তাইওয়ানের চারপাশে যুক্তরাষ্ট্র ‘আগুন নিয়ে খেলা’ করছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে নিজের ভাষণে এই মন্তব্য করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
অন্যদিকে চীন বলেছে, তারা গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত দ্বীপটিকে ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন’ করার জন্য চাপ দেবে এবং যেকোনো বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরদার পদক্ষেপ নেবে। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিভিন্ন সময়ই এ বিষয়ে বেশ কড়া বক্তব্য দিয়েছে। তবে গত আগস্টে মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর সেই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
এমনকি চীন তাইওয়ানে হামলা চালালে মার্কিন বাহিনী ভূখণ্ডটিকে রক্ষা করবে বলে গত সপ্তাহে হুংকার দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর এরপরই জাতিসংঘে চীনের পক্ষ নিয়ে ওয়াশিংটনকে আগুন নিয়ে খেলার বিষয়ে অভিযুক্ত করলেন ল্যাভরভ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য বেইজিং সফর করেছিলেন। তবে ঠিক সেই সময়ই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ট্যাংকগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে জড়ো হচ্ছিল। উভয় নেতা সেসময় তাদের অংশীদারিত্বে ‘কোনো সীমা’ না রাখার ব্যাপারে সম্মত হন।
রয়টার্স বলছে, পুতিনের শীর্ষ কূটনীতিক সের্গেই ল্যাভরভ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার শনিবারের ভাষণে তাইওয়ান নিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থানের পাশাপাশি ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোকে লক্ষ্য করেও কথা বলেন তিনি বলেন, ‘তারা (ওয়াশিংটন) তাইওয়ানের চারপাশে আগুন নিয়ে খেলছে। তার ওপরে তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।’ অবশ্য তাইওয়ানের ব্যাপারে পুতিন স্পষ্টভাবে চীনকে সমর্থন করেছেন। পুতিন গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ‘আমরা ‘এক চীন’ নীতিকে দৃঢ়ভাবে মেনে চলতে চাই। আমরা তাইওয়ান প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্র এবং সেখানে তাদের উস্কানির নিন্দা জানাই।’
এদিকে ল্যাভরভের কিছুক্ষণ আগে জাতিসংঘে বক্তৃতা দেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। সেখানে তিনি বলেন, বেইজিং তাইওয়ানের সাথে ‘শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলনের’ জন্য কাজ চালিয়ে যাবে এবং তাইওয়ানের স্বাধীনতার জন্য ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ’ মোকাবিলা করবে। একইসঙ্গে যেকোনো বাহ্যিক হস্তক্ষেপ রুখে দিতেও জোরদার পদক্ষেপ নেবে বেইজিং। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শুধুমাত্র দৃঢ়ভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা রোধ করে আমরা (তাইওয়ানের) শান্তিপূর্ণ পুনঃএকত্রীকরণের জন্য একটি সত্যিকারের ভিত্তি তৈরি করতে পারি। যখন চীন সম্পূর্ণরূপে পুনরায় একত্রিত হবে, তখনই কেবল তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।’
নিউইয়র্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সাথে ৯০ মিনিটের বৈঠকের একদিন পর চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব মন্তব্য করলেন। গত আগস্টে পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর এটিই ছিল তাদের প্রথম আলোচনা। রয়টার্স বলছে, বৈঠকের পরে তাইওয়ান ইস্যুতে ‘খুব ভুল, বিপজ্জনক সংকেত’ পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেছে চীন। বৈঠকে ব্লিংকেন ওয়াংকে বলেছেন, তাইওয়ানের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে। তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।