ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রিজার্ভ সৈন্যদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে যাদের সামরিক প্রশিক্ষণ আছে তাদের রিজার্ভ সৈন্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি রিজার্ভ তালিকায় সাবেক সৈন্যরাও রয়েছেন।
এরপরই রাশিয়ায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে এবং শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন জেনেশুনে তার নাগরিকদের মৃত্যুর মুখে পাঠাচ্ছেন। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দেওয়া এক ভাষণে একথা বলেন জেলেনস্কি। রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় রাশিয়ানদের উদ্দেশে রুশ ভাষায় বক্তব্য দেন জেলেনস্কি। সেখানে রাশিয়ানদের সতর্ক করে তিনি বলেন, তাদের প্রেসিডেন্ট জেনেশুনে ‘রুশ নাগরিকদের মৃত্যুর জন্য (ইউক্রেনে) পাঠাচ্ছেন’। বক্তব্যে মস্কোর বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন: ‘আপনাদের সঙ্গে সভ্য আচরণ করা হবে… আপনাদের আত্মসমর্পণের পরিস্থিতি কেউ জানবে না’।
এদিকে শনিবার মস্কো নতুন একটি আইন করেছে। ওই আইনে সেনাবাহিনীতে একবার নাম লেখানোর পর পালিয়ে গেলে বা দায়িত্ব পালন না করলে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। মূলত শনিবার একটি ডিক্রি জারি করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো সৈন্য যদি আত্মসমর্পণ করে, সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যায় অথবা যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তার ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ নিয়ে রাশিয়ায় কঠোর আইন প্রণয়ন এবং সেটি পাসের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জেলেনস্কির এই মন্তব্য সামনে এলো। শনিবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট আরও বলেন: ‘বিদেশে যুদ্ধাপরাধী হয়ে মারা যাওয়ার চেয়ে নিয়োগপত্র প্রত্যাখ্যান করা ভালো।’ জেলেনস্কির ভাষায়, ‘পঙ্গু হওয়া এবং আগ্রাসনের যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আদালতে অভিযুক্ত হওয়ার চেয়ে অপরাধমূলক সমাবেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া ভালো। আমাদের অস্ত্রের হামলায় নিহত হওয়ার চেয়ে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করা ভালো। এই যুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ন্যায্য হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেন।’
রিজার্ভ সৈন্য তলবের বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের ওই ঘোষণার পর থেকেই রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাশিয়ার আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা নিষিদ্ধ। এরপরও রাশিয়ার শহরগুলোজুড়ে বড় আকারের বিক্ষোভ চলছে। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কারণে এক হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অন্যদিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এড়াতে হাজার হাজার তরুণ দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জর্জিয়া ও ফিনল্যান্ড সীমান্তে দেশত্যাগের জন্য দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মী, ব্যাংকার আর গণমাধ্যমকর্মীদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল দিমিত্রি বুলগাকোভকে সরিয়ে রাশিয়ার সরবরাহ ব্যবস্থা তদারকির নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কর্নেল জেনারেল মিখাইল মিযিনস্তভকে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত এই জেনারেল মারিউপোলে রাশিয়ান বাহিনীর নিষ্ঠুর অবরোধ পরিচালনা করেছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সরবরাহ ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল বুলগাকোভ। ২০১৫ সালে সিরিয়ায় রাশিয়ার সৈন্যবাহিনী মোতায়েন করার পর থেকে তিনি সেখানে রসদ সরবরাহ ব্যবস্থা তদারকি করতেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মস্কোয় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর যে সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাপক বিপর্যয় ঘটেছে, সেজন্য অনেকে তাকে দায়ী করেন। অবশ্য পাল্টা হামলা চালিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে অনেক ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী।