ওজন ঠিক রাখতে হাঁটার গুরুত্ব আমাদের সবার জানা। হাড়ের জয়েন্ট ঠিক রাখতেও হাঁটার উপকারিতা অপরিসীম। এমনকী দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাইলেও হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য হাঁটার উপকারিতা বলে শেষ করার মতো নয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিদিন হাঁটলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। ডিনাইস অস্টিনের মতে, হাঁটার উপকারিতা অসাধারণ। এটি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। সেইসঙ্গে বৃদ্ধি করে হজমশক্তি। এটি হাড় এবং পেশীকেও শক্তিশালী করে। নিয়মিত হাঁটলে তা স্ট্রেস দূর করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক হাঁটার ৫টি উপকারিতা-
মন ভালো রাখে
ডাঃ জামলিসের মতে, এক গ্লাস ওয়াইন বা তিনটি ডার্ক চকলেট মন খারাপের দিনে যেভাবে কাজ করে ঠিক একইভাবে কাজ করে হাঁটার অভ্যাসও। তফাত শুধু এটি আপনার কোনো ক্যালোরি বৃদ্ধি করে না। চাইলে সবুজ প্রকৃতির মধ্যেও হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। গবেষণা বলছে, প্রতিদিন হাঁটলে তা স্নায়ু প্রক্রিয়া ঠিক রাখে, যা আপনার রাগ এবং আক্রমণাত্মক আচরণকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। শীতকালে রোদে হাঁটা মনের জন্য আরো ভালো যা আপনাকে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি দেয়। সর্বোপরি হাঁটতে বের হলে আপনি আশেপাশের মানুষের সাথেও দেখা, সাক্ষাৎ ও গল্প করতে পারেন; যা মনের জন্য অনেক ভালো।
ক্যালোরি ঝরায় ও ওজন কমায়
গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস চর্বি কমাতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ, ইনসুলিনের সঙ্গে শরীর সমন্বয় ভালো থাকে। নিউইয়র্কের একজন প্রশিক্ষক এরিয়েল আইসেভোলি বলেন, ‘প্রতিদিন হাঁটলে অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ানোর মাধ্যমে পেশীর ক্ষতি রোধ হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, যা আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’ হাঁটার সবথেকে ভালো দিক হলো, এর জন্য আলাদা করে কিছু করতে হয় না। চাইলে অফিস, স্কুল, কলেজে হেঁটে যাওয়া দিয়েই এটি শুরু করতে পারেন।
দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন-এর মতে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সামগ্রিক ঝুঁকি কমাতে হাঁটা উপকারী। কিছু গবেষণা বলছে, প্রতি ১,০০০ স্টেপ হেঁটে আপনার সিস্টোলিক রক্তচাপ .৪৫ পয়েন্ট কমিয়ে আনা সম্ভব। দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত হাঁটেন না তাদের তুলনায় যারা পর্যাপ্ত হাঁটা-চলা করেন তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩০% কম। তাই রোগ প্রতিরোধের জন্য হাঁটা ভালো।
জীবনীশক্তি বাড়ায়
হাঁটা-চলা আপনার জীবনীশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। কারণ এটিরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা প্রতি সপ্তাহে মাত্র ১০ থেকে ৫৯ মিনিট হাঁটাহাঁটি করেন, অলস ব্যক্তিদের তুলনায় তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ১৮% কম। এর মাধ্যমে হার্টও ভালো থাকে।
মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করে
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে তিনবার এক ঘণ্টা দ্রুত হাঁটেন তাদের মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যারা শিক্ষা সেমিনারে অংশ নেয় তাদের তুলনায় ভালো। অন্যান্য গবেষণা দেখায় যে শারীরিক ব্যায়াম, যেমন হাঁটা, বয়স্ক নারীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, নিয়মিত হাঁটার ফলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। তাই যখন হাঁটা-চলা করবেন, তখন আপনার মস্তিষ্কও ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করবে।