সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে লংমার্চের কথা জানিয়েছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান। তবে সেই কর্মসূচির চূড়ান্ত তারিখ এখনও ঘোষণা করেননি তিনি।
তবে তারিখ ঘোষণা না হলেও পাকিস্তানের রাজনীতি এখন উত্তপ্ত এবং এই পরিস্থিতিতেও দেশটিতে চলছে পর্দার আড়ালের রাজনীতি, হচ্ছে পর্দার আড়ালে নানা সংলাপও। এতে ভূমিকা রাখছেন স্বয়ং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি। আর এতেই আপাতত অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ইমরান খানের সম্ভাব্য সেই লংমার্চ।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন। এতে বলা হয়েছে, ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রকাশ্যে এমন একটি বিষয় স্বীকার করেছে যা এতদিন পর্যন্ত গোপন ছিল।
আর তা হচ্ছে- পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফের জোট সরকারের সঙ্গে পর্দার পেছনের আলোচনায় নিযুক্ত আছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। মূলত ইমরানের দল পিটিআইয়ের পক্ষ থেকেই সেই আলোচনা চালাচ্ছেন তিনি। তবে এর মধ্যেও রাজধানী ইসলামাবাদে ‘চূড়ান্ত’ লংমার্চের জন্য কার্যত চাপ বাড়াচ্ছেন পার্টি প্রধান ইমরান খান।
পিটিআইয়ের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা ও পাকিস্তানের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী সংবাদমাধ্যম ডনকে বলেছেন, নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সাথে আলোচনা চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে কোন পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট (আরিফ আলভি) সাহেব আলোচনা করছেন’।
অবশ্য প্রেসিডেন্ট আলভি পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য পর্দার পেছনে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে আগেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী বলছেন, সরকার যদি আগাম নির্বাচন করতে রাজি হয় তবে (সরকারের সাথে) আনুষ্ঠানিক সংলাপে বসতে প্রস্তুত পিটিআই। তার ভাষায়, ‘যদি তারা (সরকার) আগাম নির্বাচন করতে রাজি হয়, তাহলে আমরা তাদের সাথে বসতে পারি।’
এক প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী বলেন, চলতি অক্টোবর মাসে ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদে পিটিআইয়ের লংমার্চ অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা তিনি নিশ্চিত নন। অবশ্য তার এই বক্তব্য তার দলের প্রধান ইমরান খানের বক্তব্যের বিপরীত। কারণ ইমরান খান আগেই বলেছিলেন যে, লংমার্চ স্থগিত করে অক্টোবরের পরে অনুষ্ঠিত হবে না।
অবশ্য লংমার্চের জন্য ইমরানের প্রস্তুতি থেমে নেই। দ্য ডন বলছে, পাকিস্তানের সাবেক এই প্রথানমন্ত্রী একদিন আগেই মুরি, চকওয়াল, তালাগাং, হরিপুর, অ্যাবোটাবাদ এবং মানসেরার দলীয় আইনপ্রণেতাদের সাথে দেখা করেন এবং আসন্ন লংমার্চের জন্য তাদেরকে বিশেষ নির্দেশনা দেন।
বৈঠকে উপস্থিত সংসদ সদস্য ও আমন্ত্রিতরা স্থানীয় পর্যায়ে লংমার্চের প্রস্তুতি সম্পর্কে ইমরান খানকে অবহিত করেন বলেও পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় এই পত্রিকাটি জানিয়েছে।
এছাড়া একইদিন ইমরান খান সিনেটের ডেপুটি চেয়ারম্যান মির্জা মুহাম্মদ আফ্রিদির সঙ্গেও দেখা করেন। তিনি পিটিআই সিনেটর আজম স্বাতীর গ্রেপ্তার এবং পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগকে ‘লজ্জাজনক’ বলেও অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে আসছেন ইমরান খান। এসব সমাবেশে তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বলে অভিযোগ করে আসছেন। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে উত্তাপ বিরাজ করছে।
মূলত, আগামী বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের আগেই আগাম নির্বাচনের দাবিতে দেশজুড়ে সমাবেশ করছেন ইমরান খান। তার এসব সমাবেশ ঘিরে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। ইমরান খান বলছেন, তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পড়েছে সরকার।
মূলত পাকিস্তানে আগাম নির্বাচনের দাবিতে বর্তমান জোট সরকারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন জোরদারের চেষ্টা করছে পিটিআই।