এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ দরবার অনুষ্ঠিত হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের লক্ষ্যে ২০০৪ সালে স্বাধীনতা দিবসের প্যারেডে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে র্যাব আত্মপ্রকাশ করে।
২৬ মার্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর দিনটিকে ‘রেইজিং ডে’ হিসেবে পালন করে আসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত পুলিশের এ এলিট ফোর্স।
এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে র্যাব।। আজ রোববার (১৯ মার্চ) দরবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে র্যাবের জনবল ও ব্যাটালিয়নের সংখ্যা। বর্তমানে সারা দেশে এ এলিট ফোর্সের ব্যাটালিয়ন সংখ্যা ১৫টি। যেখানে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার ও সরকারের বেসামরিক প্রশাসনের বাছাই করা চৌকস কর্মকর্তা ও অন্য সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
দেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে প্রশংসিত এ বাহিনী ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ টানা ৩৩ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) আমির শায়খ আব্দুর রহমানকে সিলেটের শাপলাবাগ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে জঙ্গি সংগঠন জেএমবি তাদের শক্তি জানান দেওয়ার পরপরই মাঠে নামে র্যাব গোয়েন্দারা। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, সামরিক শাখার প্রধান আতাউর রহমান সানিসহ শত শত জঙ্গিকে।
এছাড়া রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর র্যাব অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়। গত এক বছরের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর তিন শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে র্যাব মোট অপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে ২৮ হাজার ৩৮৩ জনকে। এক বছরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ১২৪টি অভিযানে ১৮৫ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার গ্রেপ্তার ৬৮ সদস্য ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেছে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬ জনকে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে র্যাবের কাছে জঙ্গি ও জলদস্যু মিলিয়ে মোট ৪২১ জন অপরাধী আত্মসমর্পণ করেছে। তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। র্যাব নিজস্ব অর্থায়নে তাদের পুনর্বাসনে ভূমিকা রেখেছে। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ক্যাসিনো অভিযানে রাঘব-বোয়ালদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনে বাহিনীটি। যাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ কোটি কোটি টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মাদক, অস্ত্র ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম।
গেল এক বছরে র্যাব মাদক বিক্রি, সেবন ও মাদক কারবারে জড়িত ১১ হাজার ৩০৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আইস, আফিম, কোকেনসহ উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদক। এই সময় অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্যাদিসহ ৬৩১ জন গ্রেপ্তার, ১৩৯৪টি বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব।
মানবপাচার ঠেকাতে র্যাব গত এক বছরে ১০৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এরমধ্যে ২৯৩ আসামি গ্রেপ্তারসহ ২৫৮ ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে র্যাব। একই সময়ে ৪৫২ অভিযানে ৫৭৩ জন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার ও ৪৭৬ জনকে উদ্ধার করেছে র্যাব। চাঞ্চল্যকর হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় ১২৮৮ জনকে গ্রেপ্তার, ছিনতাই ও মলমপার্টির ২৬২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে ‘রিপোর্ট টু র্যাব’ নামে মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে র্যাব।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক কঠিন পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনের মধ্য দিয়ে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে চলছে র্যাব। পেশাদারিত্ব, সততা ও আন্তরিকতা ও সর্বোপরি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গি দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, মাদকবিরোধী অভিযান, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে, যাতে সাধারণ জনগণ মানুষের আস্থার জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বলেন, অনেক মানুষ নানা সমস্যায় পড়ে র্যাবের কাছে আসে। আমি র্যাব মহাপরিচালক হিসেবেও প্রতিদিন ২০-২৫ জনের সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলি। র্যাবের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। আমরা আইনের মধ্যে থেকে মানুষের পাশে থাকি।