মোঃ আরিফুল ইসলাম মুরাদ
আপনারা আমাকে ভাতা দিবেন ?
পঞ্চাশ বছর চলে গেলো,
কই, কিছুই তো দেননি।
আমি তো ছেলে দিয়েছি,স্বামী দিয়েছি,আমার সম্ভ্রম তাও দিয়েছি,
আচ্ছা, ভাতা দিয়ে কী তার ক্ষতিপূরণ হবে?
পূর্ব-পাকিস্তানের প্রথম স্নাতকোত্তর নারী হয়েও ধর্ষিতা হওয়ায়
যুদ্ধের পর আমাকে একঘরে করা হয়েছিলো,
কোথায়,সেদিন তো কেউ প্রতিবাদ করতে আসেননি !
আজ আমাকে ভাতা দিবেন?
আপনাদের লোকদেখানো ভাতা আমার লাগবেনা-লাগবেনা।
আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছেন আপনারা ?
জানেন! আমি এখন বই লেখি,
ফেরিওয়ালার মতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই ফেরি করি,
আর একটা কুঁড়ে ঘরে বসবাস করি।
আমার প্রতিবেশী এখন কুকুর, বেড়াল,কাক আর হুতুমপ্যাঁচা।
আমার কথা বলার মতো কোনো সঙ্গী নেই,
পয়তাল্লিশ বছর আমি জুতো পরি না,
যে মাটিতে আমার ছেলেরা ঘুমায়-
জুতো পরে ওদের বুকের ওপর দিয়ে হাঁটবো কী করে ?
রৌদ্রতপ্ত পিচঢালা পথে বীরাঙ্গনা হয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছি খালি পায়ে।
নিজের চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু দেখেছি, স্বামীর দাফন দেখেছি, অভুক্ত মানুষের হাহাকার দেখেছি,
পাকিস্তানি দোসররা মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে,
নিজের চোখে তা-ও দেখেছি।
আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছেন আপনারা?
জানেন!
আমি এখনো ধর্ষিতা মেয়ের লাশ দেখে পিতার কান্না শুনি,
এখনো যৌতুকের দাবিতে টকটকে লাল বেনারসি আগুনে পুড়তে দেখি,
আমি এখনো সন্তানহারা মাকে দেখি,
স্বামীহারা নারীকে দেখি!
ভেবেছিলাম বই বিক্রির টাকায় একটা অনাথ আশ্রম বানাবো,
সে আশা আর পূর্ণ হলো কই !
আমি এখনো যুদ্ধ করি,খালি পায়ে হেঁটে বেড়াই,
কত আদব আলীর মা, জরিনা বেগমরা জুতো পরে না শতবছর।
ওদের যুদ্ধের কাছে বারবার হেরে যায় বাংলাদেশ!
সে হারায় দুঃখ নেই, আছে লজ্জা, আছে গর্ব,আছে বেঁচে থাকার প্রেরণা।
মাটিতেই তো পড়েছিলাম আজীবন,
এ’ মাটির কবরেও থাকতে অসুবিধে হবেনা আমার,
স্রষ্টা আমাদের মতো এতোটা নির্মম নন।
____________ মোঃ আরিফুল ইসলাম মুরাদ সাংবাদিক সভাপতি জাতীয় সাংবাদিক নিয়াতন প্রতিরোধ ফাউডেশন নেত্রকোণা।