ঢাকা ১০:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ফাইল চিহ্ন(মার্ক) করে চলে ঘুসের কারবার । রাজধানীর বনশ্রীতে বাস উল্টে খালে গাজীপুরে গ্যাসের চুলা বিস্ফোরণে বাবুর্চিসহ দগ্ধ ৩ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীদের নিয়ে গঠিত পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিবিএ বাতিল মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত সিএনএফ টিভি’র উদ্যোগে পাবনার সংবাদপত্র হকারদের মঝে কম্বল বিতরণ ঢাকা উত্তরা কর অঞ্চল –৯ এর অবৈধভাবে করদাতাদেরকে হয়রানি ও দুর্নীতি অনিয়ম করে অঢেল সম্পদের মালিক সুপারভাইজার আব্দুর রহমান !! জুলাই বিপ্লবে নিহত শহীদের রক্তের ঋণ শোধ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মঠবাড়িয়ায় জমিজমার বিরোধের জেরে বসতঘর ভাংচুর ও সবজি ক্ষেতের বেরা কেটে ফেলার অভিযোগ বড়াইগ্রামে দুটি শিশু সন্তানকে নিয়ে গৃহহীন ভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে খ্রিস্টান পরিবারটি

সাড়ে ৫ বছর পর রোহিঙ্গামুক্ত হলো শূন্যরেখা

  • কক্সবাজার ব্যূরো
  • আপডেট সময় ০৭:২৩:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৬১১ বার পড়া হয়েছে

সাড়ে পাঁচ বছর পর রোহিঙ্গামুক্ত হলো বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড। চার দফায় ৪২৯ পরিবারের এক হাজার ৮৯৭ রোহিঙ্গাকে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরসংলগ্ন বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে সরিয়ে আনা হয়েছে। এতদিন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার শূন্যরেখায় অবস্থান করেছিল এসব রোহিঙ্গা।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। স্থানীয় সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল লাখ লাখ রোহিঙ্গা। ওই সময় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা। পরে সেখানে বসতি গড়ে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বসবাস করেছিল তারা।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জানুয়ারি শূন্যরেখায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় এক রোহিঙ্গা নিহত ও দুই শিশু আহত হয়।

ঘটনার পর শূন্যরেখার ৬৩০টির বেশি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে রোহিঙ্গারা গৃহহীন হয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নেয়। শূন্যরেখার বাসিন্দারা বলেছেন, ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে কেউ কেউ মিয়ানমারে আবার বেশিরভাগ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।

যাদের খোঁজ পাওয়া গেছে, তাদেরকে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরসংলগ্ন বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে শূন্যরেখা রোহিঙ্গামুক্ত।ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত তুমব্রু পশ্চিমকুল গ্রাম। গ্রামের দক্ষিণ দিকে ১০০ গজ দূরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তুমব্রুরাইট পাহাড়। সেখানে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সীমান্তচৌকি রয়েছে। একটি ছোট খাল মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তকে ভাগ করেছে। দুই দেশের মাঝামাঝি স্থানটি শূন্যরেখা হিসেবে পরিচিতি। সেটি এখন খালি পড়ে আছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে শূন্যরেখার বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার চিহ্ন দেখা গেছে। আগুনে সেখানের গাছপালাও পুড়ে গেছে।বাংলাদেশ-মিয়ানমারকে আলাদা করা শূন্যরেখা জিরো পয়েন্ট নামেও পরিচিত। দুই দেশের আওতার বাইরে থাকায় এখানে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এটিকে ‘সেফজোন’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল তারা।

গত সেপ্টেম্বর মাসে রাখাইন রাজ্যের তুমব্রুরাইট পাহাড় থেকে গুলি, আর্টিলারি ও মর্টারের গোলা ছুড়েছিল বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। গোলার বিকট শব্দে কেঁপেছিল এপারের তুমব্রুর পশ্চিমকুল, ক্যাম্পপাড়া, বাজারপাড়া, কোনারপাড়া, খিজারিঘোনা ও ভূমিহীন পাড়াসহ অন্তত ১৫ গ্রাম। আতঙ্কে ছিলেন এসব গ্রামের মানুষজন।এরপর গত নভেম্বরে শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া আরসা ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

সেসময়ে মাদক চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় র‌্যাব। তখন আরসার সঙ্গে সংঘর্ষে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের এক কর্মকর্তা নিহত হন। প্রথম দিকে এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে মাদক চোরাচালানিদের দায়ী করেছিল র‌্যাব।

পরে পুলিশ এ ঘটনায় যে মামলা দায়ের করেছে, তাতে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ অন্যদের আসামি করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনার পর থেকে শূন্যরেখার বাসিন্দাদের সরানোর দাবি ওঠে। শেষ পর্যন্ত শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে আতঙ্কমুক্ত হন সীমান্তের বাসিন্দারা।তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা মাহমুদুল হক বলেন, ‘ওসব রোহিঙ্গা ২০১৭ সালে শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়। এরপর থেকে সেখানে অপরাধীদের যাতায়াত শুরু হয়। গত কয়েক বছর স্থানীয়দের ধরে নিয়ে শূন্যরেখায় আটকে মারধর করে মুক্তিপণ আদায় করতো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এখন শূন্যরেখায় ক্যাম্প না থাকায় আমরা নিরাপদবোধ করছি। কারণ সেখানে অপরাধীদের আস্তানা ছিল। এখন সীমান্তে আগের তুলনায় গোলাগুলির ঘটনাও কমেছে।’

ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শূন্যরেখায় বসতি না থাকায় আমাদের সীমান্তের বাসিন্দারা এখন শঙ্কামুক্ত। কেননা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের হাট ছিল শূন্যরেখা। তাদের কারণে আমাদের অনেক ছেলেমেয়ে খারাপ পথে হাঁটছিল। মাদক ও চোরা চালানে জড়িয়ে পড়েছিল। এখন এসব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শূন্যরেখার সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল। মূলত তারা ক্যাম্পে অপরাধ করে শূন্যরেখায় আশ্রয় নিতো। সেখানে ক্যাম্প না থাকায় এখন তাদের আশ্রয়স্থল ভেঙে গেলো।’

তুমব্রু সীমান্তে নজর রাখেন এমন এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘শূন্যরেখা ছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সেফজোন। সেখানে ক্যাম্পে না থাকায় সীমান্তে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপরাধ কর্মকাণ্ড কমে আসবে। এতে এপারের সীমান্তের বাসিন্দাদের ভয়ভীতি ও আতঙ্ক কমবে।’

শূন্যরেখা থেকে চার দফায় এক হাজার ৮৯৭ রোহিঙ্গাকে বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানালেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দফায় শূন্যরেখার এক হাজার ৮৯৭ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে আনা হয়েছে। বাকি রোহিঙ্গাদের খোঁজ পাইনি আমরা।সাড়ে পাঁচ বছর ধরে শূন্যরেখায় বসবাস করেছেন নুর বশর।

শনিবার বাসে বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘ঘর নেই, বাড়ি নেই। আগুন দিয়ে সব পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। ঘরের কোনও জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারিনি। এমনকি বিছানার চাদর ও বালিশ আগুনে পুড়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে শূন্যহাতে পালিয়ে শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন শূন্যরেখায় নিঃস্ব হয়ে শূন্যহাতে বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছি। শূন্যরেখা এখন শূন্য পড়ে আছে।’

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আফতাবনগর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ফাইল চিহ্ন(মার্ক) করে চলে ঘুসের কারবার ।

সাড়ে ৫ বছর পর রোহিঙ্গামুক্ত হলো শূন্যরেখা

আপডেট সময় ০৭:২৩:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

সাড়ে পাঁচ বছর পর রোহিঙ্গামুক্ত হলো বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড। চার দফায় ৪২৯ পরিবারের এক হাজার ৮৯৭ রোহিঙ্গাকে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরসংলগ্ন বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে সরিয়ে আনা হয়েছে। এতদিন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু এলাকার শূন্যরেখায় অবস্থান করেছিল এসব রোহিঙ্গা।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। স্থানীয় সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল লাখ লাখ রোহিঙ্গা। ওই সময় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে আটকা পড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা। পরে সেখানে বসতি গড়ে সাড়ে পাঁচ বছর ধরে বসবাস করেছিল তারা।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জানুয়ারি শূন্যরেখায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় এক রোহিঙ্গা নিহত ও দুই শিশু আহত হয়।

ঘটনার পর শূন্যরেখার ৬৩০টির বেশি ঘর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে রোহিঙ্গারা গৃহহীন হয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আশ্রয় নেয়। শূন্যরেখার বাসিন্দারা বলেছেন, ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে কেউ কেউ মিয়ানমারে আবার বেশিরভাগ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে।

যাদের খোঁজ পাওয়া গেছে, তাদেরকে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরসংলগ্ন বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে শূন্যরেখা রোহিঙ্গামুক্ত।ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত তুমব্রু পশ্চিমকুল গ্রাম। গ্রামের দক্ষিণ দিকে ১০০ গজ দূরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তুমব্রুরাইট পাহাড়। সেখানে দেশটির বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সীমান্তচৌকি রয়েছে। একটি ছোট খাল মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তকে ভাগ করেছে। দুই দেশের মাঝামাঝি স্থানটি শূন্যরেখা হিসেবে পরিচিতি। সেটি এখন খালি পড়ে আছে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে শূন্যরেখার বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার চিহ্ন দেখা গেছে। আগুনে সেখানের গাছপালাও পুড়ে গেছে।বাংলাদেশ-মিয়ানমারকে আলাদা করা শূন্যরেখা জিরো পয়েন্ট নামেও পরিচিত। দুই দেশের আওতার বাইরে থাকায় এখানে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এটিকে ‘সেফজোন’ হিসেবে ব্যবহার করেছিল তারা।

গত সেপ্টেম্বর মাসে রাখাইন রাজ্যের তুমব্রুরাইট পাহাড় থেকে গুলি, আর্টিলারি ও মর্টারের গোলা ছুড়েছিল বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। গোলার বিকট শব্দে কেঁপেছিল এপারের তুমব্রুর পশ্চিমকুল, ক্যাম্পপাড়া, বাজারপাড়া, কোনারপাড়া, খিজারিঘোনা ও ভূমিহীন পাড়াসহ অন্তত ১৫ গ্রাম। আতঙ্কে ছিলেন এসব গ্রামের মানুষজন।এরপর গত নভেম্বরে শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া আরসা ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

সেসময়ে মাদক চোরাচালানিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় র‌্যাব। তখন আরসার সঙ্গে সংঘর্ষে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের এক কর্মকর্তা নিহত হন। প্রথম দিকে এ ঘটনায় জড়িত হিসেবে মাদক চোরাচালানিদের দায়ী করেছিল র‌্যাব।

পরে পুলিশ এ ঘটনায় যে মামলা দায়ের করেছে, তাতে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ অন্যদের আসামি করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনার পর থেকে শূন্যরেখার বাসিন্দাদের সরানোর দাবি ওঠে। শেষ পর্যন্ত শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে আতঙ্কমুক্ত হন সীমান্তের বাসিন্দারা।তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দা মাহমুদুল হক বলেন, ‘ওসব রোহিঙ্গা ২০১৭ সালে শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়। এরপর থেকে সেখানে অপরাধীদের যাতায়াত শুরু হয়। গত কয়েক বছর স্থানীয়দের ধরে নিয়ে শূন্যরেখায় আটকে মারধর করে মুক্তিপণ আদায় করতো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এখন শূন্যরেখায় ক্যাম্প না থাকায় আমরা নিরাপদবোধ করছি। কারণ সেখানে অপরাধীদের আস্তানা ছিল। এখন সীমান্তে আগের তুলনায় গোলাগুলির ঘটনাও কমেছে।’

ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শূন্যরেখায় বসতি না থাকায় আমাদের সীমান্তের বাসিন্দারা এখন শঙ্কামুক্ত। কেননা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের হাট ছিল শূন্যরেখা। তাদের কারণে আমাদের অনেক ছেলেমেয়ে খারাপ পথে হাঁটছিল। মাদক ও চোরা চালানে জড়িয়ে পড়েছিল। এখন এসব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে শূন্যরেখার সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল। মূলত তারা ক্যাম্পে অপরাধ করে শূন্যরেখায় আশ্রয় নিতো। সেখানে ক্যাম্প না থাকায় এখন তাদের আশ্রয়স্থল ভেঙে গেলো।’

তুমব্রু সীমান্তে নজর রাখেন এমন এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘শূন্যরেখা ছিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সেফজোন। সেখানে ক্যাম্পে না থাকায় সীমান্তে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অপরাধ কর্মকাণ্ড কমে আসবে। এতে এপারের সীমান্তের বাসিন্দাদের ভয়ভীতি ও আতঙ্ক কমবে।’

শূন্যরেখা থেকে চার দফায় এক হাজার ৮৯৭ রোহিঙ্গাকে বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে সরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানালেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দফায় শূন্যরেখার এক হাজার ৮৯৭ রোহিঙ্গাকে সরিয়ে আনা হয়েছে। বাকি রোহিঙ্গাদের খোঁজ পাইনি আমরা।সাড়ে পাঁচ বছর ধরে শূন্যরেখায় বসবাস করেছেন নুর বশর।

শনিবার বাসে বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘ঘর নেই, বাড়ি নেই। আগুন দিয়ে সব পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। ঘরের কোনও জিনিসপত্র রক্ষা করতে পারিনি। এমনকি বিছানার চাদর ও বালিশ আগুনে পুড়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে শূন্যহাতে পালিয়ে শূন্যরেখায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন শূন্যরেখায় নিঃস্ব হয়ে শূন্যহাতে বালুখালী ট্রানজিট ক্যাম্পে আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছি। শূন্যরেখা এখন শূন্য পড়ে আছে।’