ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলের সাড়ে তিন বছর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৯ বছরের সময়কালই বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণযুগ। কেননা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের বীজ বপন করেছিলেন। পরে তারই কন্যা শেখ হাসিনা দূরদর্শী নেতৃত্বের মাধ্যমে সেই বীজকে চারাগাছ থেকে মহীরুহে পরিণত করেছেন।
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা কলেজের শহীদ আ.ন.ম. নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে ৮ম ডিসিএসসি জাতীয় বিজ্ঞান উৎসব ও বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লব মিস করেছি। তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর তার বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বাড়িয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের প্রত্যেকের কাছে যে বাণীটা পৌঁছে দিয়েছিলেন সেটি হচ্ছে বাংলাদেশকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করতে হবে। সেই পথ ধরে আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে জায়গায় বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছেন, সেটি বিশ্বে অনুকরণীয়। বাংলাদেশের সার্বিক ডিজিটাল রূপান্তরের যে বীজ বপন বঙ্গবন্ধু বপন করেছিলেন, ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই বীজকে চারাগাছে রূপান্তর করেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কম্পিউটারের বিস্তারের জন্য আমদানিকৃত কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক এবং ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছিলেন। কম্পিউটার শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছিলেন ও যত রকমের ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার সমস্ত কিছুই তিনি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের সাড়ে তিন বছর ও প্রধানমন্ত্রীর ১৫ বছর এই মোট ১৯ বছরের সময়কে আমাদের জন্য স্বর্ণযুগ বলতে হবে। জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই দেশ আজকের নানা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তার আগে পৃথিবীর কোনো দেশ ডিজিটাল কর্মসূচির কথা ভাবেনি। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার ঘোষণার এক বছর পর ব্রিটেন ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ডিজিটাল ব্রিটেন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারও ছয় বছর পরে ভারত ডিজিটাল ইন্ডিয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমাদের ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান ডিজিটাল পাকিস্তান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। অপরদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছেন। ২০২২ সালের ৭ই এপ্রিল তিনি কর্মসূচি দিয়েছেন ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, আমার স্মার্ট বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভিত্তি হচ্ছে স্মার্ট মানুষ।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, স্বাভাবিকভাবে বিজ্ঞান শিক্ষায় আমাদের দেশে একটি বড় ধরনের দুর্বলতা কাজ করে। এমনিতেই বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য এসব ভাগে ভাগ করে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর অতিক্রম করানো হয়। যার ফলে বর্তমান সময়ের আলোকে শিক্ষার্থীদের যেমন বিজ্ঞান চর্চা দরকার বাস্তবে তেমনটি হয়ে ওঠে না। তবে আজকের বাস্তবতা হলো শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরাই বিজ্ঞান চর্চার করবে সেই দিনটা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। পৃথিবীর আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু রূপান্তর হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের ধারণা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যন্ত্র এসে মানুষের জায়গা দখল করে নেবে। তবে আমি সবসময় বলি, পৃথিবীতে মানুষের জায়গা দখল করবে এমন কোনো যন্ত্র মানব সভ্যতার বিকাশে কোনো কাজ করতে পারে না। বরং মানুষের নিয়ন্ত্রণে যন্ত্র থাকবে এবং মানুষ এই যন্ত্র নির্মাণ করবে তাকে সহায়তা করার জন্য সেটিই হচ্ছে প্রকৃত বিষয়।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ‘ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ’র ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ইমরান রাহমান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ, ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ.টি.এম. মইনুল হোসেন, ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান ক্লাবের আহ্বায়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শরীফা সুলতানা এবং ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার।