রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া এলাকায় মাইনুল নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার গৃহকর্মী মৌসুমী কে হত্যা করে বাড়ীর ছাদে থেকে ফেলে আত্মহত্যা বলে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ এলাকাবাসীর।
গতকাল সোমবার সকালে রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেটের ছাদ থেকে পুলিশ কর্মকর্তা মাইনুল ইসলামের বাসায় গৃহকর্মী কাজে নিয়োজিত মৌসুমী তার নামে একজন তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
একাধিক স্থানীয় বাসিন্দার বলেন , গৃহকর্মী মৌসুমী আক্তার কে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যার পর পুলিশের ৬ তলা বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি স্কুলের টয়লেটের ছাদে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য যে বিল্ডিংটি থেকে উক্ত তরুণীকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।উক্ত বিল্ডিংয়ের মালিক পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা সহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা দশজন জন মিলে এই ছয় তলা ভবনটি নির্মাণ করেছেন। সেখানে গত ৭/৮ মাস ধরে মৌসুমী নামে এক তরূণী গৃহ-চারিকার কাজ করে আসছিলেন, কুড়িগ্রাম জেলায় কর্মরত মাইনুল ইসলাম নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার বাসায়।
নিহত গৃহপরিচারিকা মৌসুমী রংপুর সদর উপজেলার চন্দন পাট ইউনিয়নের আ: জলিল মিয়ার মেয়ে। মৌসুমির মা কল্পনা আক্তারের মৃতুর পরে রংপুর মহানগরীর ১২নং ওয়ার্ডে তার মামা মঞ্জুরুল ইসলাম এর বাড়িতে বেড়ে ওঠেন মৌসুমি। মামা মঞ্জুরুল ইসলাম এর দারিদ্রতার কারণে, রংপুর সরকারি কলেজের পিওন সুরুজ মিঞার মাধ্যমে তারই সু-পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম এর বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়ে দেন তাকে।
গত ৮/৯ মাস যাবৎ পুলিশের বাসায় কাজ করতেন মৌসুমী। হঠাৎ করেই ১৩ ফেব্রুয়ারী ২৩ ইং সকালে স্থানীয়রা রংপুর মহানগরীর মুন্সিপাড়া পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাথরুমের ছাদে তরুণীর মরদেহ দেখতে পেয়ে জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল দেন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই বাড়ীর কারো সাথেই এলাকাবাসীর তেমন কোন সম্পর্ক নেই। স্থানীয়দের সাথে তেমন সুসম্পর্ক নেই এই বাড়ির ।
পাঠশালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহনাজ বেগম দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি কে জানান, সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে স্কুলের আয়া সুমাইয়া মরদেহের পা দেখতে পান। পরে সহকারী শিক্ষিকা ফেরদৌসির বাসায় গিয়ে বলেন, ফেরদৌসী আমাকে জানালে আমি দ্রুত স্কুলে যাই, তখন সময় আনুমানিক সকাল ৯টা আমি গিয়ে শুনি পুলিশ এসে তড়িঘড়ি করে লাশ নিয়ে গেছেন।
এলাকাবাসী প্রতক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ তরুণির লাশ উদ্ধারের সময় আমরা দেখেছি তার দুই পায়ের রগ কাটা ছিলো। আমাদের ধারণা হয়তো তাকে ধর্ষণ বা শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, তার মৃত নিশ্চিত করতেই পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সত্যতা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরী। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার করা নাহলে আমরা এলাকাবাসী মানববন্ধন সহ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবো।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে জানায়, নিহত গৃহকর্মী মৌসুমী কুড়িগ্রাম জেলার সদর ফাড়ি ইনচার্জ মাইনুল এর বাসায় গৃহ পরিচালিকার কাজ করতো, আমরা মরদেহ উদ্ধার করেছি। লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভবনটির নাইটগার্ড, কেয়ারটেকার, স্থানীয় ও বাড়ির সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখতেছি।
এ বিষয় জানতে চাইলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা: আয়শা পারভিন দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে জানান, মৌসুমির পোষ্ট-মোর্টেম করা হয়েছে, ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে এবং ধর্ষণ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে ভ্যাজাইনাল সোয়াব পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।