বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন, ২৪ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদের বৃহত্তর ঐক্য যেন নষ্ট না হয়। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো ঐক্য ধরে রাখা।
গতকাল রবিবার (১৬ মার্চ) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ‘২৪ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ভূমিকা ও পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল-২০২৫ এ প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা যেন ভুলে না যাই, কিভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়। আমরা এমন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই না, যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার ছিল না, স্বাধীনভাবে রাজনীতি, মিছিল-মিটিং করা যেত না। আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত—আমরা যেন আর কখনো ফ্যাসিবাদী বা কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থায় ফিরে না যাই
মাহবুব মোর্শেদ আরো বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অনেকেই অনেক কিছু চায়। তাই বিভিন্ন জন নানান দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছে, রাজপথে নামছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে যারা কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করেছেন, তাদের মাঝেও এখন বিভাজন দেখা যাচ্ছে। এটি বাস্তব কারণ—একটি গণঅভ্যুত্থানের সময় সমাজের প্রত্যেকটি স্তরের মানুষ তাদের মতাদর্শ নিয়ে এতে যুক্ত হয়। কিন্তু যখন অভ্যুত্থান সফল হয়, তখন প্রত্যেকেই দেশ গঠনের বিষয়ে নিজস্ব মতামত দিতে শুরু করে। এটি স্বাভাবিক। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, এই দাবিগুলো জানাতে গিয়ে গণ-অভ্যুত্থানে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা যেন বিনষ্ট না হয়। ঐক্যের প্রধান শিক্ষা হলো—পারস্পরিক বিভেদ ও মতাদর্শগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, ২৪-এর জুলাই আন্দোলন থেকে আমরা একটি শিক্ষা পেয়েছি। তা হলো—মানুষ অনিয়ম, অন্যায়, দুর্নীতি সাময়িকভাবে মেনে নিতে বাধ্য হলেও কখনোই তা মন থেকে গ্রহণ করে না। এর ফলেই ২৪-এর আন্দোলনে সবাই রাজপথে নেমেছে এবং ফ্যাসিবাদকে বিদায় জানিয়েছে। আমাদের সবাইকে এই শিক্ষা নিতে হবে—ভবিষ্যতে যেন কেউ ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারা লালন না করে।
এ সময় তিনি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদের কাছে অনুরোধ করে বলেন, যারা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকতে চায় বা ভবিষ্যতে সাংবাদিকতা নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তারা যেন বাসস-এর প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভপতি সুবর্ণ আসসাইফ এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আহনাফ তাহমিদ ফাইয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস-এর সম্পাদক মাহবুব রনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি গণযুদ্ধ। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানেও সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন, এটাও একটি গণযুদ্ধ ছিল। এখানে খুব বেশি ক্রেডিট দেওয়া-নেওয়ার কিছু নেই। এটি সকলের, সবাই এতে ভূমিকা রেখেছেন। যদি কেউ এতে মনঃকষ্ট বা বেদনা পেয়ে থাকেন, তাহলে নতুন যে স্বপ্ন নিয়ে ২৪-এর বৈপ্লবিক গণঅভ্যুত্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা ব্যর্থ হয়ে যাবে। সাংবাদিকদের বলবো, কেউ মনঃকষ্ট নিয়ে থাকবেন না, সামনে এগিয়ে যান। ২৪-এর অভ্যুত্থানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ঘাটতিগুলো যদি দূর করা যায়, তাহলে এটি আরও মানসম্পন্ন হবে এবং মানুষের কথা আরও দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সাদেক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরমান হাসান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান উদ্দিন, সাবেক সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, কর্মকর্তাবৃন্দ, ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।