আরও বাড়বে সেটা বুঝতে আরও দুই-একদিন সময় লাগবে। তাছাড়া অনেক ব্যবসায়ীর ফ্রিজে ইলিশ ছিল, সেগুলো এখন বাজারে ছেড়েছে। নতুন ইলিশের বাজার বুঝতে আরও দুই-চারদিন সময় লাগবে। এসময়ের পর দাম কমতেও পারে ইলিশের।