১৪৫ টাকা মজুরী প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মনু-দলাই ভ্যালীর সভাপতি ধনা বাউরী ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা।ফলে রোববার থেকে লাগাতার কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের অফিসে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে নতুন এই মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল ৩শ টাকা মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।এর কিছু পরেই বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলাই ভ্যালী কমিটির সভাপতি ধনা বাউরী,চা ছাত্র যুবনেতা মোহন রবিদাসের নেতৃত্বে শ্রমিকদের একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ধনা বাউরী ও মোহন রবিদাস দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, সভা শুরুর পূর্ব থেকেই পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। মোহন রবিদাস বলেন, পরে তাদের চাপের মুখে ফেলে ও পুলিশ আমার উপর টর্চার করেছে। চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পালকে দিয়ে ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে ধর্মঘট স্থগিতের ঘোষণা দেন। আমরা এই সিদ্ধান্ত মানবো না। ৩শ টাকা মজুরি নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এদিকে, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আমাদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা মেনে নিতে এবং ধর্মঘট স্থগিত করতে। সেই প্রেক্ষিতে আপাতত ১৪৫ টাকা মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল এ ঘোষণা দিয়ে ছিলেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের একটি পক্ষ এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের ঘোষণার পর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কমলগঞ্জের কুরমা চা বাগানে শ্রমিক সমাবেশে মনু-দলাই ভ্যালীর শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা ১৪৫ টাকা মজুরির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের করে রুটি রোজীর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তাদের এ সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ করেছেন কমলগঞ্জের কুরমা চা বাগানের চা শ্রমিকরা। চা শ্রমিকরা বলেন, আমরা বাগানের লেবার বলেই আমাদের সঙ্গে মসকরা করা হচ্ছে। বর্তমান বাজারে ২৫ টাকায় এক কেজি আলু পাওয়া যায়না। বর্তমান বাজার দরে ১৪৫ টাকায় ৫/৬ জনের সংসার চালানো খুবই কষ্টকর। আমাদের দৈনিক ৩শ টাকা মজুরী করা না হলে আমরা কাজে ফিরবো না।
শনিবার রাত সাড়ে ৮ টায় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ নৃপেন পাল বিষয়টি নিশ্চিত করে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, আমাদের মজুরী ৩শ টাকার সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত চা শ্রমিকদের আন্দোলন চলবে। এরআগে শনিবার বিকালে দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা করার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে টানা ১২ দিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার ঘোষণা দিয়ে ছিলেন। চা শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলে কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর, শমশেরনগর,মৃর্ত্তিঙ্গা চা বাগানসহ বিভিন্ন চা বাগানে মজুরি প্রত্যাহার করে বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করে রোববার থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান।