ঢাকা ১২:১৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ: গবেষণা

বিশ্বের সামনে এখন যেসব হুমকি রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন সেগুলোর একটি। বিশ্বে ইতোমধ্যেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এটি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এখনও খুব বেশি ফল মেলেনি।

এই পরিস্থিতিতে গবেষকরা সামনে এনেছেন নতুন তথ্য। এতে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হয়ে পড়ার এই খবরটি প্রাকৃতিক বিশ্বে মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে তুলে ধরছে।

আল জাজিরা বলছে, বুধবার বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ শতকের গড় তাপমাত্রার তুলনায় ১৯৯৫ সাল থেকে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়েছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বরফের শীট এবং হিমবাহের গভীর থেকে নেওয়া নমুনাগুলোসহ গ্রিনল্যান্ডের বরফ যথেষ্ট উষ্ণ হয়েছে।

এই গবেষণার প্রধান লেখক ছিলেন জার্মানির আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউটের গ্লাসিওলোজিস্ট মারিয়া হোরহোল্ড। তিনি বলছেন, ‘আমরা ১৯৯০ এর দশক এবং ২০১১ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে দেখছি। আমাদের কাছে এখন বিশ্ব উষ্ণায়নের স্পষ্ট দৃশ্যও রয়েছে।’

যেহেতু জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নির্গমন হয় এবং গ্রহকে আরও উষ্ণ করে, তাই বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, দেশগুলো এখনও বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া এড়াতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো (বাস্তবায়ন) করতে পারেনি।

গত নভেম্বরে জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্ব উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত হিমবাহ ২০৫০ সালের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। সংস্থাটি বিশ্বের ১৮ হাজার ৬০০টিরও বেশি হিমবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকে এবং চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ সেগুলোর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অদৃশ্য হবে বা গলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ অদৃশ্য বা গলে যাবে বলে শঙ্কা রয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, গ্রিনল্যান্ডের বরফ কোর দীর্ঘমেয়াদী তাপমাত্রার পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে, যেটির বিশ্লেষণ করতেও সময় লাগে। কোর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য ১৯৯৫ সালে আপডেট করা হয়েছিল এবং পূর্বে সেটি ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, গ্রিনল্যান্ড আর্কটিক অঞ্চল বাকি অংশের মতো দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে না।

তবে ২০১১ সালে নেওয়া তথ্যের নতুন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত ১৫ বছরে উষ্ণায়ন ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

ডেনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিজ্ঞানী মার্টিন স্টেন্ডেল এই গবেষণা সম্পর্কে বলছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান। তিনি বলছেন, গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রে পানি বাড়ছে। এতে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।

এছাড়া উত্তর গ্রিনল্যান্ডের উষ্ণতা সম্পর্কে সবার খুব উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ডেনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের বরফ বিজ্ঞানী জেসন বক্স।

এর আগে বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছিল, এই শতকে ২০১২ সালে সব চেয়ে বেশি বরফ গলেছিল গ্রিনল্যান্ডে। ২০১৯ সালে সেই রেকর্ডও ভেঙে যায়।

কেবল ২০১৯ সালেই ৫৩২ গিগাটন বরফ গলে গেছে গ্রিনল্যান্ডে। এই হারে বরফ গলতে থাকলে গোটা বিশ্ব ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বলে সেসময় জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

তবে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, প্রতি বছর একই হারে বরফ গলছে না। ২০১৬ সালে যে হারে বরফ গলেছিল, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে সেই হারে বরফ গলেনি। বরং ওই দুই বছরে গরমকালেও যথেষ্ট ঠান্ডা ছিল মেরু অঞ্চল। ২০১৮ সালে গরমে বরফও পড়েছে সেখানে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বছর, দুই বছর পর পর একবার করে উষ্ণপ্রবাহ আসে গ্রিনল্যান্ডে। সে সময় বায়ুর চাপও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তারই জেরে এই পরিমাণ বরফ গলতে থাকে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ: গবেষণা

আপডেট সময় ০৩:৪২:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩

বিশ্বের সামনে এখন যেসব হুমকি রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন সেগুলোর একটি। বিশ্বে ইতোমধ্যেই এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এটি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এখনও খুব বেশি ফল মেলেনি।

এই পরিস্থিতিতে গবেষকরা সামনে এনেছেন নতুন তথ্য। এতে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা ১০০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ হয়ে পড়ার এই খবরটি প্রাকৃতিক বিশ্বে মানব-সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে তুলে ধরছে।

আল জাজিরা বলছে, বুধবার বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচারে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ শতকের গড় তাপমাত্রার তুলনায় ১৯৯৫ সাল থেকে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেড়েছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বরফের শীট এবং হিমবাহের গভীর থেকে নেওয়া নমুনাগুলোসহ গ্রিনল্যান্ডের বরফ যথেষ্ট উষ্ণ হয়েছে।

এই গবেষণার প্রধান লেখক ছিলেন জার্মানির আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউটের গ্লাসিওলোজিস্ট মারিয়া হোরহোল্ড। তিনি বলছেন, ‘আমরা ১৯৯০ এর দশক এবং ২০১১ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে দেখছি। আমাদের কাছে এখন বিশ্ব উষ্ণায়নের স্পষ্ট দৃশ্যও রয়েছে।’

যেহেতু জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন নির্গমন হয় এবং গ্রহকে আরও উষ্ণ করে, তাই বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, দেশগুলো এখনও বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে খারাপ প্রতিক্রিয়া এড়াতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো (বাস্তবায়ন) করতে পারেনি।

গত নভেম্বরে জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্ব উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত হিমবাহ ২০৫০ সালের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। সংস্থাটি বিশ্বের ১৮ হাজার ৬০০টিরও বেশি হিমবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকে এবং চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ সেগুলোর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অদৃশ্য হবে বা গলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ অদৃশ্য বা গলে যাবে বলে শঙ্কা রয়েছে।

আল জাজিরা বলছে, গ্রিনল্যান্ডের বরফ কোর দীর্ঘমেয়াদী তাপমাত্রার পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে, যেটির বিশ্লেষণ করতেও সময় লাগে। কোর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য ১৯৯৫ সালে আপডেট করা হয়েছিল এবং পূর্বে সেটি ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, গ্রিনল্যান্ড আর্কটিক অঞ্চল বাকি অংশের মতো দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে না।

তবে ২০১১ সালে নেওয়া তথ্যের নতুন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত ১৫ বছরে উষ্ণায়ন ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

ডেনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিজ্ঞানী মার্টিন স্টেন্ডেল এই গবেষণা সম্পর্কে বলছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান। তিনি বলছেন, গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রে পানি বাড়ছে। এতে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।

এছাড়া উত্তর গ্রিনল্যান্ডের উষ্ণতা সম্পর্কে সবার খুব উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ডেনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের বরফ বিজ্ঞানী জেসন বক্স।

এর আগে বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছিল, এই শতকে ২০১২ সালে সব চেয়ে বেশি বরফ গলেছিল গ্রিনল্যান্ডে। ২০১৯ সালে সেই রেকর্ডও ভেঙে যায়।

কেবল ২০১৯ সালেই ৫৩২ গিগাটন বরফ গলে গেছে গ্রিনল্যান্ডে। এই হারে বরফ গলতে থাকলে গোটা বিশ্ব ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বলে সেসময় জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।

তবে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, প্রতি বছর একই হারে বরফ গলছে না। ২০১৬ সালে যে হারে বরফ গলেছিল, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে সেই হারে বরফ গলেনি। বরং ওই দুই বছরে গরমকালেও যথেষ্ট ঠান্ডা ছিল মেরু অঞ্চল। ২০১৮ সালে গরমে বরফও পড়েছে সেখানে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বছর, দুই বছর পর পর একবার করে উষ্ণপ্রবাহ আসে গ্রিনল্যান্ডে। সে সময় বায়ুর চাপও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তারই জেরে এই পরিমাণ বরফ গলতে থাকে।