দেবিদ্বারে কন্যার শ্বশুর বাড়ির ৪ জন অতিথির আপ্যায়নের খরচ জোগাতে না পারায় পারিবারিক কলহে গিয়াস উদ্দিন (৬০) নামের এক দিন মজুরের গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে বুধবার দিবাগত রাতে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউসুফপুর গ্রামের মিলন মুহুরীর বাড়িতে। সে ওই গ্রামের বিলাত হোসেন এর পুত্র।
প্রত্যক্ষদর্শি নিহতের ছোট ভাই কাইয়ুম মিয়ার স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার জানান, গত শুক্রবার তার ভাসুর গিয়াস উদ্দিনের ছোট মেয়ে স্থানীয় মাদ্রাসায় নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া রিয়া মনির সাথে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দিঘীরপার গ্রামের সৌদী প্রবাসী ইকবাল হোসেন এর মোবাইল ফোনে বিয়ে হয়।
গতকাল ২৫ আগষ্ট (বৃহস্পতিবার) রিয়া মনিকে (নববধূকে) তুলে নিতে তার শ্বশুর বাড়ির ৪ জন অতিথি আসার কথা ছিল। এ নিয়ে বুধবার বিকেলে অতিথিদের আপ্যায়নে বাজার সদাই কিভাবে করবে তা নিয়ে স্ত্রী রীনা বেগম ও বড় মেয়ে লিমা আক্তার এর সাথে পরামর্শ করছিলেন গিয়াস উদ্দিন, কথা বলার এক পর্যায়ে তার স্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে গিয়াস উদ্দিনের উপর চড়াও হন এবং তাকে বলতে থাকেন, তুমি ঘরে বসে বসে খাবে কাজ করবেনা। আবার মেয়ের বিয়েতে ৪ জন লোক খাওয়াতে পারবেনা। কেমন পুরুষ তুমি। তখন আমার ভাসুর বলেন, আমি অসুস্থ, তার পরও কেউ কাজে নেয়না। কাজ না পেলে আমি কি করব। এসময় গিয়াস উদ্দিনের বড় মেয়ে লিমা আক্তার ঝারু দিয়ে তার বাবাকে পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে মা’ মেয়ে টানা হেচড়া ও মারধর করতে গায়ের পাঞ্জাবীটা ছিড়ে ফেলে।
আমার ভাসুর গিয়াস উদ্দিন তার মেয়ে লিমাকে এ আচরনের জন্য অভিশাপ দিলে, লিমা তার বাবাকে সজোরে লাথি মেরে ঘর থেকে বাহিরে ফেলে দেয়। সন্ধ্যার পর এক মাত্র পুত্র মোঃ রাব্বী মিয়া (২৫) বাড়ি আসলে তার কাছে স্ত্রী-কণ্যার মারধরের বিচার চান। পুত্র রাব্বী উল্টো বাবাকে তিরস্কার করেন। এসময় স্ত্রী পুত্র কণ্যা মিলে তাকে পূনরায় শারিরীক ও মাষিক নির্যাতন করেন। রাগে ক্ষোভে আমার ভাসুর পাশের ঘরে আড়ায় প্লাষ্টিকের রশিতে ঝুলে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এদিকে গিয়াস উদ্দিন আত্মহত্যা করার সময় বাঁচার জন্য পা ছুটাছুটি করলে টিনে লেগে রক্ত বের হয়। এতেই স্হানীয় লোকদের মাঝে বলাবলি করতে শুনা যায় এটা আত্নহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা গিয়াস উদ্দিনকে গলায় ফাঁস দেয়া অবস্থায় দেখে পুলিশকে খবর দিলে দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হাসান এক দল পুলিশ নিয়ে লাশের সুরতহাল তৈরী করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এদিকে নিহতের লাশ দেখতে তার বাড়িতে শতশত মানুষের ঢল নামে। আগত মানুষের মাঝে একটি কথা বলাবলি চলছে জীবদ্বশায় কণেকে শশুর বাড়ির লোকদের হাতে আর তুলে দেয়া হলোনা হতভাগা এই পিতার।
নিহতের চাচাতো ভাই মিলন মুহুরী(৬০), প্রতিবেশী শাহ আলম(৬২) ও বাচ্চু মিয়া (৭০) বলেন, মৃত: গিয়াস উদ্দিন একজন সরল সহজ লোক ছিলেন। তিন কণ্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার স্ত্রী রীনা বেগম প্রায় ১৫ বছর লিবিয়া প্রবাসী ছিলেন, তার এক মাত্র পুত্র রাব্বীও ৫ বছর লিবিয়া প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত রমজান মাসে মা’ ছেলে দেশে ফিরেন। অভাব অনটনের সংসার। থাকার ভিটে জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। মা ছেলে বিদেশ প্রবাস জীবন কাটালেও তাদের বিদেশ পাঠানো ঋণের টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেনি। এরই মধ্যে ৩ মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেকে বিয়ে করালেও তার স্ত্রী এখনো ঘরে তোলা হয়নি। গিয়াস উদ্দিন পেশায় দিনমজুর। এখন কাজ নেই তাই উপার্জন করতে পারছেনা। অভাবের সংসার। স্ত্রী, কণ্যা, পুত্র এক জোট হয়ে তাদের পরিবারের কর্তাকে প্রায়ই মারধর ও মানষিক যন্ত্রনায় রাখত।
গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, মেয়ের শ্বশুর বাড়ির ৪ জন লোক খাওয়ানোর টাকা তার কাছে নেই শুনে, তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু তিনি এভাবে আত্মহত্যা করবেন তা কখনো ভাবিনী। এ ব্যাপরে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারনা হচ্ছে। ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার সময় বাঁচার চেষ্টায় ছটফট করাকালে টিনের সাথে ২ পা লেগে কেটে গিয়ে কিছু ব্লিডিং বের হয়। আমরা একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেছি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পরই আসল সত্যটা বলা যাবে।