ইসলামে উপদেশ, সদুপদেশের গুরুত্ব অপরিসীম। কোরআন-হাদিসে মুসলিম উম্মাহকে সদুপদেশের বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা লোকদেরকে ন্যায়ের পথ অবলম্বন করতে বল; কিন্তু নিজেদের কথা ভুলে যাও। অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন করতে থাক। তোমরা কি বিচার-বুদ্ধিকে কোনো কাজেই লাগাও না?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৪)
পবিত্র কোরআনে নুহ (আ.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আমি তোমাদের কাছে আমার প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছাই এবং তোমাদের সদুপদেশ দিই। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৬২)
উপদেশ দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে পছন্দনীয় কাজে উদ্বুদ্ধ করা আর অপছন্দনীয় বিষয় থেকে বিরত রাখা। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা নিজের জন্য যা পছন্দ করো, তোমার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করো। ’ (আল জামিউ বাইনাস সাহিহাইন, হাদিস : ১৯১৪)
আবু রুকাইয়া তামিম বিন আউস আদ-দারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই নবী (সা.) বলেন, ‘দ্বিন হলো সদুপদেশ বা কল্যাণ কামনা। ’ আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কার জন্য?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলমানের নেতার জন্য এবং সর্বসাধারণ মুসলিমের জন্য। ” (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২০৫)। আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা ও সদুপদেশের প্রতি উৎসাহিত করেছেন।
অন্যকে ভালো কাজের আদেশদাতা নিজে তা পালন করা আবশ্যক। কারণ অন্যকে উপদেশ দিয়ে নিজে পালন না করলে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি রয়েছে। এ শাস্তি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-
ইবনে হারেসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’’ (বুখারি৩২৬৭, ৭০৯৮, মুসলিম ২৯৮৯, আহমদ ২১২৭৭, ২১২৮৭, ২১২৯৩, ২১৩১২)
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘ইসরার (মিরাজ) রাতে আমি এমন একশ্রেণির মানুষের কাছ দিয়ে গমন করলাম, যাদের জিহ্বাকে জাহান্নামের কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে। আমি জিবরাঈলকে (আ.) জিজ্ঞাসা করলাম, ওরা কারা? তিনি বললেন, এরা হলো তোমার উম্মতের দুনিয়াদার বক্তা। তারা যেসব ভালো কাজের আদেশ করতো, তা নিজেরা ভুলে বসতো, অথচ তারা কিতাব পাঠ করছে। তবুও কি তারা বুঝবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১২২১১)