আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি কিয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করব, সুতরাং কারো প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না, কোনো কাজ যদি তিল পরিমাণ ওজনের হয় তবু আমি তা উপস্থিত করব, হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আমিই যথেষ্ট। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৪৭)
তাফসির (পর্ব-১) : কিয়ামতের দিন মানুষের কাজ পরিমাপের জন্য ‘মিজান’ তথা দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। কোরআন-হাদিসে আমল পরিমাপের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘মিজান’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো, দাঁড়িপাল্লা বা বস্তুর ভার পরিমাপের জন্য যা দিয়ে ওজন করা হয়।
পরিভাষায় ‘মিজান’ হলো একটি বাস্তবিক দাঁড়িপাল্লা, যা মহান আল্লাহ সৃষ্টিজগতের ভালো-মন্দ আমল পরিমাপের জন্য কিয়ামতের দিন স্থাপন করবেন। আমল পরিমাপে কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণও অবিচার করা হবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অণু পরিমাণও জুলুম করেন না, আর কোনো ভালো কাজ থাকলে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ করেন এবং আল্লাহ তার কাছ থেকে মহা পুরস্কার প্রদান করেন। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪০)
সুফিয়ান বিন উয়াইনা (রহ.) বলেছেন, ‘১০টি বিষয় সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। যে এসব বিষয় গ্রহণ করবে সে সুন্নাহকে ধারণ করল বলে মনে করা হবে। আর যে এর কোনো একটি ত্যাগ করবে সে যেন সুন্নাহকে বর্জন করল। তা হলো—তাকদিরে বিশ্বাস করা, আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.)-কে প্রাধান্য দেওয়া, কিয়ামতের দিনের হাউজে কাউসার, সুপারিশ, মিজান বা দাঁড়িপাল্লা ও পুলসিরাতে বিশ্বাস করা, ঈমান হলো কথা ও কাজের সমষ্টি, কোরআন আল্লাহর কালাম, কবরের আজাব, কিয়ামতের দিনের পুনরুত্থান ও মুসলিমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দেওয়া। (শরহু উসুলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ, পৃষ্ঠা : ১৭৫)
মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন। এ জন্য অতি ক্ষুদ্র কাজের হিসাবও তিনি গ্রহণ করবেন। ভালো ও মন্দ কাজগুলো দাঁড়িপাল্লার দুই পাশে রাখা হবে। এরপর যার ভালো কাজ ভারী হবে সে সফলকাম হবে এবং যার মন্দ কাজ ভারী হবে সে জাহান্নামে যাবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে তখন (ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে) পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজখবর নেবে না। যার (ভালো কাজের) দাঁড়িপাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে। এবং যাদের (ভালো কাজের) দাঁড়িপাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। ’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১০১-১০২)
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, অনেক আলেমের মতে আমল পরিমাপের জন্য একটি দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। যেমন আলোচ্য সুরা আম্বিয়ার ৪৭ নং আয়াতে ‘মিজান’ শব্দের বহুবচন ‘মাওয়াজিন’ তথা একাধিক দাঁড়িপাল্লার কথা বলা হয়েছে। অবশ্য কারো কারো মতে, একটি আমল পরিমাপের দাঁড়িপাল্লা একটি হবে। যেহেতু দাঁড়িপাল্লায় কাজকর্ম, কথাবার্তা, নথিপত্র, ব্যক্তিসহ নানা জিনিস ওজন করা হবে তাই উল্লিখিত আয়াতে বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে। হাদিসে এসেছে, সালমান আল-ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। তা এতই বিস্তৃত যে তাতে আকাশ ও ভূপৃষ্ঠ ওজন করা যাবে। ফেরেশতারা বলবে, হে আমাদের রব, এটা দিয়ে কাদের ওজন করা হবে? আল্লাহ বলবেন, আমার সৃষ্টিজগতের যাদের ইচ্ছা। তারা বলবে, আমরা আপনার যথার্থ ইবাদত করতে পারিনি। অতঃপর ক্ষুরের মতো তীক্ষ পুলসিরাত স্থাপন করা হবে। ফেরেশতারা বলবে, এটা দিয়ে কাদের পার করাবেন? তিনি বলবেন, আমার সৃষ্টিজগতের যাদের ইচ্ছা তাদের। তারা বলবে, আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমরা আপনার যথার্থ ইবাদত করতে পারিনি। ’ (মুসতাদরাকে হাকিম, আল-সিলসিলা আস-সহিহাহ, হাদিস : ৯৪১)